দক্ষিণ কলকাতা
সামিল জলাধার
বাগানবিলাস
হরে সবুজায়নের জন্য কলকাতা পুরসভা অনেক জায়গাতেই গাছ লাগিয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পার্কের সংখ্যাও। কিন্তু শহরের মধ্যে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই বেশ কিছু পার্কের একাংশে জলের জন্য বুস্টার পাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে, অনেক জায়গাতেই পার্কের সবুজের জায়গা কমেছে। তাই সেই জায়গায় ফের সবুজ ফেরানোর জন্য কলকাতা পুরসভা কয়েকটি বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের জলাধারের ছাদে বাগান তৈরি করছে।
আপাতত পুরসভার চারটি বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের জলাধারে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। শহরে সিরিটি, কসবা, কালীঘাট এবং গড়ফায় এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। চারটির মধ্যে কসবায় ইতিমধ্যেই এই বাগান নির্মাণ করা হয়েছে।
কলকাতার মেয়র তথা পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের মেয়র পারিষদ শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শহরকে সুন্দর রাখার জন্য সবুজায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পুর-কর্তৃপক্ষ সেই কাজই করছেন। কিন্তু জায়গা না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য হয়েই পার্কের মধ্যে বা ফাঁকা জমিতে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করতে হয়েছে। কাজেই সবুজায়ন নষ্ট হয়েছে। এই ঘাটতি পূরণ করতে বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের ওপর বাগান নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।”
পুরসভার উদ্যান দফতর একটি সমীক্ষা চালিয়ে জেনেছে, বুস্টার পাম্পিং স্টেশনে যে জলাধার তৈরি করা হয়েছে তার উপর দশ হাজার বর্গ ফুটেরও বেশি জায়গা খালি পড়ে রয়েছে। জলাধারের উপর এই ছাদ খালি পড়ে থাকায় এমনিতেই ময়লা হয়। এই ফাঁকা জায়গাতেই বাগান তৈরি হলে সবুজায়নও হবে, ছাদ ময়লা হওয়ারও সম্ভাবনা থাকবে না।
এই বাগানে নানা রকম মরসুমি ফুলের গাছ ছাড়াও বেড়াবার রাস্তা এবং বসারও বন্দোবস্ত থাকবে। কসবায় একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। আবর্জনা ফেলার জন্য সুদৃশ্য ডাস্টবিনও এখানে বসানো হয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে বাহারি বাতিস্তম্ভ। এই মডেলেই অন্যান্য তিনটি পার্ক সাজানোর কাজ চলছে। পুরসভা সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে শহরে পার্কের সংখ্যা প্রায় সাতশো।
পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, “শহরে সবুজায়ন প্রকল্প রূপায়ণ করতেই এই ধরনের উদ্যোগ। মধ্য কলকাতার মহম্মদ আলি পার্কে জলাধারের ওপরে ইংরেজ আমল থেকেই বাগান রয়েছে। সেখানে পুজোও হয়। অবশ্য নতুন এই জায়গায় কোনও রকম পুজো হবে না। পরবর্তী কালে, অন্যান্য বুস্টার পাম্পিং স্টেশনকেও এ ভাবে সাজানো হবে। এ বছর পুজোর আগেই কলকাতা পুরসভা এই চারটি বাগানই উদ্বোধন করবে।”
এখানেই প্রশ্ন ওঠে, এই ধরনের বাগান তৈরি করতে গেলে জলাধারে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে কি?
দেবাশিসবাবু জানান, বড় গাছ লাগালে অনেক সময় তা ঝড়ে ভেঙে পড়তে পারে। ফলে, আম, জাম, বট বা অশ্বত্থর মতো বড় গাছ এখানে কখনওই লাগানো যাবে না। এ ছাড়াও এই সমস্ত গাছ লাগালে জলাধারের পরিকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেই কারণে এখানে মরসুমি এবং বাহারি ফুল ছাড়াও কিছু গুল্মলতা লাগানো থাকবে।
শহরের বুস্টার পাম্পিং স্টেশন চত্বরে এই ধরনের জলাধারের উপর বাগান করলে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কী সমস্যা হবে?
শোভনবাবু বলেন, “যেখানে পাম্প রয়েছে তার ওপর কোনও বাগান নির্মাণ হচ্ছে না। সেখানে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কেবলমাত্র জলাধারের উপরের সাজানো বাগানে সকলে যেতে পারবেন। সে ক্ষেত্রেও একটি নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ থাকবে। এখানে সব সময়ের জন্য প্রহরীও থাকবে।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.