বাদুড়িয়ার গ্রামে অজানা রোগে এ পর্যন্ত লক্ষাধিক মুরগি মারা গিয়েছে। স্বরূপনগরেও মৃত্যু হয়েছে প্রচুর মুরগির। এর ফলে মুরগি চাষে জড়িত বহু মানুষের ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বুধবার বাদুড়িয়ার ২১টি ফার্মে যান প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের আধিকারিক গৌতম দেব। তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে আমার কাছে নথিভুক্ত ৪২টি ফার্মে গত কয়েকদিনে এক লক্ষের উপর মুরগির মৃত্যু হয়েছে। মৃত মুরগির রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ বলা যাচ্ছে না। তবে ফার্মগুলিতে স্প্রে করা হচ্ছে।” এই পরিস্থিতিতে কম দামে মৃত মুরগি দেদার বিক্রি হচ্ছে বাজারে। মরা মুরগি বরফ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শহরের বাজারে। মৃত মুরগি খাওয়া বিপজ্জনক জানিয়ে ব্লক ভেটেরেনারি সার্জেন দেবাশিস দত্ত বলেন, “কী রোগে মুরগি মারা যাচ্ছে তা এখনও নির্ণয় করা যায়নি। মৃত মুরগি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।” |
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাদুড়িয়ার বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ মুরগি ব্যবসার উপর নির্ভরশীল। এলাকায় দশ হাজারের উপর ফার্ম রয়েছে। অনেকেই ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে মুরগি চাষ করেন। কেউ আবার বিভিন্ন কোম্পানির দেওয়া মুরগি বড় করেন। দিন পনেরো আগে থেকে অজানা রোগে মুরগির মৃত্যু হচ্ছে। বুধবার প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের আধিকারিকেরা যদুরহাটি পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন গ্রামে থাকা ফার্মগুলিতে যান। চাষিদের সঙ্গে কথা বলেন। আধিকারিকেরা জানান, ২৫-৪০ দিনের মুরগি বেশি মারা যাচ্ছে। বাদুড়িয়ার কয়েকটি জায়গায় মুরগি চাষ করেন সমীর মণ্ডল। তিনি বলেন, “২০০৬ সালের বার্ড ফ্লু-তে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। অনেক কষ্ট করে জমি বন্ধক দিয়ে, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে এ বছর ব্যবসা শুরু করেছি। এরই মধ্যে ২৫ হাজার মুরগি মারা গিয়েছে।”
পূর্ব নাটুরিয়া গ্রামের মিজানুর রহমানের দাবি, তাঁর ফার্মের ৫ হাজার মুরগির মৃত্যু হয়েছে। লক্ষ্মীনাথপুরের বিলাসরঞ্জন সর্দার বলেন, “ব্যাঙ্ক থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে মুরগির ব্যবসা শুরু করেছিলাম। ইতিমধ্যে ১০ হাজার মুরগি মারা গিয়েছে। কী ভাবে ঋণ শোধ করব, সংসারই বা চালাব কী করে, বুঝতে পারছি না।” পান্তাপাড়ার বলাই পালের বক্তব্য, “এ বছর ৩০ হাজার মুরগি চাষ করেছিলাম। এ পর্যন্ত অর্ধেকের উপর মারা যাওয়ায় ৫ লক্ষ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।” তবে এ পর্যন্ত ফার্মের মুরগি মারা গেলেও বাড়ির মুরগির ক্ষেত্রে এমন রোগ দেখা দেয়নি বলে দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। |