বিকল ট্রান্সফর্মার। পাঁচ দিন থেকে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) কোচবিহার সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাসে বিদ্যুৎ পরিষেবা বিপর্যস্ত। সন্ধ্যার পরে গোটা টার্মিনাস এলাকা অন্ধকারে ডুবে থাকছে। স্তব্ধ কম্পিউটার পরিষেবা। পানীয় জল সরবরাহ। মোমের আলোয় কর্মীরা টিকিট বিক্রি সহ বিভিন্ন কাজ কোনও মতে চালিয়ে গেলেও অসহ্য গরমে নাকাল দশা হয়েছে তাঁদের। বাসে ওঠানামা করতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। ওই ঘটনায় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সমস্যার কথা জেনেও কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। যদিও এনবিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি মুরুগন বলেন, “পুরনো ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে যাওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত নতুন ট্রান্সফর্মার বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।” এনবিএসটিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ অগস্ট ট্রান্সফর্মারটি বিকল হয়। এর পর থেকে সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাসে বিদ্যুৎ পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। |
কম কিলোওয়াটের ট্রান্সফর্মার বসানো নিয়ে আধিকারিকদের মধ্যে বিতর্কের জেরে জটিলতার কারণে পাঁচ দিনেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। অভিযোগ, আধিকারিকদের একাংশ চাইছেন বিকল ট্রান্সফর্মার বিদ্যুৎ পর্ষদের হাতে তুলে দিয়ে বিকল্প ট্রান্সফর্মারের ব্যবস্থা করা হোক। তাঁরা ওই বিষয়ে একটি প্রস্তাব কর্তৃপক্ষকে দেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা খারিজ করে জানান, ট্রান্সফর্মার বিনিময় করা হবে না। বিদ্যুৎ পর্ষদ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সংস্থার এক কর্তা ওই জটিলতার কথা স্বীকার করে জানান, টার্মিনাস চালু করার সময় নিজস্ব খরচে চারশো কিলোওয়াটের ট্রান্সফর্মার বসানো হয়। ওই সময় টার্মিনাস থেকে প্রচুর বাস ছাড়ত। সেখানে বাস মেরামতের কাজ হত। ওই কাজের জন্য আলোর ব্যবস্থা করা ছাড়াও ট্রান্সফর্মার থেকে এলাকার বিভিন্ন স্টলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হত। বর্তমানে টার্মিনাসে বাস ও স্টলের সংখ্যা কম। বিদ্যুতের ব্যবহারও কমেছে। তাই চারশো কিলোওয়াটের বিকল ট্রান্সফর্মার মেরামত না করে ২৫ কিলোওয়াটের ট্রান্সফর্মার বসানোর কথা তাঁরা ভাবছেন। সংস্থার কর্তারা মনে করছেন এটা হলে খরচ কম হবে। কিন্তু আধিকারিকদের একাংশ ওই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। তাঁরা পুরনো বিকল ট্রান্সফর্মার বিদ্যুৎ দফতরের হাতে তুলে দিয়ে বিনিময়ে নতুন ট্রান্সফর্মার সংগ্রহ করার দাবি তুলেছেন। ট্রান্সফর্মার বসানো নিয়ে সংস্থার আধিকারিকদের ওই বিতর্কের ফাঁসে পড়ে পরিষেবা শিকেয় ওঠায় কর্মী ও যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের ভরসা হয়েছে হাত পাখা। পানীয় জলের জন্য তাঁদের হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। পুরসভা থেকে পানীয় জলের ট্যাঙ্ক থেকে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ। তবু বিকেলের আগে বাস ধরা গেলে ভাল। এর পরে অন্ধকারে বসে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। কিন্তু মালদহ, শিলিগুড়ি ও বহরমপুরের কিছু বাসের জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় যাত্রীদের মতো নাকাল দশা হয়েছে কর্মীদের। কম্পিউটার বিকল থাকায় অগ্রিম টিকিট বুকিংয়ের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। হাতে লিখে কাজ চালাতে হচ্ছে। ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ নিগমের পরিচালন বোর্ডের সদস্য আবদুল জলিল আহমেদ বলেন, “যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। দ্রুত পরিষেবা স্বাভাবিক করার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।” |