|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
ফেলে আসা সময়ের শিক্ষা-ব্যবস্থা |
জীবনধারাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রাখার সাথে সাথে সমাজের বুনিয়াদ এবং শান্তি-শৃংখলা-সংস্কৃতি-কৃষ্টির মধ্যে এক অবিচ্ছেদ্য সমন্বয় সাধন করে এর বুনটকে সৌকর্যময় ও সুসংহত করে বিবাহ।— এই বিশ্বাস থেকে সম্পাদকীয় লেখা হয়েছে এ বারের অপরাজিত-র (সম্পা: সমর ঘোষ অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়) ‘বিবাহ বিশেষ সংখ্যা’য়। যদিও সম্পাদকীয়তে স্বীকার করা হয়েছে— সংকলিত প্রবন্ধগুলি মোটের ওপর হিন্দু-বিবাহের আঙিনাতেই ঘোরাফেরা করেছে, তবু অস্বীকার করার উপায় নেই এর ব্যাপ্তি। বিয়ের ইতিহাস, উপকরণ, অঞ্চল-ভিত্তি, রীতি-পদ্ধতি, লোকজ উপাদান, ঘটক প্রসঙ্গ, বর-কনের সাজের পরিবর্তন। বিবাহ-বিচ্ছেদ আইন, আদিবাসী বিবাহ, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে গার্হস্থ্য জীবন, সমলিঙ্গ বিবাহ, ঠাকুরবাড়ির বিবাহ, গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজে বিবাহপ্রথা। এ রকম বৈচিত্রের পাশাপাশি রয়েছে বাংলা গ্রন্থ-পত্রপত্রিকায় বিবাহ বিষয়ক আলোচনার পঞ্জিও। পরিশিষ্টে রয়েছে সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘দাম্পত্য জীবন’। ‘আর ছিল ইন্টারন্যাশনাল। মোহিত ব্যানার্জির বাংলা তরজমা ‘জাগো জাগো জাগো সর্বহারা’, হরীনদার হিন্দি অনুবাদ ‘উঠো জাগো ভুখে বন্দি অব খেঁচো লাল তলওয়ার’, উর্দুতে ‘কেয়া খাক হ্যায় তেরি জিন্দেগানি উঠ এয় গরিব বেনোয়া’— হরীনদার কাছে শেখা বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের এই অনুবাদগুলি আমরা গাইতাম সভায়, স্ট্রিট কর্নারে, এমনকি দল বেঁধে উঠলে ট্রামে-বাসে-ট্রেনে। গাইতাম ৪৬ নম্বরে।’— জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের ‘আমাদের নবজীবনের গান’ আত্মপ্রকাশ-এর (সম্পা: সমরেন্দ্র দাস) ‘নস্টালজিয়া বিশেষ সংকলন’-এ। বেশ কয়েক জন কৃতী বাঙালির স্মৃতিচর্চায় মোড়া এ-সংকলনটির স্বাদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতাও মিলিয়ে নিতে পারবেন পাঠক। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় যেমন তাঁর ‘বলং বলং ফুটো বলং’-এ লিখছেন ‘সবুজ গ্যালারির কথায় ফিরে আসি। ময়দানের ঘেরা মাঠ ছিল ছোট, তাতে ফুটবল-পাগলদের তেমন আঁটত না। র্যামপার্টের খোলা দিকটায় তখন অগুনতি মাথা দেখা যেত। অনেকে পেরিসকোপ চোখে লাগিয়েও দেখত। সেই ভিড় ও উন্মাদনার জ্বরটা আমাদের তপ্ত করে রাখত।’
