মাটির মানুষ
আদিবাসী ভাষা রক্ষায় নিবেদিত মলিন্দ
চার-ছ পাতার পাক্ষিক ট্যাবলয়েড ‘সার সাগুন’। স্বামী-স্ত্রী মিলে এক দশকের উপর প্রকাশ করে চলেছেন মলিন্দ ও শমিলা হাঁসদা। দু’জনেই স্কুলশিক্ষক। প্রথমে শুরু করেন ‘দিশৗ’ (আদিবাসী উচ্চারণে ‘ৗ’ আকার) সাহিত্য পত্রিকা। তাই দিয়েই হাত পাকানো। ‘দিশৗ’ শব্দার্থ দিশা। সে সাহিত্য পত্রিকা বন্ধ হয়েছে। তার পরে, চরিত্র বদলে ট্যাবলয়েড ‘সার সাগুন’।
“ট্যাবলেয়ড করার সুবিধা হল প্রথমত এটা পাক্ষিক। অনেক জায়গায় পাওয়া যায়। বিভিন্ন অঞ্চলের সাঁওতাল ও আদিবাসী সমাজের খবর থাকে। যে খবর বা আমাদের সমাজের ওই খবর গুরুত্ব পায় না দৈনিক পত্রিকায় অথচ আমরা মনে করি এগুলি গুরুত্বপূর্ণ, তাই ছাপি। প্রতি সংখ্যায় থাকে আদিবাসী, এ ক্ষেত্রে সাঁওতালি ভাষায় বাংলা হরফে শব্দ ছক। এবং একটি ব্যাঙ্গ চিত্র।” বললেন মলিন্দ।
জানা গেল পত্রিকার চরিত্র। এটা সত্যি, আদিবাসী ও পড়শি সাঁওতালদের সংবাদের সামান্যই ঠাঁই পায় সংবাদপত্রগুলিতে। বিশেষ বড় ঘটনা ঘটলে অবশ্য আলাদা কথা। কিন্তু এই ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলি তো আদিবাসী সমাজের প্রিয়। তাদের মান-অভিমান, বঞ্চনা, একত্রিত হয়ে সম্মেলন, উৎসব, বরেণ্য সাঁওতাল ব্যক্তিত্বদের ওপর প্রবন্ধ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ সাঁওতালদের কাছে। আর এর সঙ্গে যে সত্যটি রয়েছে তা হল, বই আকারের পত্রিকা হলে সরকারি বিজ্ঞাপন আসে না। কিন্তু ট্যাবলয়েড কাগজ হলে আসে সরকারি বিজ্ঞাপন।
“পত্রিকা প্রকাশ করে আমাদের তো জীবিকা চলে না। নিজের সমাজ-সংস্কৃতির প্রতি দায় থেকেই এই কাজ। বরং আমাদের পকেট থেকে চাকরির উপার্জিত অর্থ ঢালতে হয়। আমরা জানি একটি আদিবাসী ছেলে বা মেয়েকে কত বাধা টপকে, কত বঞ্চনার মধ্যে পার হতে হয় পথ। তারই কণ্ঠস্বর কিছুটা ধরা থাকে।” বললেন মলিন্দ হাঁসদা।
জন্ম ছাতনা থানার ভেলানি গ্রামে। এখন বসত বাঁকুড়াই চম্পাকিয়ারিতে। রামানন্দ কলেজের পাঠ শেষে তিনটি জেলার স্কুলে চাকরি। বর্তমানে বাঁকুড়ার রতনপুর ছোটকূর্পা হাইস্কুলে। স্ত্রী শমিলা হাঁসদা বাঁকুড়ার শিবশঙ্কর বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। একাধিক সাহিত্য গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে মলিন্দের। সবই কবিতা-গল্পের। কিন্তু এখন ধ্যান-জ্ঞান সাঁওতালি প্রবন্ধ সঙ্কলন। এ ছাড়া আর একটি কাজও করছেন। ‘সাঁওতালি সাহিত্যে সমালোচনার ধারা’ নামে একটি গ্রন্থের কাজ শেষ পর্যায়ে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই প্রিয় ছোটদের লেখক উপেন্দ্রকিশোর। তাঁর শিশু সাহিত্য অনুবাদ করছেন সাঁওতালি ভাষায়।
এই মুহূর্তে আদিবাসীদের নানা সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নানাবিধ পুরস্কারও দেওয়া হচ্ছে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে। আদিবাসী লেখক শিল্পীরা পুরস্কৃতও হচ্ছেন। মলিন্দ নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি সেমিনারে অংশ নেন। গণসংযোগের প্রায় প্রতিটি মাধ্যমে অংশ নেন। পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর জন্ম শতবর্ষে প্রবন্ধ বিভাগে জেলা স্তরে পুরস্কৃত হয়েছেন। এ ছাড়াও রয়েছে একাধিক পুরস্কার।
“যেটা করতে পেরেছি তা হল ‘সার সাগুন’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে সাঁওতালি সংস্কৃতিকে বাঁচানোর চেষ্টা এবং আদিবাসী মানুষের যে কোনও সাহায্য, তা হাসপাতালে ভর্তি, কাউকে হস্টেলে রাখা, পড়াশুনায় সাহায্যএই কাজগুলো যথাসাধ্য করে থাকি। জানি, এই সাহায্য অন্য কেউ, ভিন্ন সমাজের কেউ করবেন না। সাঁওতাল সমাজকে প্রাথমিক সাহায্য উঠে আসা ওই সমাজের মানুষকেই করতে হবে।” বেশ জোরের সঙ্গেই কথাগুলি বললেন মলিন্দ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.