রেস্তোরাঁর একটা কোণে আড্ডা বসেছে। কখনও চাপা স্বরে কথা হচ্ছে, কখনও আবার অট্টহাস্যে ফেটে পড়ছে। ভাষাটা বোধ হয় বাংলা। কেমন যেন ‘সন্দেহজনক’!
৯/১১-পরবর্তী নিউ ইয়র্কের ছবিটা এ রকমই। আর শহরটা যে ‘ভাষা-ভয়ে’ কাঁপছে, সে কথা বললেন নিউ ইয়র্ক পুলিশের কম্যান্ডিং অফিসার টমাস পি গালাটি স্বয়ং। তবে সন্দেহজনক ভাষার তালিকায় শুধু বাংলা নয়, রয়েছে উর্দু ও আরবিও। সন্ত্রাসদমনে এখন ভাষাগুলোর উপর বিশেষ নজর রাখা শুরু হয়েছে।
গালাটি বলেন, নিউ ইয়র্কে প্রায় ৮০ হাজার ঊর্দুভাষীর বাস। এঁরা হয় পাকিস্তানি, না হয় ভারতীয়। বাঙালি রয়েছেন ২০ থেকে ৩০ হাজার। শহরের কোনও রেস্তোরাঁ বা দোকানে ঊর্দু ও বাংলায় কথা বলতে শুনলেই, তাঁরা সেখানে আড়ি পাতছেন, বোঝার চেষ্টা করছেন ‘সন্দেহভাজনেরা’ কী বলছেন। খবর জোগাড় করতে মাঠে নেমেছে ৮ সদস্যের বিশেষ দল। ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার এশীয়র কথাবার্তা রেকর্ড করেছেন তাঁরা। এখন শুধু বাকি সেগুলির বিশ্লেষণ।
হঠাৎই কেন এমন পদক্ষেপ?
পুলিশের কিছু শীর্ষস্থানীয় অফিসার জানাচ্ছেন, ৯/১১-র ঘটনার তদন্তে তাঁরা দেখেছেন সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে ছ’জন প্যাটেরসনের বাসিন্দা। উল্লেখ্য, নিউ জার্সির ওই শহরটিতে বহু আরবি-ভাষীর বাস। এ ছাড়া নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন ধর্মস্থানে হানা দিয়েও তাঁরা সন্ত্রাসবাদী যোগসাজশের খবর পান। এ সবের ভিত্তিতেই গালাটিদের ‘ভাষা-অভিযান’। গালাটি বলেন, “লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে থাকতে ওই জায়গাগুলো জঙ্গিদের জন্য আদর্শ।” মূলত উর্র্দু নিয়েই কথা বললেও গালাটি পরে বাংলা প্রসঙ্গেও মুখ খোলেন। বলেন, “আশপাশে কাউকে বাংলায় কথা শুনলেই ভয় হয়, ভবিষ্যতে হয়তো আমিও এক দিন সন্ত্রাসবাদের শিকার হব। আর এখানে বসেই তার ছক কষা হচ্ছে।” সন্ত্রাস দমনে পুলিশের এই ভূমিকা অবশ্য মানতে পারছেন না আইনজীবী জেথ্রো আইনস্টাইন। তাঁর বক্তব্য, এ সবের অর্থ মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। সে যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে পুলিশ কমিশনার রেমন্ড কেলি বলেন, “ভয়ানক এক পৃথিবীতে বাস করছি আমরা। ক্ষতি করতে চায় এমন লোকের অভাব নেই।” তাই যা হচ্ছে, ভালর জন্যই হচ্ছে। |