কারও বাড়িতে বা অফিসে সাপ ঢুকে পড়েছে। তখনই খোঁজ পড়ে শিবনাথ লায়া ওরফে লেকুরের। সাপ যেখানেই লুকিয়ে থাকুক লেকু যেন তার গন্ধ পায়। ঠিক খুঁজে বের করে সাপের মাথাটা চেপে ধরেন কিছুক্ষণ। পরে যেন আজ্ঞাবহ দাস ওই সাপকে ঘাড়ে ঝুলিয়ে লেকু জঙ্গল মুখো হন। জঙ্গলে সাপকে রেখে এসে তবেই শান্তি লেকুর।
পুঞ্চার লায়া পাড়ার বাসিন্দা শিবনাথ লায়াকে সবাই এক ডাকে লেকু বলেই চেনে। ৩৫ বছরের লেকুর সাপ নিয়ে এমন কাণ্ড প্রায় দু’দশক ধরে চলছে। তবে তাঁর সাপ খেলানো ব্যবসা নয়। তা হলে সাপ প্রীতি কী ভাবে তৈরি হল? লেকুবাবু বলেন, “আমার বয়স ১৪ -১৫ হবে। একদিন সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুল থেকে ফেরার পথে দেখি রাস্তার ধারে একটা সাপ আহত অবস্থায় ছটপট করছে। দেখে কেমন মায়া হল। বন্ধুরা বলল পাথর মেরে ফেল। নইলে কাউকে ছোবল মারবে। আমি কোনও ক্রমে ওদের ঠেকাই। বন্ধুরা চলে গেলে একটা কাঠি নিয়ে সাপটাকে তুলে ডোবার পাড়ে রেখে আসি। খানিক দেখি সাপটা সুস্থ হয়ে চলে গিয়েছে। সেই থেকে কেমন যেন নেশায় পেয়ে বসলো।” |
সাপ হাতে শিবনাথ লায়া। —নিজস্ব চিত্র। |
তাঁর কথায়, “মন্ত্রতন্ত্র নয়। সাপ ধরার কৌশল জানতে হবে। সাপুড়েদের সঙ্গে থেকে সাপ ধরার কৌশল শিখেছি। তবে মাঠে বা জঙ্গলের সাপ ধরি না। কারও বাড়িতে বা লোকালয়ে সাপ ঢুকে পড়লে আমার ডাক পড়ে। তবে এ জন্য পয়সা নিই না।” বাবা বাবুলাল লায়া বলেন, “ছোট ছেলে লেকুর সাপ নিয়ে এই পাগলামি প্রথম দিকে সবাই নিষেধ করেছিলাম। বিষধর সাপ কখন কী হয় বলা মুশকিল। আগে তো কখনও কখনও আহত সাপ বাড়িতে নিয়ে এসে পরিচর্যা করত।”
সাপ ধরার ক্ষেত্রে লেকুর সাহস ও ক্ষিপ্রতায় মুগ্ধ সকলেই। পুঞ্চা থানার ওসি অজিত মিশ্র বলেন, “একবার থানায় সাপ ঢুকে পড়েছিল। লেকু এসে দেওয়ালের গর্তের ভিতর থেকে সাপটাকে টেনে বের করেছিল। সবাই মেরে ফেলব বলায় সে ওটাকে জঙ্গলে ছেড়ে এসেছিল।” পুঞ্চার বাসিন্দা শ্যাম গঁরাই বলেন, “এক বার বাড়িতে সাপ ঢুকে পড়ায় আমাদের খাওয়া -দাওয়া মাথায় উঠে গিয়েছিল। লেকু সাপটা বের করে আনার পরে দুশ্চিন্তা মুক্ত হই। এর জন্য ও অবশ্য কোনও টাকা দাবি করেনি।” লেকু বলেন, “এখনও পর্যন্ত যা সাপ ধরেছি তার মধ্যে বেশিরভাগই বিষধর। কিন্তু কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। সাপুড়েরা অনেক সময় টাকা দিয়ে সাপ কিনতে চেয়েছে। আমি দিইনি। কারণ, ওরা সাপ নিয়ে খেলা দেখায়। নিয়মিত খেতেও দেয় না।” |