জোড়া খুনের তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁরাই আসলে খুন করতে গিয়েছিলেন। বুধবার রাতে শান্তিপুরের প্রমোদপল্লি এলাকায় ওই দু’জনকে পিটিয়ে গুলি করে খুন করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের নাম সঞ্জীবন সরকার (৩২) এবং কৃষ্ণ কর্মকার (৩৪)। সঞ্জীবনবাবুর বাড়ি রানাঘাটের দুর্গাপুর, কৃষ্ণবাবুর বাড়ি রানাঘাট রাঘবপুর পীরতলায়। ঘটনার পরে ওই দিন রাতে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। বিরাট পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র। তিনি বৃহস্পতিবার বলেন, “প্রাথমিক তদন্তের পরে জানা গিয়েছে, ওই দুই যুবক প্রদীপ সরকার নামে এক ব্যক্তিকে খুন করতে গিয়েছিল। কিন্তু তারা ধরে পড়ে যায়। এলাকারই পাঁচ ছ’জন মিলে তাদের পিটিয়ে গুলি করে খুন করে।” তিনি বলেন, “দুষ্কৃতীদের কাছ থেকেই আগ্নেয়াস্ত্র কেড়ে নিয়ে তা দিয়েই তাদের গুলি করে খুন করা হয়েছে। তবে ঠিক কী কারণে তারা খুন করতে গিয়েছিল, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে প্রদীপবাবুর খোঁজ চলছে।” প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ মনে করছে, সঞ্জীবনবাবু ও কৃষ্ণবাবুর সঙ্গে প্রদীপবাবুর ঘনিষ্ঠতা ছিল।
পরিস্থিতি এই দিনও থমথমে ছিল। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে রাজি ছিলেন না কেউই। তবে সিপিএমের শান্তিপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক শান্তনু চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূলের দুই দল সমাজবিরোধীদের মধ্যে গণ্ডগোলের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান সরকার একের পর এক সমাজবিরোধীদের জেল থেকে ছাড়িয়ে আনছে। এলাকা দখল করতে সেই সব সমাজবিরোধীদের আশ্রয়ও দেওয়া হচ্ছে। প্রমোদপল্লির ঘটনা তারই জের।” তিনি বলেন, “আমরা বারবার বলছি যে, ফুলিয়া আগুনের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই ঘটনা তারই প্রমাণ।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রদীপবাবুর স্ত্রী চঞ্চলা সরকার পঞ্চায়েত নির্বাচনে নবলা গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রদীপবাবুও তৃণমূলের কর্মী বলে এলাকায় পরিচিত। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তপন সরকার বলেন, “প্রদীপ আগে সিপিএম করতেন। সেই সময়ে সিপিএম তাঁকে অনেক অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করেছিল। পরে তিনি আমাদের দলে এসে মূল স্রোতে ফিরেছিলেন। সিপিএমে যখন ছিলেন, সেই সময়ের কোনও গণ্ডগোলের জেরেই তাঁকে ওই দিন খুন করার চেষ্টা হয়।” শান্তনুবাবু অবশ্য বলেন, “প্রদীপবাবু কোনওদিনই আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বরং অতীতে অনেকবার তিনি জেল খেটেছেন। তৃণমূলই তাঁকে ব্যবহার করছে।”
চঞ্চলাদেবী বলেন, “আমার স্বামী কখনওই কোনও অসামাজিক কাজ করেননি। তবে তাঁকে ফাঁসাবার চেষ্টা হয়েছে অনেকবার। ওই দিন রাতে তাঁকে খুন করতে এসেছিল ওই দুই দুষ্কৃতী। তবে এলাকার মানুষ আমাদের ভালবাসেন। তাঁরা রুখে দাঁড়ান। সেই সময়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। তখন কে কাকে গুলি করেছে, তা বলতে পারব না।” তাঁর কথায়, “কেন আমার স্বামীকে খুনের চেষ্টা হল, তা আমরা জানি না।” |