কর্মিসভা সেরে বাড়ি ফেরার পথে আক্রান্ত হয়ে নিহত হলেন গলসির পোতনা গ্রামের এক প্রবীণ কংগ্রেস নেতা। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতের এই ঘটনায় নিহতের নাম সত্যনারায়ণ কর্মকার (৭৫)। এই ঘটনায় জখম হয়েছেন সত্যনারায়ণবাবুর ছেলে রাজশেখর কর্মকার। তিনি গলসি থানায় ৩৫ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের অধিকাংশই মহিলা বলে খবর পেয়েছি। চার মহিলা-সহ মোট ৫ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেন এমন ঘটনা, তা এখনও জানা যায়নি।”
|
সত্যনারায়ণ কর্মকার।
—নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে কোনও রাজনৈতিক দলের নাম না বলা হলেও কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, এই ঘটনার পিছনে তৃণমূলের হাত রয়েছে। জেলা কংগ্রেস নেতা কাশীনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “ওই এলাকার তৃণমূল নেতা পার্থসারথি মণ্ডলের নেতৃত্বে সত্যনারায়ণবাবুর উপরে হামলা চালানো হয়েছে। অভিযুক্তদের তালিকায় তাঁর নামও রয়েছে।” জেলার তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “কে বা কারা এই ঘটনায় জড়িত, আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “যে কোনও খুনই দুঃখজনক। যদি আমাদের দলের কেউ এই ঘটনায় জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে যেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” রাজশেখরবাবু জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রামের বাউরিপাড়ার কালিতলায় কর্মিসভা ছিল। তিনি ও তাঁর বাবা সেখানে যোগ দিতে যান। তাঁর অভিযোগ, “বৈঠক সেরে বাড়ি ফেরার পথে তৃণমূল নেতা পার্থসারথী মণ্ডলের লোকজন রড, শাবল নিয়ে বাবার উপরে চড়াও হয়। তাঁকে পেটানো হচ্ছে দেখে আমি বাধা দিতে গেলে আমাকেও মারধর করা হয়। পুলিশ এসে আমাদের পুরষা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠায়।” পুলিশ জানায়, রাতেই জখম দু’জনকে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাত ১টা নাগাদ সেখানেই সত্যনারায়ণবাবুর মৃত্যু হয়।
গত পঞ্চায়েত ভোটে পোতনা-পুরষা পঞ্চায়েত জোট বেঁধে দখল করে কংগ্রেস ও তৃণমূল। মোট ১২টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস, তৃণমূল ও সিপিএম, প্রত্যেকেই চারটি করে পায়। কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, এ বার ওই পঞ্চায়েতে তৃণমূল একা লড়ার কথা ঘোষণা করার পরে তাঁরা গ্রামে গ্রামে প্রার্থী ঠিক করতে বৈঠক শুরু করেছেন। জেলা কংগ্রেস নেতা ইন্তেখাব আলমের দাবি, “আমাদের হয়ে কেউ যাতে ভোটে না দাঁড়ায়, সে জন্য তৃণমূল পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালাচ্ছে।” অভিযোগে ঘটনায় জড়িতেরা তৃণমূলের লোক বলে কেন উল্লেখ করা হল না, সে প্রশ্নে রাজশেখরবাবুর দাবি, “তৃণমূলের লোক লেখা হলে পুলিশ অভিযুক্তদের না-ও ধরতে পারে, এই আশঙ্কায় কোনও রাজনৈতিক দলের নাম লিখিনি।” পুলিশ সুপার জানান, এলাকায় টহল দেওয়া হচ্ছে। ধৃত পাঁচ জনকে শুক্রবার বর্ধমান সিজেএম আদালতে তোলা হলে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। জেলা কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, শনিবার পোতনা গ্রামে যাবে প্রদেশ কংগ্রেসের একটি দল। |