শিক্ষক মানেই প্রজ্জ্বালক, যিনি শিক্ষার্থীর চেতনায় জিজ্ঞাসার প্রদীপ জ্বালিয়ে দেন। গুরু-শিষ্যের এই পারস্পরিক সম্পর্ক প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। এই সূত্রেই কোরক-এর (সম্পা: তাপস ভৌমিক) প্রাক্ শারদ সংখ্যা ‘শিক্ষা-শিক্ষক-শিক্ষকতা’ নিয়ে। ‘এই সংখ্যায় আমরা ফেলে আসা সময়ের শিক্ষা-ব্যবস্থা, শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের কথা তুলে ধরতে চেয়েছি।... লেখাগুলি যদি এখনকার পাঠক-পাঠিকাদের মনে আত্মসমীক্ষা ও নাগরিক কর্তব্যবোধ জাগিয়ে তুলতে পারে, তবেই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস সার্থক হবে বলে মনে করি।’— জানিয়েছেন সম্পাদক।
কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্যের প্রথম রচনা ‘দূরাকাঙ্ক্ষের বৃথা ভ্রমণ’ বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম উপন্যাসেরও আগে লেখা। এটি এ বার প্রতিবিম্ব-এ (সম্পা: প্রশান্ত মাজী) পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। সঙ্গে জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর শতবর্ষ স্মরণ, উৎপলকুমার বসুর কবিতা, আর ভাস্কর চক্রবর্তী ও শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের অগ্রন্থিত লেখা।
নতুন একটি পত্রিকা বেরল আরশিনগর, শুরুতেই সম্পাদক স্বাতী গুহ জানিয়েছেন ‘‘আবারও একটা পত্রিকা আমাদের করতেই হবে বলে সারা দেশ জুড়ে কথা চালাচালি। কারণ কেউ মুম্বাই তো কেউ নয়ডায়, আর কেউ কোলকাতা থেকে কিছুটা দূরে পুরুলিয়ায়।... তবু শেষ পর্যন্ত ‘আরশিনগর’ আমাদের নতুন ইস্তাহার।” অমিতাভ গুপ্তের দীর্ঘ কবিতা, বিভিন্ন কবির কবিতাগুচ্ছ, এক গুচ্ছ গল্প, রবিশংকর বলের ‘সহস্রধারা’, আর প্রবন্ধাদির সঙ্গে ‘খোলা কথা’র একটি বিভাগ। তাতে কবি দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন ‘কবিতা লেখা কবিতা না লেখা’ নিয়ে, আর সদ্যপ্রয়াত মনোবিদ সৌগত বসু লিখেছেন তাঁর ‘আমার মায়ের শাড়ি’ নিয়ে: ‘ছোটোবেলায় দেখতাম মা’র আটপৌরে শাড়িগুলি ঝুলছে আলনায়। ভাল শাড়িগুলি থাকত কোথায় জানি না। আমার যখন বছর পাঁচেক বয়স, তখন বাড়িতে গোদরেজের স্টিলের আলমারি এলো। ছাই ছাই রঙের মস্ত বড়ো। মা’র নিজের চাকরির রোজগারের টাকায় কেনা। তখন আলমারির কত দাম ছিল জানি না, তবে যাই থাকুক না কেন আমাদের অস্বচ্ছল সংসারের পক্ষে আলমারি কেনা একটা বড় খবর।’
পরিকথা-র (সম্পা: দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়) একেবারে নতুন রকমের সংখ্যা ‘নিঃশব্দ পাহাড়’ নিয়ে, এই প্রথম প্রকাশ পাচ্ছে শুভদীপ বড়ুয়ার উপন্যাসটি। সঙ্গে পাঠ-প্রতিক্রিয়া অভিজিৎ মুখার্জি পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায় সুদেষ্ণা চক্রবর্তী গোপা দত্ত ভৌমিকের কলমে। আফগানিস্তান নিয়ে এই আশ্চর্য উপন্যাসটি শুরুই হয়েছে ভূগোল-ইতিহাসের বিবরণ দিয়ে। আখ্যানটির শুরু এ ভাবে: ‘মিসরি চাচা। মিসরি চাচা— আ আ।’ দুরন ধোবির ঘাটে ডাক ওঠে। নির্মেদ রেখার মতো দীর্ঘ এক বালক ঝালর তোলা পাইনের বনে ঘুরে ঘুরে ডাকছিল কারও নাম ধরে...।’ |
|
|
|
|
|