সম্পাদকীয় ১...
সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য
রেন্দ্র মোদী আবারও একটি বিস্ফোরক মন্তব্য করিয়াছেন। তবে ইহা সাম্প্রদায়িক হানাহানি লইয়া নয়, আসন্ন নির্বাচনী যুদ্ধ লইয়াও নয়, তাঁহার বক্তব্য মেয়েদের স্বাস্থ্যচর্চা ও সৌন্দর্যচর্চার সংঘর্ষ লইয়া। মোদী বলিয়াছেন, অনেক কিশোরী মেয়ে যথাযথ পুষ্টিকর আহার খাইতে চায় না, কারণ তাহারা অতিশয় তন্বী হইয়া সুন্দর হইতে চায়। তাঁহার এই বক্তব্য সমালোচনার ঝড় তুলিয়াছে: যে দেশে ক্ষুধা এবং অপুষ্টি এত বেশি, সেখানে মেয়েদের সৌন্দর্যের কামনার উপর অস্বাস্থ্যের দায় চাপানো কি উচিত হইবে? বিশেষত মোদীর গুজরাত সম্পর্কে পুষ্টির বিষয়ে সরকারি গাফিলতির অভিযোগের যথেষ্ট সারবত্তা রহিয়াছে। এই রাজ্যটিতে আর্থিক উন্নয়ন অতি দ্রুত হারে ঘটিলেও, স্বাস্থ্য তাহার প্রভাব পড়ে নাই। তৃতীয় জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষায় প্রকাশ, গুজরাতে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি এখনও অত্যধিক। এই বিষয়ে তামিলনাড়ু কিংবা হিমাচল প্রদেশের মতো রাজ্যের থেকে অনেক পশ্চাতে রহিয়াছে মোদীর গুজরাত, যদিও সেই রাজ্যগুলির আর্থিক বৃদ্ধির হার গুজরাতের তুলনায় অনেক কম। প্রায় ৪৬ শতাংশ শিশু অপুষ্টি যে রাজ্যে পাওয়া গিয়াছে, সেখানে সুন্দর হইবার আকুল বাসনাকে তরুণীদের অপুষ্টির কারণ হিসাবে নির্দেশ করিবার মধ্যে রাজনৈতিক বিচক্ষণতার অভাব রহিয়াছে, সন্দেহ নাই। মোদী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তাই স্বাস্থ্যের বৃহত্তর চিত্রটি সম্মুখে রাখিয়া তিনি কথা বলিবেন, ইহাই প্রত্যাশিত। কিন্তু তাঁহার এই বিচ্যুতি সত্ত্বেও তাঁহার বক্তব্য সম্পূর্ণ উড়াইয়া দিবার মতো নহে। ভারতে অপুষ্টি অত্যন্ত ব্যাপক, তাহা কেবল মাত্র দরিদ্র পরিবারগুলির মধ্যেই আবদ্ধ নহে। বহু মধ্যবিত্ত, এমনকী উচ্চবিত্ত পরিবারেও দেখা যায় যে, মহিলা ও শিশুরা রক্তাল্পতা এবং অপুষ্টিতে ভুগিতেছে। ইহা খাদ্যাভ্যাসের সমস্যার জন্য, এবং মোদী সেই দিকেই ইঙ্গিত করিতেছিলেন। যাঁহারা ধর্মের কারণে আমিষ ভোজন করেন না, ওজন বাড়িবার ভয়ে দুগ্ধজাত প্রোটিনযুক্ত খাবার খাইতেও দ্বিধা করেন, তাহাদের মধ্যে অপুষ্টি হইবার সম্ভাবনা অতি উচ্চ। সুলভ খাদ্য প্রকল্প দিয়া এই সমস্যার সমাধান করা যাইবে না, শিক্ষা ও সংস্কৃতির পরিবর্তন প্রয়োজন।
মনে রাখিতে হইবে, সুন্দর হইবার প্রবৃত্তি মহিলা এবং পুরুষ উভয়ের মধ্যেই রহিয়াছে, এবং তাহা এতই তীব্র যে তাহার জন্য তাঁহারা নানা ধরনের ক্লেশ স্বীকার করিতে অসম্মত নহে। প্রাচীন কাল থেকেই দেখা গিয়াছে যে, দেহের বিভিন্ন স্থান ফুঁড়িয়া-চিরিয়া, কোনও দেহাঙ্গকে কৃত্রিম ভাবে ছোট কিংবা বড় করিয়া, নানা প্রকার কষ্টকর অলঙ্কার পরিয়া নিজেকে আকর্ষণীয় করিতে কোনও দেশের তরুণ-তরুণীরা দ্বিধা করেন না। সৌন্দর্যের সংজ্ঞা কী, কে সুন্দর বলিয়া অভিনন্দিত হইবেন, তাহার উপরেই এই ধরনের আচার-আচরণ নির্ভর করে। আধুনিক যুগে সৌন্দর্যের এই চাহিদা প্রেম-বিবাহ-যৌন জীবনের দাবি হইতে কর্মজীবনেরও দাবিতে দাঁড়াইয়াছে। বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বেশ কিছু পেশায় নির্দিষ্ট উচ্চতা কিংবা অবয়ব তাঁহাদের নিয়োগের অন্যতম শর্ত। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের করণীয় কী? সৌন্দর্যের আদর্শ যাহাতে সুস্বাস্থ্যের আদর্শের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহাই নিশ্চিত করিতে হইবে। পাশ্চাত্যের মতো, ভারতেও অতিরিক্ত কৃশ মহিলাদের ‘মডেল’ হিসাবে দেখানো বন্ধ করিতে হইবে। তৎসহ বিদ্যালয় এবং কলেজগুলিতে স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে তথ্য দান করিতে হইবে। যথাযথ পুষ্টি মানে যে শরীরের পরিমিত ওজন এবং মেধার উজ্জ্বলতা, তাহা স্পষ্ট করিতে পারিলে শখের উপবাস কমিবে, ইহাই প্রত্যাশিত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.