এক বার গ্রামের একটি মসজিদের ভিত খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল হাতির কঙ্কাল। বিভিন্ন অংশ নিয়ে গিয়ে নিজেদের বাড়িতে রেখে দিয়েছিলেন বাসিন্দারা। সেই থেকেই গ্রামটির নাম হাতিপোতা।
কালনার নান্দাই পঞ্চায়েতের ওই গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাতির দেহের বেশির ভাগ অংশই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পড়ে রয়েছে শুধু চোয়ালের অংশ দু’টি। গ্রামের এক বাসিন্দাদের বাড়িতে রাখা ওই অংশ দু’টিও নষ্ট হতে বসেছিল। গ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা চোয়ালের ওই দু’টি অংশ সংরক্ষণে এগিয়ে এলেন গ্রামবাসীরাই। কাচের একটি বাক্সে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে চোয়ালের অংশ দু’টি। বিশেষজ্ঞ একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই কাজটি করা হয়েছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। তাঁদের ইচ্ছা, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে গ্রামের নামের ইতিহাসকে তুলে ধরতে চোয়ালের অংশ দু’টি গ্রামেই সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এর জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির সাহায্যও দাবি করেছেন তাঁরা। |
গ্রামের ইতিহাস প্রসঙ্গে বাসিন্দাদের দাবি, বহু বছর আগে গ্রামটির নাম ছিল গোপেয়া। কিছু নথিপত্রেও তার প্রমাণ মিলেছে। গ্রামের একটি মজসিদের ভিত খোঁড়ার সময়ে হাতির দাঁত, চোয়াল-সহ বিভিন্ন অংশের সন্ধান মিলতেই বদলে গেল নাম। গোপেয়া হয়ে গেল হাতিপোতা।
গ্রামের এক বাসিন্দা তথা নান্দাই পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান আরজেদ শেখই প্রথম হাতির চোয়ালের অংশ দু’টি সংরক্ষণে উদ্যোগী হন বলে দাবি গ্রামবাসীদের। পুরো গ্রাম তাঁর পাশে দাঁড়ায়। কালনার একটি সংস্থার পরামর্শে বিশেষ রাসায়নিকে ডুবিয়ে চোয়ালগুলির ক্ষয়রোধের চেষ্টা চলছে। প্রাক্তন প্রধানের দাবি, “শুধু গ্রামের মানুষই নন, অনেক বহিরাগতেরও এ ব্যাপারে কৌতুহল রয়েছে। আপাতত চোয়ালের অংশ দু’টি গ্রামের একটি ক্লাবঘরে রাখা হয়েছে।” গ্রামে একটি পাঠাগার গড়ার দাবি বহু দিনের। এ ব্যাপারের সাহায্য চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদনও করেছেন বাসিন্দারা। আরজেদ শেখের দাবি, “পাঠাগার তৈরি হয়ে গেলে সেখানেই চোয়ালের অংশ দু’টি সংরক্ষিত হবে।” হাতিপোতার নামের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে একটি সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার আর্জি জানিয়েছেন গ্রামবাসী মনিরুল ইসলাম, হাবিবুদ্দিন শেখরা। গ্রামের বাসিন্দা তথা নান্দাই পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান ঈদের আলি মোল্লা জানান, গ্রামবাসীরা লিখিত ভাবে সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা দাবি জানালে এ ব্যাপারে উদ্যোগ হবে। কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তি চালের দাবি, “বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে দেখব। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে পঞ্চায়েত সমিতি পাশে দাঁড়াবে।” |