সম্পাদকীয় ১...
অনাথের নাথ
বশেষে মনমোহন সিংহ কথা বলিলেন। এত দিন কেন বলেন নাই, তাহার উত্তর তিনি কবিতায় দিয়াছেন। সারমর্ম, তিনি সব প্রশ্নের উত্তর দিলে অনেক প্রশ্নের অযৌক্তিতাই প্রকট হইয়া উঠিত, অতএব তিনি চুপ করিয়া থাকাকেই শ্রেয় জ্ঞান করিয়াছিলেন। উচ্চমার্গের দর্শন, সন্দেহ নাই। কিন্তু, কয়লাখনির অংশবিশেষের বণ্টন বিষয়ে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল-এর (সিএজি) রিপোর্টে যে প্রশ্নগুলি উঠিয়াছিল, তাহার সম্যক উত্তর তাঁহার নিকট থাকা সত্ত্বেও তিনি এত দিন নীরব ছিলেন কেন, তাহা জানা গেল না। কিন্তু, তাঁহার নীরবতা প্রতি বার বিরোধীদের যে সুবিধাটি করিয়া দেয়, এই বারও তাহার অন্যথা হয় নাই। বস্তুত, যে রিপোর্টটি লইয়া বিজেপি সদল সংসদ ত্যাগ করিবার কথাও ভাবিয়া ফেলিল, সেই রিপোর্টটির অনধিকারচর্চার প্রসঙ্গটিও আলোচনার বাহিরেই থাকিয়া গেল। সিএজি ভারতীয় গণতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান সন্দেহ নাই, কিন্তু তাহার অধিকারের সীমা সংবিধানেই নির্দিষ্ট আছে। সরকারি আয়ব্যয়ের হিসাব রাখাই তাহার কাজ। কোনও রাষ্ট্রীয় সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে যদি এই হিসাবে গরমিল থাকে, তাহা দেখাইয়া দেওয়া সিএজি-র কর্তব্য। কিন্তু সরকার সম্পদ বণ্টনের জন্য কোন পন্থা অবলম্বন করিবে, সিএজি সেই আলোচনায় মাতিলে তাহা নিতান্ত অনধিকারচর্চা। গত কয়েক বৎসরে সিএজি এই কাজটি বেশ কয়েক বার করিয়াছে, যথা টুজি স্পেকট্রাম-এর লাইসেন্স বণ্টন। ক্ষুদ্র রাজনীতির আখের গোছাইতে ব্যস্ত বিরোধীরা এই অনধিকারচর্চাকে প্রশ্রয় দিয়াছেন।
বস্তুত, কয়লাখনির অংশ বণ্টনের প্রশ্নে সিএজি-র রিপোর্টে দুইটি আপত্তিকর বিষয় অতি স্পষ্ট। প্রথম কথা, সরকার কবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাভিত্তিক নিলামের ব্যবস্থা করিবে, তাহা বলিয়া দেওয়া সিএজি-র কাজ নহে। তাহা স্থির করা সরকারের কাজ, আর সরকারের সিদ্ধান্তটি যথার্থ কি না, তাহা বিশ্লেষণ করার জন্যই জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হইয়া সংসদে আছেন। দ্বিতীয় কথা, সিএজি যে ভঙ্গিতে আর্থিক ক্ষতির হিসাব কষিয়াছে, তাহার গোড়ায় গলদ (টু-জি স্পেকট্রামের সময়েও সিএজি একই ভুল করিয়াছিল)। কোল ইন্ডিয়া’র আয়ব্যয়ের হিসাবকে আলোচ্য কয়লাখনিগুলির ক্ষেত্রে বসাইয়া দেওয়ার মধ্যে পাটিগণিতসুলভ সারল্য আছে, বাস্তববোধ নাই। প্রধানমন্ত্রী তাঁহার বক্তব্যে প্রসঙ্গটি উল্লেখ করিয়াছেন। বিভিন্ন খনির ভৌগোলিক অবস্থান, ভূতাত্ত্বিক বিশেষত্ব পৃথক, ফলে কয়লা উত্তোলনের খরচও আলাদা। কোল ইন্ডিয়ার খনিগুলি সচরাসর সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থিত হওয়ায় তাহার উত্তোলন ব্যয় এই বিশেষ কয়লাখনির অংশ হইতে উত্তোলনের ব্যয় অপেক্ষা কম হওয়াই স্বাভাবিক। উল্লেখ্য, যে খনিগুলি বেসরকারি ক্ষেত্রে বণ্টন করা হইয়াছে, সেই খনির কয়লার ব্যবহার নির্দিষ্ট, তাহার আর কোনও বাজার নাই। ফলে, কোল ইন্ডিয়ার সহিত তুলনা অন্যায্য।
সিএজি লোকসানের যে অঙ্কে উপনীত হইয়াছে, তাহার যাথার্থ্য লইয়া বিস্তর প্রশ্ন সম্ভব। সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার বদলে সিএজি সরকারের নৈতিক অভিভাবক হইতে আগ্রহী। দেশের বিচারবিভাগের অতিসক্রিয়তা সম্বন্ধে যে কথাটি বলা হইয়া থাকে, সিএজি-র ক্ষেত্রে তাহা আরও বেশি প্রযোজ্য। এই পরিস্থিতির জন্য অবশ্য মনমোহন সিংহের সরকারই দায়ী। গত কয় বৎসরে প্রশাসন এমনই শ্লথ হইয়াছে, এমনই নীতিপঙ্গুত্বে ভুগিয়াছে যে বোধ হওয়া স্বাভাবিক, কেন্দ্রীয় সরকার বুঝি অনাথ! অনাথের নাথ হইতে অনেকেই আগ্রহী, সিএজি-ও। যত দুর্নীতির অভিযোগ উঠিয়াছে, সরকার ততই গুটাইয়া গিয়াছে। ফলে, দুর্নীতির যে কোনও অভিযোগই জনমানসে মান্যতা পাইতেছে। বিরোধীরা এই সুযোগই খোঁজেন। প্রধানমন্ত্রী যখন তাঁহার মৌন ভঙ্গ করিলেনই, ভবিষ্যতেও তিনিই সম্মুখসমরে নেতৃত্ব দিন। তাহাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনধিকারচর্চার অভ্যাস খানিক কমিতে পারে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.