একটি রাজ্য পর্যটনের ব্যবসা বাড়াতে গল্ফ-ট্যুরিজমকে তুলে ধরছে।
আর একটি রাজ্যের পর্যটন-পুঁজি বলতে এখনও সেই দুর্গাপুজো আর দার্জিলিং!
কর্নাটকের মতো রাজ্য অনুধাবন করেছে, পর্যটন ক্ষেত্রে ব্যবসা বাড়াতে গেলে উচ্চবিত্তদের আকর্ষণ করতেই হবে। যাঁরা ভাল থাকার জায়গা, চোখ জুড়োনো নিসর্গের সঙ্গে সঙ্গে চান গল্ফ খেলার মাঠও। যাঁরা সবান্ধব বেড়াতে বেরিয়ে বড় অঙ্কের টাকা খরচ করার ক্ষমতা রাখেন। এমন ভ্রমণার্থীদের টানতে হবে। কারণ, তাঁদের কাছ থেকেই পর্যটন ক্ষেত্রের অধিকাংশ মুনাফা আসতে পারে।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ কী করছে?
দেখে শেখারও বালাই নেই! এখনও ভিন্ রাজ্যে রোড শো-তে পশ্চিমবঙ্গের তরফে তুলে ধরা হচ্ছে সেই দুর্গাপুজো আর দার্জিলিংকে। কারণ, নতুন সরকারের এক বছর কেটে যাওয়ার পরেও, পর্যটন বিভাগের দুই সচিব বদল সত্ত্বেও পর্যটনের জন্য নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
মঙ্গলবার কলকাতায় এক পাঁচতারা হোটেলে কর্নাটক সরকারের পর্যটনমন্ত্রী আনন্দ সিংহ জানান, তাঁদের রাজ্যে ১৮টি গল্ফ কোর্স ঘিরে বিলাসবহুল হোটেল তৈরি হচ্ছে। চিকমাঙ্গালুরুর পাহাড়ের মাথায় গল্ফ মাঠ ঘিরেও তৈরি হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্র।
শুধু গল্ফ-ট্যুরিজম নয়, পর্যটক টানতে আরও তিনটি বিষয়ের উপরে জোর দিচ্ছে কর্নাটক সরকার। • জঙ্গল-পর্যটন। শুধু এই কারণেই কর্নাটকের বিভিন্ন জঙ্গলে ১৬টি রিসর্ট বানানো হয়েছে। • কর্নাটকের উপকূলবর্তী এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। ওই রাজ্যের পর্যটনসচিব লতাকৃষ্ণ রাওয়ের কথায়, “আমাদের রাজ্যে সমুদ্রতীরের ভাল ভাল জায়গাকে এত দিন ঠিক ভাবে ব্যবহার করা হয়নি।” তাই উপকূল পর্যটনে বিশেষ নজর দিচ্ছে কর্নাটক সরকার। • আয়ুর্বেদ, ইউনানির মতো প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিকে নতুন ভাবে তুলে ধরার আয়োজন চলছে। বিদেশিদের কাছে এই চিকিৎসার আকর্ষণ বাড়ছে।
কর্নাটকের মতো পশ্চিমবঙ্গেও জঙ্গল বা সমুদ্রসৈকতের অভাব নেই। কিন্তু সেগুলোকে আকর্ষক করে গড়ে তোলার কোনও প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়নি, যা দেখিয়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের টেনে আনা যায়। এই ব্যর্থতার আফসোস ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্যুর অপারেটরের পশ্চিমবঙ্গ শাখার চেয়ারম্যান শ্যামলাল সোনির গলাতেও। তিনি বলেন, “এটা অনস্বীকার্য যে, আগের সরকারের চেয়ে এই সরকার পর্যটনের ক্ষেত্রে বেশি সক্রিয়। কিন্তু মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত-সহ সব শ্রেণির পর্যটক টানতে যে-পরিকাঠামো দরকার, এ রাজ্য তা গড়ে তুলতে ব্যর্থ। আমরা ব্যবসা করি। আমাদের কাছে যা রয়েছে, যতটুকু রয়েছে, সেটুকুই বেচছি!”
পর্যটনে বাংলাকে টেনে তোলার চেষ্টায় যে খামতি নেই, সেটা বোঝাতে রাজ্য সরকার অবশ্য যথেষ্ট তৎপর। পর্যটনকে জনপ্রিয় করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও অন্য রাজ্যে ‘রোড শো’ শুরু করেছে বলে জানান। পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ। তিনি বলেন, “আমরা ২৯ জুলাই বেঙ্গালুরুতে রোড শো করেছি। ভাল সাড়া মিলেছে। পরে আমদাবাদেও আমাদের রোড শো হয়েছে।”
চলতি সপ্তাহে মুম্বইয়ে ট্যুর অপারেটরদের নিয়ে কনভেনশন হচ্ছে। সেখানেও যোগ নিচ্ছে রাজ্য। পর্যটন দফতর সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে গল্ফ-ট্যুরিজমের চেয়েও কলকাতায় ‘লন্ডন আই’-এর মতো প্রকল্পের উপরে জোর দিচ্ছে সরকার। তাই গঙ্গাতীরে জমির খোঁজ চলছে। নাগরদোলার মতো বিশাল যন্ত্র বসাতে আগ্রহ দেখিয়েছে অনেক সংস্থা। সেই নাগরদোলার কাচে ঢাকা ঘরে বসে উপর থেকে দেখা যাবে যমজ শহর কলকাতা-হাওড়ার ছবি। |