|
|
|
|
সামিল পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা |
ব্লক স্তর থেকে আন্দোলন শুরু করছে সিপিএম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
নতুন সরকারের বয়স দেড় বছর পেরিয়েছে। রাজ্যে পালাবদলের পর ‘প্রতিকূল’ পরিস্থিতির জেরে এই সময়ের মধ্যে নিজেদের কার্যত গুটিয়েই রেখেছিল সিপিএম। বিশেষ করে আন্দোলনের অনুমতি চেয়ে পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের একাংশ দলের জেলা নেতৃত্বের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তবে অনুমতি মেলেনি। বদলে দলের থেকে নির্দেশ গিয়েছিল, ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র সংগ্রামে ধৈর্য ধরতে হবে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও তড়িঘড়ি কিছু করা যাবে না। তবে পরিস্থিতি দেখে সেই আন্দোলনেই ‘সিলমোহর’ দিচ্ছে সিপিএম। এ বার বিভিন্ন দাবিতে বিডিও অফিসের সামনে বিক্ষোভ-সভা করতেও দেখা যাবে পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের।
দলের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের বক্তব্য, “নানা কারণে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সর্বত্র না হলেও জেলার অনেক জায়গায় দলীয় কর্মীরা যেতে পারছেন। স্থানীয় মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছেন। বার্ধক্য ভাতার টাকা কেন মিলছে না, ইন্দিরা আবাস যোজনার ঘর কেন তৈরি হচ্ছে না, একশো দিনের কাজ প্রকল্পের মজুরি কেন বাকি থাকছে, এই সব দাবিতে ব্লক স্তরে আন্দোলন হতেই পারে। নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরাও সেই আন্দোলনে থাকবেন।” দলীয় সূত্রে খবর, ২৭ সেপ্টেম্বর দলের নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের নিয়ে কলকাতায় এক কর্মসূচি হবে। বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিধিরা আসবেন। রাজ্য সরকার যে ভাবে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা ‘খর্বে’র চেষ্টা করছে, তার প্রতিবাদেই ওই কর্মসূচি। পরে ব্লক স্তরে আন্দোলন হবে। তবে এই মুহূর্তে পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের মেদিনীপুরে এনে কর্মসূচির পরিকল্পনা নেই সিপিএমের। জেলা সম্পাদকের কথায়, “ব্লক স্তরেই আন্দোলন হবে। জেলা স্তরে এখনই কিছু হবে না।”
সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। পরিস্থিতি দেখে ব্লক স্তরে এমন আন্দোলনে ‘সিলমোহর’ দেওয়া কী ওই নির্বাচনেরই প্রস্তুতি? দীপকবাবুর মন্তব্য, “এখন পঞ্চায়েত ভোট কোথায়? সে তো দেরি আছে। এ নিয়ে এখনই কিছু বলব না। আরও একটু সময় লাগবে।” তবে সিপিএমের এক জেলা নেতা মানছেন, “এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচন আরও বেশি চ্যালেঞ্জের। তাই বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে একটু আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করার চেষ্টা চলছে।” সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব ব্লক স্তরে আন্দোলনের ‘সিলমোহর’ তখনই দিলেন, যখন বেশ কিছু এলাকায় পঞ্চায়েত সমিতির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ব্লক প্রশাসনের একটা ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। দু’পক্ষের সমন্বয়ের অভাবে বেশ কিছু কাজ পড়ে থাকছে বলেও অভিযোগ। বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দলের অন্য এক জেলা নেতা বলেন, “দেড় বছর সময়টা তো কম নয়। আমরা এত দিন পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছিলাম। এই সময়ের মধ্যে মানুষের কাছে সে ভাবে পৌঁছনোও হয়নি। সেই পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে আক্রমণ ও চক্রান্ত মোকাবিলায় সব স্তরের কর্মী- সমর্থকেরা ধৈর্য দেখিয়েছেন। এ বার সতর্ক থেকে তৎপরতা বাড়ানো জরুরি।”
বৃহস্পতিবারই জেলার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের নিয়ে এক বৈঠক করেছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য। বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে তোগ দেগেছেন। জেলার ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬৯টি বাদ দিয়ে বাকি সবই সিপিএমের। ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ৪টি বাদে ২৫টিই সিপিএমের। জেলা পরিষদও সিপিএমের দখলে। জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এই পরিস্থিতিতে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে এড়িয়ে কাজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সভাধিপতি বলেন, “সমন্বয়ের অভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। স্রেফ প্রাপকদের নামের তালিকা জমা দিতে না- পারার জন্য প্রকল্পের কাজ সময়ের মধ্যে করা যাচ্ছে না। মানুষকে আমরা কী জবাব দেব?”
এমন অভিযোগ তুলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি আসলে প্রশাসনকে ‘চাপে’ রাখার কৌশল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। |
|
|
|
|
|