সম্পাদকীয় ১...
পুনরাগমনায়
তৃতীয় ফ্রন্টের ধারণাটি কি আবার জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হইতেছে? এ বার মুলায়ম সিংহ যাদবের হাত ধরিয়া? ধারণাটি কখনওই বরাবরের জন্য রাজনীতি হইতে পরিত্যক্ত হয় নাই। ইতিপূর্বে যত বারই এমন একটি ফ্রন্ট গঠনের সম্ভাবনা লইয়া নাড়াচাড়া হইয়াছে, তত বারই লোকসভার নির্বাচন সামনে ছিল। এ বার অন্তত দুই বছরের মধ্যে তেমন কোনও নির্বাচনের নির্ঘণ্ট নাই, তবে কেন্দ্রে ক্ষমতা দখলের জন্য অধৈর্য কিছু রাজনীতিক বিলক্ষণ রহিয়াছেন। তৃতীয় ফ্রন্টের ধারণাটি আদতে কংগ্রেস ও বিজেপি হইতে সমদূরত্ব রক্ষাকারী দলগুলির একজোট হইয়া কেন্দ্রে একটি বিকল্প সরকার গড়ার সম্ভাবনা লইয়া ভাবিত থাকে। তবে ইতিপূর্বে এইচ ডি দেবগৌড়া ও ইন্দ্রকুমার গুজরালকে প্রধানমন্ত্রী করিয়া এ ধরনের যে ক্ষণস্থায়ী সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হইয়াছে, তাহা বাহির হইতে কংগ্রেসের সমর্থনের উপরেই টিকিয়াছিল, কংগ্রেস সমর্থন প্রত্যাহার করিয়া লওয়ার সঙ্গে-সঙ্গেই তাসের ঘরের মতো তাহা ভাঙিয়া পড়ে।
অন্য দিক হইতে দেখিলে, তৃতীয় ফ্রন্টের ধারণাটি মূলত বামপন্থীদের একটি রণকৌশল, যাহা বিভিন্ন সময়ে নিজেরা ক্ষমতায় না থাকিয়াও ফ্রন্টের শরিকদের লইয়া কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করিতে সচেষ্ট থাকিয়াছে। লক্ষণীয়, এই ফ্রন্টের শরিকরা প্রায় সকলেই বিভিন্ন পর্যায়ে হয় বিজেপি নতুবা কংগ্রেসের সহিত ঘর করিয়াছে। তেলুগু দেশম, সংযুক্ত জনতা দল, বিএসপি, বিজু জনতা দল, ন্যাশনাল কনফারেন্স, ডিএমকে কিংবা এডিএমকে, এমনকী মুলায়ম সিংহের সমাজবাদী পার্টি কিংবা অজিত সিংহের লোকদলও নানা সময়ে রকমারি কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক শিবিরে নাম লিখাইয়াছে। এক্ষণে মুলায়ম সিংহের নেতৃত্বে যে-ফ্রন্টের ভাবনা রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জরিত, তাহাতে বামপন্থীরা এবং তেলুগু দেশম শামিল হইয়াছে। আপাতত অচল সংসদকে সচল করিতে তাঁহারা সংসদ ভণ্ডুল করার নিন্দা করিয়া কয়লা কেলেঙ্কারি লইয়া বিতর্ক চালাইবার আহ্বান জানাইয়াছেন। এই দাবি এবং বিচারপতিকে দিয়া কেলেঙ্কারির অভিযোগের তদন্ত করাইবার দাবিতে তাঁহারা লোকসভার চত্বরে ধর্নাও দিয়াছেন। আর তাহাতেই নানা জল্পনা শুরু হইয়াছে। বলা হইতেছে, কংগ্রেস-বান্ধব মুলায়ম বিজেপির ধারাবাহিক সংসদ-ভণ্ডুল এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবির অনমনীয়তা হইতে ইউপিএ-কে রক্ষা করিতেই তথাকথিত তৃতীয় ফ্রন্টের উদ্যোগ লইয়াছেন।
জল্পনাটি ঠিক কি না, তাহা এখনই নিশ্চিত করিয়া বলা কঠিন। তবে রাজনীতি যদি সম্ভাব্যতার শিল্প হয়, তবে পরিষদীয় গণতন্ত্রে সব ধরনের সম্ভাবনার দ্বার যেমন উন্মুক্ত থাক, তেমনই সব ধরনের রাজনৈতিক জোট গঠনও সম্ভব হয়। শুধু যে মায়াবতীর আক্রমণ হইতে আত্মরক্ষার জন্য মুলায়মেরই কংগ্রেসের ঢাল প্রয়োজন হইতে পারে, তাহা নয়, তেলেঙ্গানা আন্দোলনে গণভিত্তি হারানো বিপর্যস্ত তেলুগু দেশমেরও দরকার হইতে পারে কংগ্রেসের সাহচর্য। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতাপে পশ্চিমবঙ্গে কার্যত অস্তিত্বহীন হইয়া পড়া বামপন্থীদের তো ধর্মনিরপেক্ষ কংগ্রেসের প্রতি আকর্ষণ বরাবরের। তৃতীয় ফ্রন্ট শেষ পর্যন্ত গঠিত হইবে কি না, হইলেও মুলায়ম তাহাতে শরিক হইবেন কি না, সেটা সম্পূর্ণ জল্পনার স্তরে। কিন্তু আপাতত মুলায়ম যে তাঁহার বিবৃতি, ধর্না ও কৌশল দ্বারা ইউপিএ-কে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারিয়াছেন, তাহাতে সংশয় নাই। শুক্রবারেও অবশ্য বিজেপি সাংসদরা সংসদ অচলই রাখিয়াছেন। কিন্তু তাঁহারাও যে বাঘের পিঠে সওয়ার হইয়া বসিয়াছেন, আর নামিতে পারিতেছেন না, মুলায়মের প্রস্তাব শিরোধার্য করিলে সেটাও সহজে করা সম্ভব। সেই হিসাবে কেবল ইউপিএ নয়, এনডিএ-র কাছেও মুলায়মের কদর বাড়িতে পারে, বিশেষত শেষোক্ত জোটের অন্তত দুই শরিক সংযুক্ত জনতা ও অকালি দল যখন প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে সংসদ অচল করার বিরোধী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.