|
|
|
|
আপত্তি জাইকা-র |
রেলের হাতেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর দায়িত্ব |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
দীর্ঘ টালবাহানার পরে অবশেষে ভারতীয় রেলের হাতে এল কলকাতার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো করিডরটি। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওই প্রস্তাবটিতে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ফলে আগামী দিনে ওই মেট্রোর ব্যবস্থাপনা ও নির্মাণের যাবতীয় দায়িত্ব চলে এল রেল মন্ত্রকের হাতে। মালিকানা হস্তান্তরের ফলে রাজ্য সরকার ওই প্রকল্পে এ পর্যন্ত যে টাকা বিনিয়োগ করেছে, তা এখন ফিরিয়ে দেবে রেল মন্ত্রক।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী হওয়ার পরে কলকাতা ও সংলগ্ন শহরতলিকে জুড়তে চারটি মেট্রো প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন। যেগুলি নির্মাণের দায়িত্ব পায় কলকাতা মেট্রো রেল। মেট্রো রেলের জন্য আলাদা একটি জোনও ঘোষণা করেন মমতা। সেই সময়েই রেল মন্ত্রক বলে, পূর্ব ঘোষিত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো করিডরটি নির্মাণের দায়িত্ব রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের পরিবর্তে তাদের হাতে দেওয়া হোক। রাজনৈতিক কারণেই মমতা সে সময় এই দাবি করলেও মন্ত্রকের যুক্তি ছিল, বাকি চারটি মেট্রো প্রকল্প ও ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ একই ছাতার তলায় এলে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করার সুবিধা হবে।
বিভিন্ন জটিলতায় এ যাবৎ সেই হস্তান্তর আটকে থাকলেও দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে তৎপর হন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। মাসখানেক আগে তিনি রেল বোর্ডের কর্তাদের নির্দেশ দেন, যত দ্রুত সম্ভব এই হাতবদল সেরে ফেলতে হবে। প্রকল্পটিতে এত দিন পর্যন্ত রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের পঞ্চাশ শতাংশ করে অংশীদারিত্ব ছিল। আজ রেলমন্ত্রী বলেন, “যে প্রস্তাবটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পাস হয়েছে, তাতে ওই প্রকল্পে রেলের অংশীদারিত্ব থাকছে ৭৪ শতাংশ। বাকিটা কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের। রাজ্য সরকার যে টাকা বিনিয়োগ করেছে, তা তাদের মিটিয়ে দেওয়া হবে।”
কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক-রাজ্য সরকার সমান অংশীদারিত্বে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে হাতে নেওয়া ৪৮৭৪ কোটি টাকার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে ২২৫৩ কোটি টাকা ঋণ দেবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। যদিও রেল মন্ত্রক ওই প্রকল্প নিজেদের হাতে নিতে ইচ্ছুক, এই তথ্য সামনে আসার পরে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন জাইকা কর্তৃপক্ষ।
কেন?
বর্তমানে কলকাতা মেট্রোর এক টাকা আয় করতে খরচ হয় প্রায় আড়াই টাকা। জাইকা-র বক্তব্য, এই ধরনের প্রকল্পের ঋণের টাকা ফেরৎ পেতে গেলে যাত্রী ভাড়া থেকে আয়ই একমাত্র ভরসা। সেই আয়ের একটি অংশ দিয়ে ঋণ শোধ হয়ে থাকে। বাকি টাকা দিয়ে মেটানো হয় রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মী খরচ। দিল্লি মেট্রো বর্তমানে এই মডেলটিই মেনে চলে। দিল্লি মেট্রোয় ভাড়া বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাড়া ঠিক করার জন্য একটি স্বাধীন ট্যারিফ রেগুলেটরি বোর্ড রয়েছে। কলকাতার ক্ষেত্রেও এই ধরনের একটি বোর্ড গঠনের প্রস্তাব ছিল। কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন (কেএমআরসি) সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সংস্থার সুপারিশ মানলে কেএমআরসি-র ভাড়া বর্তমান মেট্রো রেলের ভাড়ার থেকে অনেক বেশি হবে। কিন্তু জাইকা-র বক্তব্য ছিল, রেল মন্ত্রকের হাতে প্রকল্পটি চলে গেলে রেল মন্ত্রক চাহিদা অনুযায়ী যাত্রী ভাড়া করার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দেবে না। এতে লাভ তো হবেই না, উল্টে কলকাতা মেট্রোর মতোই ক্ষতিতে চলবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোও। ভারতীয় রেলের হাতে থাকা কলকাতা মেট্রো গত সাতাশ বছরেও লাভের মুখ দেখেনি। এই কারণে ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরটি রেলের হাতে তুলে দেওয়ায় জাইকার আপত্তি বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক।
যদিও রেল মন্ত্রকের পাল্টা যুক্তি, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মেট্রোই ক্ষতিতে চলে। সে ক্ষেত্রে ক্ষতির বিষয়টি মাথায় রেখেই মেট্রো পরিষেবা দেওয়া হয়ে থাকে। মন্ত্রকের সূত্র জানিয়েছে, রেলের তরফে জাইকাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, ভবিষ্যতে ভাড়া থেকে যা-ই আয় হোক না কেন, ঋণের টাকা ওই সংস্থাকে সময় মতো মিটিয়ে দেওয়া হবে। ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে রেলমন্ত্রী মুকুল রায় আজ বলেন, “ট্যারিফ রেগুলেটরি বোর্ড থাকবে। তা ছাড়া ওই বিষয়গুলি পরে ঠিক করা হবে।” |
|
|
|
|
|