পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত
বাঙুর
বাঘে-গরুতে এক পথে
শুধু পুর-পরিষেবা দেওয়াই নয়, এলাকার সৌন্দর্যায়নের কাজও করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই নির্দেশ মেনে সেজে উঠেছে দক্ষিণ দমদম পুরসভার বাঙুর। রাস্তা থেকে শুরু করে পার্ক, ফুটপাথ, এমনকী, রাস্তার ধারের ত্রিফলা আলোতেও সেই ভাবনারই ছোঁয়া। দক্ষিণ দমদম পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু বাঙুরই নয়, ধীরে ধীরে প্রতিটি ওয়ার্ডের পার্ক ও রাস্তা এ ভাবে সাজিয়ে তোলা হবে।
ভিআইপি রোড ধরে বাঙুর অ্যাভিনিউয়ে ঢুকলেই দেখা যাবে, ত্রিফলা আলোগুলি সেজে উঠেছে একটু অন্য রকম ভাবে। প্রতিটি ত্রিফলা আলোর বাতিস্তম্ভে লাগানো হয়েছে ফ্লেক্স। তাতে মনীষীদের এবং এ সময়কার কৃতী মানুষদের ছবি।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “এর ফলে এক দিকে যেমন সৌর্ন্দযায়ন হচ্ছে, তেমনই সাধারণ মানুষ, বিশেষত নতুন প্রজন্মকে মনীষীদের কথা মনে করিয়ে দেওয়া যাচ্ছে।” তাঁর দাবি, “আমরা এমন ভাবে ওয়ার্ডগুলো সাজাচ্ছি যে, মানুষকে তা বাঁচার রসদ যোগাবে।”
শুধু ত্রিফলা আলোই নয়, সেজে উঠেছে ফুটপাথও। ফুটপাথ সাজানোর ক্ষেত্রেও অন্য রকম ভাবনার পথে হেঁটেছেন এই কাউন্সিলর। পুরসভার তরফে জানানো হয়, ফুটপাথের ধারে রেলিং লাগানো হলে ফুটপাথ থেকে হঠাৎ প্রয়োজনে রাস্তায় আসা যায় না। এই সমস্যার কারণে অনেকে ফুটপাথ ব্যবহার করেন না।
রাস্তা ধরে হাঁটেন। অনেকে আবার রেলিং টপকে রাস্তায় নেমে আসেন। সে জন্য রেলিং না লাগিয়ে চার-পাঁচ ফুটের উচ্চতায় বসানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের কংক্রিটের মূর্তি। মূর্তিগুলির মাধ্যমে বিভিন্ন পেশার মানুষকে তুলে ধরা হয়েছে। রাস্তার মোড়ে মোড়েও বসানো হয়েছে ছোট ছোট মূর্তি।
কোথাও তা ফুচকাওয়ালা, কোথাও রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, কোথাও হরিণ, কোথাও আবার কচিকাঁচাদের প্রিয় চরিত্র ‘ছোটা ভীম’।
সৌন্দর্যায়নের এই উদ্যোগ কেমন লাগছে এলাকাবাসীর?
বাঙুরের বাসিন্দা অজন্তা বসু, দেবজ্যোতি ঘোষদের বক্তব্য, “মূর্তিগুলো প্রথমে যখন বসানো হয়েছিল, প্রথমে ভেবেছিলাম ফুটপাথে আর হাঁটার পথ থাকবে না। কিন্তু বসানোর পর দেখছি সেই সমস্যা নেই। বরং রাস্তার ধারে এ রকম মূর্তি বসানোয় রাস্তার সৌন্দর্য অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছে। আগে মূর্তি মানেই মহাপুরুষদের মূর্তি মনে হত। ফুচকাওয়ালা বা ছোটা ভীমের মূর্তি বসানো অভিনব পরিকল্পনা।” পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুর-তহবিল থেকেই এই সৌন্দর্যায়নের কাজ করা হচ্ছে।
তবে শুধু সৌন্দর্যায়নই নয়, পুরসভার দাবি, পরিষেবার ক্ষেত্রেও অনেকটাই সাফল্য এসেছে। গত দু’বছরে বাঙুরের প্রধান সমস্যা ছিল জল জমা। মৃগাঙ্কবাবু বলেন, “গত বছর পাঁচটা পাম্প লাগানোর পরে জল জমার সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্ত হয়েছে বাঙুর। গত বছর জল জমেনি বললেই চলে। শুধু বড় রাস্তাতেই নয়, আলো লাগানো হয়েছে অলিগলিতেও।”
দক্ষিণ দমদমের পুরপ্রধান অঞ্জনা রক্ষিত বলেন, “খুব ভাল উদ্যোগ। এই ভাবে প্রতিটি ওয়ার্ডই কাউন্সিলররা নিজেদের উদ্যোগে সাজিয়ে তুলছেন। রাস্তায় ত্রিফলা আলো ছাড়াও পার্কগুলিকে সাজানোর পরিকল্পনাও আছে।”


ছবি: দেবীপ্রসাদ সিংহ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.