সম্পাদকীয় ২...
ধর্ম, ধর্মদ্রোহ
গারো বছর বয়সের একটি শিশুকন্যা রামশা মাসি’কে ধর্মদ্রোহের দায়ে গ্রেফতার করিয়াছে পাকিস্তানের পুলিশ। শিশুটি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। পাকিস্তানে সুন্নি মুসলমান ব্যতীত আর সব ধর্মের মানুষই (যাহার মধ্যে হিন্দু, শিয়া, আহমদিয়া কিংবা ইসমাইলি মুসলিমরা এবং অবশ্যই খ্রিস্টানরাও পড়েন) ধর্মদ্রোহের খাঁড়া মাথার উপর লইয়া দিনযাপন করেন বলিয়া অভিযোগ। কিন্তু তাই বলিয়া এগারো বছর বয়স্ক একটি শিশুকন্যা, যে আবার ‘ডাউন সিনড্রোম’ নামক রোগের শিকার, তাহার বিরুদ্ধেও ইসলাম অবমাননার অভিযোগ আনিয়া তাহাকে কারারুদ্ধ করা যায়? রামশার ‘অপরাধ’, সে রান্নার আগুন জ্বালিতে একটি কেতাবের কয়েকটি পৃষ্ঠা লইয়া যাইতেছিল, যাহাতে কোরানের কয়েকটি সুরা উদ্ধৃত ছিল। কোরানের সুরা উদ্ধৃত রহিয়াছে, এমন কাগজকে গোঁড়া মৌলবিরা এখন ‘পবিত্র’ বলিয়া ফরমান জারি করিতেছেন। অতঃপর, ধর্মদ্রোহের অভিযোগ।
এক্ষণে যে প্রশ্নটি অনিবার্য হইয়া উঠে, তাহা হইল, এই ধরনের আচরণ কি ধর্মেরই অবমাননা নহে? এক ইহুদির শবযাত্রার সময় শ্রদ্ধা জানাইতে নতমস্তকে উঠিয়া দাঁড়াইলে পয়গম্বরের বিস্মিত সঙ্গীরা তাঁহার কাছে এমন শ্রদ্ধানম্র আচরণের ব্যাখ্যা চাহিয়াছিলেন। পয়গম্বরের উত্তর ছিল তোমার ধর্ম তোমার কাছে, আমার ধর্ম আমার কাছে এবং সব ধর্মকেই শ্রদ্ধা করা উচিত। দুর্ভাগ্যবশত, এই সহনশীলতা ক্রমে বিরল হইতেছে। পাকিস্তানে ধর্মদ্রোহের নামে ভিন্নধর্মীকে নিগ্রহ-লাঞ্ছনা, এমনকী হত্যা করিবার ছলও খোঁজা হইতেছে। ইসলামের প্রকৃত অবমাননা ঘটিতেছে এই ধর্মধ্বজীদের হাতেই। পাকিস্তান কায়েদ-এ-আজমের স্বপ্ন হইতে বহু কাল আগেই বিচ্যুত। গত শতাব্দীর আশির দশক হইতে সেই দেশ ক্রমে কট্টরপন্থীদের হস্তগত হইয়াছে। বিভিন্ন ঘটনা নির্দেশ করিতেছে, পাকিস্তানে বহু ক্ষেত্রেই সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকারও রক্ষিত হইতেছে না। যে ভঙ্গিতে এই অধিকার-হরণ চলিতেছে, ধর্মের পরিভাষা ব্যবহার করিলে সেই অপকর্মগুলিকেই ধর্মদ্রোহ আখ্যা দেওয়া উচিত। সমস্যা হইল, যে পরিমাণ শিক্ষা, বোধের প্রসার ঘটিলে কট্টরপন্থীদের এই জঘন্য আচরণের প্রকৃত রূপ আমজনতা বুঝিতে পারে, পাকিস্তান তাহার বহু দূরে।
রামশা মাসি’র গ্রেফতারের বিশ্বময় নিন্দা হইতেছে। পাকিস্তানে মানবাধিকার কী ভাবে লঙ্ঘিত হইতেছে, এ বিষয়ে পশ্চিমের বহুবিলম্বিত বোধোদয় এ ধরনের ঘটনার প্রতিক্রিয়াতেই মুখর হয়। সম্ভবত পশ্চিমের চাপেই প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি ঘটনাটির বিশদ তদন্ত করিয়া রিপোর্ট তলব করিয়াছেন। কিন্তু নিজে ধার-করা-সময়ের উপর টিকিয়া থাকা জারদারি মৌলবাদীদের চাপের কাছে কতটা অনমনীয় থাকিতে পারিবেন, বলা কঠিন। ইতিপূর্বে ধর্মদ্রোহের অভিযোগে কারারুদ্ধ ব্যক্তিরা কেহই সুবিচার পান নাই, বহু ক্ষেত্রে বিচারের প্রক্রিয়া শুরুর আগেই ধর্মান্ধ জনতা জেলখানার মধ্যেই তাহাদের পিটাইয়া মারিয়াছে। আশঙ্কা হয়, এগারো বছরের এক অসুস্থ শিশুকন্যাকে ধর্মান্ধ হিংসায় কোতল করিতেও ওই মৌলবাদীদের হাত কাঁপিবে না। পাকিস্তান যে পথে চলিতেছে, তাহা সর্বনাশের পথ। কোনও আধুনিক দেশ এই পথে চলিতে পারে না। ‘আধুনিক ইসলাম’ নামটির মোড়কে মধ্যযুগীয় বর্বরতার বাড়বাড়ন্তই সেই দেশের বাস্তব। জারদারি পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। কিন্তু পাকিস্তানে গণতন্ত্রের শিকড় মৌলবাদী ইসলামের শিকড়ের মতো বিস্তৃত নয়। মোল্লাদের নিরস্ত করিয়া আইনের শাসন কায়েম করিতে জারদারি কতখানি সফল হইবেন, সন্দেহ। মোল্লাতন্ত্রের সহিত আপস করিয়া যে গণতন্ত্রকে টিকিতে হয়, তাহার আয়ু ক্ষণস্থায়ী হইতে বাধ্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.