জীবনদায়ী ওষুধের সঙ্কট
কাটছে না সিউড়ি হাসপাতালে

রকার নির্ধারিত সংস্থা থেকে সরবরাহ বন্ধ দীর্ঘদিন। বাইরে থেকে কিনে জোগান ঠিক রাখার চেষ্টাও থেমে গিয়েছে অডিট সংস্থার আপত্তিতে। ফলে স্যালাইন-সহ বহু জীবনদায়ী ওষুধের অমিলে বিপাকে পড়েছে বীরভূমের সিউড়ি সদর হাসপাতাল। সেখানে চিকিৎসাধীন অন্যান্য রোগীদের মতই বিপিএল তালিকাভুক্ত রোগীদেরও বাইরের ওষুধের দোকান থেকে চড়া দামে জীবনদায়ী ওষুধগুলি কিনতে হচ্ছে। জানা গিয়েছে, বর্তমান রাজ্য সরকারের একটি নতুন সিদ্ধান্তে শুধু মাত্র সিউড়িই নয়, এমন দশা রাজ্যের বহু হাসপাতালেরই।
কী সেই সিদ্ধান্ত?
একটি নির্দিষ্ট ওষুধ সংস্থা কেবল একটিই নির্দিষ্ট ওষুধ সরবরাহ করবে। রাজ্য সরকার তার থেকে অন্য কোনও ওষুধ কিনবে না। অথচ আগে ছিল, যে কোনও ওষুধ সংস্থার থেকে যেকোনও ওষুধ কেনা যেত। কোনও সংস্থা কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ সরবরাহ করতে না পারলে, রাজ্য সরকার সেই মুহূর্তে তা অন্য সংস্থা থেকে কিনে নিত। অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে, এই যুক্তিতে সেই পদ্ধতি বাতিল করে দেয় বর্তমান রাজ্য সরকার। নতুন সিদ্ধান্তে বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সংস্থার বাইরে অন্য সংস্থার থেকে ওষুধ কিনতে পারছে না হাসপাতালগুলি। ফলে দিনের পর দিন নির্দিষ্ট ওষুধ সংস্থার সরবরাহের অপেক্ষাতেই থাকতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। ওষুধ-সঙ্কটে পড়ছেন রোগীরা।
সিউড়ি হাসপাতালই মাঝে কয়েক মাস বাইরের ওষুধের দোকান থেকে চড়া দরে ওষুধ কিনে চিকিৎসাধীনদের ওষুধ সরবরাহ করতে শুরু করেছিল। কিন্তু ওই ব্যবস্থা নিয়ে আপত্তি তোলে অডিট সংস্থা। গত ৮ অগস্ট তারা সরকার নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বাইরের দোকান থেকে ওষুধ কেনা যাবে না বলে চিঠি দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। চাকরি খোওয়ার আশঙ্কায় তারপর থেকে এ ভাবে ওষুধ কেনা বন্ধ করেছেন বলে জানালেন হাসপাতাল সুপার মানবেন্দ্র ঘোষ।
ওই হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন সেখানে গড়ে ৬০০ বোতল স্যালাইন লাগে। একমাস আগে ২৪ হাজার স্যালাইন বোতল চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতরকে। চাওয়া হয়েছে যেকোনও ব্যথা উপশমকারী রেনিটিউট ইঞ্জেকশন ২০ হাজার, সাইক্রিয়াটিক রোগীদের জন্য ১০ হাজার পেনিডোরিয়াম সোডিয়াম ইঞ্জেকশন-সহ আরও অনেক জীবনদায়ী ওষুধও। সুপার বলেন, “সেখান থেকে এ বিষয়ে এখনও কোনও উত্তর আসেনি।” ফলে ওষুধের অমিলে নাজেহাল রোগী থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রোগীরা রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত বা অডিট সংস্থার আপত্তির কথা বোঝেন না। তাঁরা হাসপাতালে ওষুধ চান। ফলে ওষুধের অমিল বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যুক্তি মানতে চাইছেন না তাঁরা। শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হওয়া সিউড়ির বাখুড়িয়া গ্রামের শেখ আবু বক্কর, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া মহম্মদ বাজারের মালাডাঙা গ্রামের মমতা ঘোষ প্রমুখ রোগীদের বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের যাবতীয় ওষুধ হাসপাতাল থেকেই দেওয়া হবে। তবে এখন বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে কেন?”
রোগীদের ক্ষোভ যে দিন দিন বাড়ছে তা স্বীকার করে নিয়েও হাসপাতাল সুপার মানবেন্দ্রবাবু বলেছেন, “আমাদের হাত পা বাধা। বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনে জানানোও হয়েছে। দেখি কী নির্দেশ আসে।” হাসপাতালের ওই সঙ্কটের কথা জানেন না সিউড়ি সদর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা সাংসদ শতাব্দী রায়। তিনি সব শুনে বলেন, “আমি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।” অন্য দিকে, বীরভূমের ভারপ্রাপ্ত সিএমওএইচ অরুণলাল মণ্ডল বলেন, “নিয়ম মেনে সঠিক ওষুধ কিনলে অডিটরের আপত্তির কোনও কারণ নেই।”
‘নিয়ম মেনে’ সরকার নির্ধারিত মূল্যে কী ভাবে ওষুধ কিনবেন তা যদিও ভেবে পাচ্ছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারণ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ওষুধের দোকানগুলি চড়া দাম ছাড়া ওই সব জীবনদায়ী ওষুধ বিক্রিই করছে না। বাইরের দোকানের ওই সব ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করবে কে? উত্তর দিতে পারছেন না কেউই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.