পুরোপুরি কেন্দ্রের টাকায় রাজ্যের কপালে বহুপ্রতীক্ষিত একটি সেতুর শিকে ছিঁড়তে চলেছে। যা গড়ে উঠলে এক ধাক্কায় মালদহ থেকে বিহারের কাটিহারের দূরত্ব কমে যাবে ১১০ কিলোমিটার। ফুলহার নদী পারাপারে আদ্যিকাল থেকে খেয়া নৌকার ভরসাতেই রয়েছেন মালদহের প্রত্যন্ত রতুয়ার বাসিন্দারা। সেতুটি গড়ে উঠলে সড়কপথে সহজেই জেলা সদরে যেতে পারবেন তাঁরাও। কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি পৌঁছানোর একটি বিকল্প রাস্তাও তৈরি হবে।
মালদহের রতুয়ায় ফুলহার নদীর উপরে দুই লেনের এই সড়ক সেতুর প্রকল্পেই রাজ্যকে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক। স্রেফ একটি সেতুর জন্য কেন্দ্রীয় সড়ক তহবিল থেকে এত টাকা আদায় করাটা রাজ্যের জন্য কার্যত রেকর্ড। সংখ্যালঘু উন্নয়নে রাজ্য সরকারের সাফল্য মেনে গত মাসেই অন্য রাজ্যের বরাদ্দ কেটে ‘ইনাম’ দিয়েছিল কেন্দ্র। একাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় রাজ্যকে অতিরিক্ত ৩০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। এ বার রতুয়ার এই সেতুর জন্য কেন্দ্রের ছাড়পত্র আর একটি সুখবর।
এই প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমতি আদায় করতে বুধবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের সচিব এ কে উপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্যের পূর্তসচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন। বৈঠকের পরে তিনি জানান, ফুলহারের উপরে সেতু তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সড়ক তহবিল থেকে ২৪৭ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। প্রতিবেশী দুই রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের মধ্যে সংযোগ ঘটাবে বলে সেতু তৈরির পুরো টাকাই দেবে কেন্দ্র। বাজেট বরাদ্দের বাইরে পশ্চিমবঙ্গের কোনও একটি সড়ক বা সেতু প্রকল্পের জন্য এত বেশি কেন্দ্রীয় বরাদ্দ আগে কখনও হয়নি।
রতুয়া-ভালুকা রাজ্য সড়কের বালুপুর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ফুলহারের বাঁধ। বাঁধ থেকে নাককাটি ঘাট আধ কিলোমিটার। নদী পেরিয়ে ওপারে যেতে দুর্ভোগে পড়েন বাসিন্দারা। সারা বছর তো বটেই, বর্ষায় মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি এলাকা দু’টি মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই এই প্রকল্পটি নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, তখন তিনি নিজেও প্রকল্পটি নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। তিন বছর আগে তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামীর আমলে ওই সেতুর সমীক্ষা হয়। তার পরে কাজ থমকে যায়।
রতুয়ার বর্তমান কংগ্রেস বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ও ফুলহারের তীরবর্তী মহানন্দটোলা পঞ্চায়েত এলাকায় থাকেন। তিনি নিজে বহুবার এই সেতুর জন্য কলকাতা-দিল্লিতে দরবার করেছেন। সেতুর স্বপ্ন পূরণ না-হওয়ায় তাঁকে ওই তল্লাটে কম টিপ্পনি শুনতে হয়নি। এ দিন তিনি বলেন, “শুধু আমি নই রতুয়ায় সবার কাছেই এই সেতু হবে জীবনের একটা শ্রেষ্ঠ ঘটনা।” বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান নদী মণ্ডলও একই রকম আপ্লুত।
এই সেতু হলে জাতীয় সড়ক ছাড়াও কলকাতা থেকে মালদহের রতুয়া, বিলাইমারি, কাটিহার, পূর্ণিয়া, ডালখোলা হয়েও শিলিগুড়ি পৌঁছানো যাবে। কলকাতা থেকে কাটিহার ও পূর্ণিয়ার দূরত্ব কমবে। ফুলহারের বাঁধ থেকে নাককাটি ঘাট হয়ে সেতুটি হলে রতুয়ার মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি পঞ্চায়েতের মানুষের স্বপ্নপূরণ হবে। সেই সঙ্গে মালদহ থেকে রায়গঞ্জ, ডালখোলা, পূর্ণিয়া হয়ে ঘুরপথে কাটিহারে যাওয়ার ভোগান্তি থেকেও রেহাই মিলবে।
পূর্তসচিব এ দিন বলেন, “এ বার প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে চলবে। প্রথম ছ’মাসে বৈদ্যুতিক স্তম্ভ এবং অন্য প্রতিবন্ধক সরানোর কাজ চলবে। তারপর টেন্ডার ডাকা হবে। টেন্ডার দেওয়ার তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে।” ফুলহার নদীর মূল প্রবাহপথের উপরে ৮০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি ছাড়াও তার দু’দিকে তৈরি হবে ২.২০ কিলোমিটার লম্বা ‘অ্যাপ্রোচ রোড’।
সব মিলিয়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নতুন প্রকল্পটি যেহেতু ৩৪ ও ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তুলবে, সে-জন্য সেটিকেও জাতীয় সড়কের মর্যাদা দেওয়ার জন্য এ দিন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের কাছে আর্জি জানান পূর্ত সচিব। নীতিগতভাবে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক সেই প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। |
(তথ্য সহায়তা:উত্তরবঙ্গ ব্যুরো) |