কোঝিকোড়ে যা করেছিলেন প্রবীণ নেতা অর্ধেন্দুভূষণ বর্ধন, বাঁকুড়ায় সেই পথেই হাঁটলেন বামফ্রন্টের শরিক দলের যুব নেতৃত্ব। কোঝিকোড়ে সাক্ষী ছিলেন প্রকাশ কারাট। বাঁকুড়ায় বিমান বসু।
সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়ে বাম ঐক্যকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা’ দেওয়ার জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি (মেকানিজম) তৈরির পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছিলেন সিপিআই নেতা বর্ধন। বাঁকুড়ায় সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্মেলনে আমন্ত্রিত বক্তা হিসাবে সিপিআই, আরএসপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের যুব নেতৃত্ব একযোগে সরব হলেন বাম যুব ঐক্যকে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত প্রসারিত করার জন্য। বাম ঐক্যকে শুধু দলীয় কার্যালয়ের বৈঠকের গণ্ডির বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘অহমিকা, উন্নাসিকতা’ পরিহার করার কথাও বললেন তাঁরা। মঞ্চে মঙ্গলবার তখন উপস্থিত সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবু এবং রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিম। পরে বিমানবাবুও যুব সম্মেলনে তাঁর বার্তায় মেনে নিলেন, বর্তমানের ‘কঠিন’ পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুব ফ্রন্টের ঐক্যকে নিচু তলায় নিয়ে যেতে উদ্যোগী হতেই হবে।
তবে বাম যুব নেতৃত্ব যখন ঐক্য প্রসারে মনোযোগ দেওয়ার কথা বলছেন, বিমানবাবুও তা মেনে নিচ্ছেন, সেই সময়েই নতুন করে ঝড় উঠেছে ‘ঝড়ের শীর্ষে’ নামে একটি পুস্তিকাকে ঘিরে। রাজ্যে যুব আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্কলন হিসাবে ডিওয়াইএফআইয়ের ওই পুস্তিকাটি এ বারের সম্মেলনেই প্রকাশ করেছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু সেখানে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির আমলের যুব সংগঠনকে যে ভাবে ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ বা ‘সুবিধাবাদী’ বলে দেখানো হয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধ সিপিআইয়ের যুব নেতৃত্ব। বাঁকুড়ায় যুব সম্মেলনের অবসরেই তাঁরা বিমানবাবু এবং ডিওয়াইএফআই নেতৃত্বের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। ওই মূল্যায়নের ‘সংশোধন’ না-হলে কাল, বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের কাছে বাম যুবদের সঙ্গে দরবার করতে তারা যেতে চায় না বলেও বলে বাম সূত্রের খবর। যোগাযোগ করা হলে এআইওয়াইএফের রাজ্য সম্পাদক গৌতম রায় এ দিন পরিষ্কারই বলেছেন, “ওই মূল্যায়নের সঙ্গে আমরা একমত নই। যেখানে যেখানে এই নিয়ে বলা দরকার, আমরা বলেছি।” কিছু দিন আগে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর মুখপত্রে এআইটিইউসি-র ইতিহাস সম্পর্কে কিছু মন্তব্য ঘিরেও বিতর্ক বেধেছিল।
সিপিএম বা তাদের কোনও গণসংগঠনের সম্মেলনে ‘সহমর্মিতা’ দেখাতে শরিক সংগঠনের নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানানোই রেওয়াজ। সেই আমন্ত্রণ স্বীকার করেই ডিওয়াইএফআইয়ের সম্মেলনে এ দিন সিপিআই, আরএসপি এবং ফ ব-র যুব সংগঠন এআইওয়াইএফ, আরওয়াইএফ এবং যুব লিগের তিন রাজ্য সম্পাদক গৌতম রায়, পুলক মৈত্র ও অনির্বাণ চৌধুরী যা বলেছেন, তার মর্মার্থ: বামপন্থী আন্দোলনকে আরও সংহত করার জন্য বাম যুব ঐক্যকে রাজ্য স্তর থেকে জেলা, ব্লক হয়ে পাড়ায় পাড়ায় নিয়ে যেতে হবে। দেশ ও রাজ্যের সরকার যে ভাবে চলছে, সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন যে ভাবে বাড়ছে, তাতে গরিব, সাধারণ মানুষের জীবন সঙ্কটে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ বাম আন্দোলনই পথ। শুধু দীনেশ মুজমদার ভবনে (ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য দফতর) মাঝে মাঝে বৈঠক করলেই চলবে না। নিচু তলার কথা ভাবতে হবে। যুব নেতারা বলেন, বামেদের একাংশের ‘ঔদ্ধত্য, অহমিকা’র জন্যই সাধারণ মানুষের বড় অংশ দূরে চলে গিয়েছেন। তাঁদের আস্থা ফেরাতে ঐক্যবদ্ধ ভাবেই এগোতে হবে।
প্রসঙ্গত, দু’দিন আগেই এসএফআইয়ের রাজ্য সম্মেলনেও আরএসপি-র ছাত্র সংগঠন পিএসইউ বার্তা পাঠিয়েছিল, যেন তেন প্রকারেণ ছাত্র সংসদ দখল করার মানসিকতা ত্যাগ করে, অতীতের ‘ভুল থেকে শিক্ষা’ নিয়ে এসএফআই ভবিষ্যতে এগোতে চাইবে বলেই তারা
আশা করে। যুব ফ্রন্টের শরিক নেতৃত্বের আরও বক্তব্য, সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলার দায়িত্ব বৃহত্তম যুব সংগঠন হিসাবে ডিওয়াইএফআইয়েরই সব চেয়ে বেশি। পরে বিমানবাবুও তাঁদের এই বক্তব্য মেনে নিয়ে সম্মেলনে বলেন, যেখানে সমস্যা হবে, বাম যুব নেতৃত্ব যেন ডিওয়াইএফআইয়ের সঙ্গে আলোচনা করেন। কয়েক দশক আগে বিমানবাবুদের উঠতি বয়সে উত্তাল ছাত্র-যুব আন্দোলনের জেরে বিশ্বব্যাঙ্কের তৎকালীন কর্তা রবার্ট ম্যাকনামারা কলকাতায় ঢুকতে বাধা পেয়েছিলেন। আগামী বছর কলকাতায় যুব উৎসবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে আমন্ত্রণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রেক্ষিতেই পুরনো সেই আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বিমানবাবু। |