বাসে ভাঙচুর কলেজ পড়ুয়াদের, প্রতিবাদে অবরোধ
ভাড়ায় ছাড়ের দাবিতে গণ্ডগোল
ফের ভাড়ায় ছাড় দেওয়ার দাবিতে কলেজ পড়ুয়াদের সঙ্গে বাসকর্মীদের বচসা বাধল হলদিয়ার চৈতন্যপুর-কুকড়াহাটি রুটে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এই নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ওই রুটের যান চলাচল। দিন কুড়ি আগেও এমনই ঘটনার জেরে টানা পাঁচ দিন বাস বন্ধ ছিল ওই রুটে। এ দিন বাসে ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি বাসকর্মীদের মারধর করারও অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিবেকানন্দ মিশন মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিরুদ্ধে। কলেজ পড়ুয়াদের ব্যবহারে তিতবিরক্ত এলাকাবাসী এ দিন বাসকর্মীদের সঙ্গে মিলে রামপুর বাসস্টপের সামনে রাস্তা অবরোধ করেন ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। বাসমালিক সংগঠনের তরফে থানায় অভিযোগও জানানো হয়েছে। সৌমিত্র প্রামাণিক নামে প্রথম বর্ষের ও সুমিত জানা নামে তৃতীয় বর্ষের দুই ছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ। হলদিয়ার এসডিপিও অমিতাভ মাইতি বলেন, “দু’জন ছাত্রকে আটক করা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। আপাতত পুলিশ পিকেট থাকবে এলাকায়।”
ভাঙচুর হওয়া বাস।
বিবেকানন্দ মিশন মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দখলে। স্বভাবতই এই ঘটনায় অভিযোগের তির টিএমসিপি-র দিকে। যদিও কলেজের ছাত্রসংসদের তরফে দোষ চাপানো হয়েছে এসএফআইয়ের ঘাড়ে। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে এসএফআইয়ের বক্তব্য, ওই কলেজে অস্তিত্বই নেই দলীয় সংগঠনের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিবেকানন্দ মিশন মহাবিদ্যালয়ের বেশ কিছু ছাত্রী চৈতন্যপুর মোড়ে জলেশ্বর থেকে কুকড়াহাটিগামী একটি বাসে ওঠেন। অভিযোগ, তাঁরা ন্যূনতম ভাড়ার থেকেও কম টাকা নেওয়ার দাবি জানায়। অনেকে আবার সেটুকুও দিতে অস্বীকার করেন। এই নিয়ে বাস কন্ডাক্টরদের সঙ্গে বচসা বাধে তাঁদের। এরপর কলেজের সামনে বাসটি এলেই ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা ছুটে এসে বাসে ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। বাসকর্মীদেরও মারধর করা হয়। আহত দু’জন বাসকর্মীকে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে বাস চালক অমিত মিস্ত্রির আঘাত গুরুতর।
ঘটনার প্রতিবাদে দুপুরেই রামপুরে ওই কলেজের সামনে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখান বাসকর্মীরা। সামিল হন এলাকার বেশ কিছু মানুষ। বেলা ১টা থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে অবরোধ। ভাঙচুরে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানান অবরোধকারীরা। জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুকুমার বেরার অভিযোগ, “বাসের কর্মীদের উপর এই ধরনের জুলুম মেনে নেওয়া যায় না। আগেও এরকম হয়েছে। তা-ও আমরা বাস চালিয়েছি। পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা যথোচিত নয়। কলেজের যে ছাত্ররা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাঁদের শাস্তি দিতে হবে।”
হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে প্রহৃত বাসকর্মী।
বিবেকানন্দ মিশন মহাবিদ্যালয়ে ছাত্র-সংসদের সাধারণ সম্পাদক টিএমসিপি-র মধুসূদন পাত্রের কথায়, “ওই বাসের কন্ডাক্টর আমাদের ছাত্রী সুস্মিতা গিরি-সহ কয়েকজনের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া চায়। ছাত্রীরা এর প্রতিবাদ করেছিলেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এসএফআই বাস ভাঙচুর করে আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।” যদিও এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক পরিতোষ পট্টনায়েকের বক্তব্য, “ওই কলেজে ছাত্র-সংসদে আছে টিএমসিপি। কলেজে আমাদের যে কোনও অস্তিত্ব নেই, তা ওরাই বলে থাকে। আচমকা আমাদের সদস্যরা এসে বাস ভাঙচুর করল কী ভাবে? এই ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি আমরা।”
এর আগে বাসভাড়া নিয়েই গত ৩১ জুলাই হলদিয়ার রানিচক গভর্নমেন্ট কলেজ ও বিবেকানন্দ মিশন মহাবিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সঙ্গে বচসা বেধেছিল বাসকর্মীদের। গোলমালের জেরে সে বার টানা ৫ দিন ওই রুটে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। সেই সময় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে মধুসূদন পাত্র দাবি করেছিলেন, “পড়ুযাদের জন্য সরকার বাসভাড়ায় ছাড় দিতে বলেছে। চৈতন্যপুর থেকে রামপুর পর্যন্ত ১ কিলোমিটার রাস্তায় কোনও ভাড়া না নেওয়ার নির্দেশ রয়েছে পরিবহণ দফতরের।” যদিও জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক অভিজিৎকুমার হাইত স্পষ্ট ভাবে বলেন, “সরকারি বাসের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার নিয়ম থাকলেও বেসরকারি বাসের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনও নির্দেশ নেই। ন্যূন্যতম ৪ টাকা ভাড়া সকলকেই দিতে হবে।”
জেলায় অবশ্য বেসরকারি বাসেও পড়ুয়াদের ছাড় দিতে বাধ্য করা হয়। জেলা বাস ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক সামসুল আরেফিনের বক্তব্য, “আমরা কিছু ছাড় দিই কলেজ পড়ুয়াদের। তাই বলে বাস ভাঙচুর বা কর্মীদের মারধর মেনে নেওয়া যায় না।” বিবেকানন্দ মিশন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মণিশঙ্কর মাইতি বলেন, “এটা সম্পূর্ণ কলেজের বাইরের ঘটনা। আমাদের কোনও ছাত্র জড়িত রয়েছে বলে মনে হয় না। আমি সঠিক ভাবে জানিও না।”

ছবি: আরিফ ইকবাল খান।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.