ওঝার ‘অত্যাচার’, ছাত্রীকে উদ্ধার করল প্রশাসন
গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে কবেকার অশ্বত্থ গাছ। সকাল থেকে তার নীচে ছড়ানো ভিড়টা ঘিরে আছে যাঁকে, প্রায় অচৈতন্য বছর কুড়ির সেই মেয়েটি জল, ফুল, হলুদে ভিজে সপসপ করছে। কী হয়েছে? গ্রামবাসীরা ফিসফিস করে বলছেন, “সাপে কেটেছে না! মনসা পুজো করে বিষ ঝেড়ে দিচ্ছেন ওঝা।”
শুক্রবার সকাল থেকে রানিনগর কলেজের পড়ুয়া পলি সর্দারের উপরে কখনও জল কখনও বা দীর্ঘ বাঁশের কঞ্চি খুঁচিয়ে এ ভাবেই চলল ঝাড়ফুঁক। মাঝে মধ্যে কোনও গাছ-গাছরার শেকড় বেঁটে মাথায় ঘষে দেওয়া হল দাওয়ায়ই। আর নিরন্তর মনসা-গান। ‘সাপে কেটেছে’, এমনই অনুমানে ওঝার ভরসায় মেয়েকে ছেড়ে দিয়ে বেশ নিশ্চিন্ত ছিলেন ওই কলেজ ছাত্রীর বাবা-মা। ঝাঁঝাল সুরে তাঁরা বলছেন, “সাপে কাটলে ওঝা ছাড়া কে সারাবে শুনি!”
ঝাড়া ঘণ্টা দেড়েকের ‘চিকিৎসার’ পরে ক্রমেই যখন নেতিয়ে পড়েছে মেয়েটি তখনই ধুলে উড়িয়ে গ্রামে ঢোকে প্রশাসনিক কর্তারা। সঙ্গে উর্দিধারী। বস্তুত ডোমকলের প্রত্যন্ত ওই গ্রামে জেলা-কর্তাদের পা পড়েনা বললেই চলে। ঝাড়ফুঁকের খবর পেয়ে গ্রামে গিয়েছিলেন এই প্রতিবেদক। তাঁর কাছেই এমন ‘সংস্কারাচ্ছন্ন’ ওই গ্রামের ঘটনা শুনে ছুটে এসেছিলেন স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তারা। চেতনাহীন মেয়েটি তখন খাবি খাচ্ছে প্রায়। জেলা কর্তাদের সঙ্গে এক গাড়িন পুলিশ দেখেই অবশ্য চম্পট দেয় ওঝাকুলের অনেকেই। তবে পুলিশ তার মধ্যেই দু-জনকে আটক করে। কিন্তু তাতেই বাধে বিপত্তি।
অসুস্থ পলি। ছবি: বিশ্বজিৎ রাউত।
জেলা কর্তারা ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চান শুনে সংস্কারে আচ্ছন্ন গ্রামবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁদের দাবি, ওঝার কাছে এসেই গ্রামের হাজার হাজার মানুষ সুস্থ হয়ে উঠছে। এখন প্রশাসনের লোকজন রোগী নিয়ে যেতে চাইলে হল? শেষতক জেলা কর্তাদের একরকম ‘মুচলেকা’ দিয়েই নিয়ে যেতে হয় ওই ছাত্রীকে। তাকে ভর্তি করা হয় ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে। চিকিৎসকদের অবশ্য অনুমান, ওই ছাত্রীকে আদৌ সাপে কামড়ায়নি। কোনও বিষাক্ত পোকার কামড়েই বিষিয়ে গিয়েছিল তার ক্ষতস্থান।
রানিনগর বাজার লাগোয়া পাড়ায় বাড়ি পলির। কয়েক পা দূরেই হাসপাতাল। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে পায়ে জ্বালা শুরু হলেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবেনইনি তার পরিবারের লোকজন। বরং রাতের দিকে সারা গায়ে ঝিমুনি ধরতে শুরু করলে তাঁরা তলব করেন ওঝাদের। তারপর, দু’দিন ধরে তার উপরে চলে ওঝার কেরামতি। পলির দাদা লাল্টু বলেন, “কিন্তু বোনের তেমন সানা পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন আমরা বড় ওঝার সন্ধান করি। ডোমকলের বাঘোয়াড়দিয়াড়ের ওঝা বিশ্বনাথের নাম-ডাক আছে। তাঁকেই ডেকে আনা হয়। তিনি কথা দিয়েছিলেন ঝাড়ফুঁক করে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বিষ ঝেড়ে দেবেন।” সেই মতো শুরু হয়েছিল ঝাড়ফুঁক।
ডোমকলের মহকুমাশাসক প্রশান্ত অধিকারী বলেন, “সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে খবর পেয়ে বিডিওকে দ্রুত ঘটনাস্থলে যেতে বলি। বিষয়টি রানিনগর থানার পুলিশকেও জানানো হয়। এর পরেই ওঝাদের হাত থেকে উদ্ধার করে ওই ছাত্রীকে ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তবে ভাবতেই ভয় লাগছে আর একটু দেরি করলে হয়তো মেয়েটি মারাই যেত।” মহকুমা পুলিশ অফিসার দেবর্ষি দত্ত-ও বলেন, “এখনও এমনটা হয় ভাবতেই অবাক লাগছে।”
বিস্মিত পলির কলেজ-অধ্যক্ষ বাসব ঘোষ। তিনি বলেন, “মুর্শিদাবাদে বিরাট একটা অংশের মানুষ এই কুসংস্কারকে আঁকড়ে বেঁছে থাকে। কুসংস্কার বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য কলেজে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। কিন্তু ওই আলোচনা সভায় ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি চোখে পড়ে না। ফলে আলোচনা করেও লাভ হয় না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.