|
|
|
|
|
‘বাপু’র মতো ‘দিদি’র
জীবনই পাথেয় ‘যুবা’র
সঞ্জয় সিংহ • কলকাতা |
|
মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী বলেছিলেন, তাঁর জীবনই তাঁর বাণী।
নিজেদের গড়ে তুলতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনকেই ‘আদর্শ’ করে পথে নামছে ‘সর্বভারতীয় তৃণমূল যুবা’।
দলের ছাত্র-যুব শাখা থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ ‘এক নতুন ধারা’য় সংগঠন গড়েছে ‘যুবা’। আগামী শনিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে যুবার সম্মেলন ডাকা হয়েছে। সেই সম্মেলনে প্রধান বক্তা তৃণমূল নেত্রী মমতাই। সম্মেলন উপলক্ষে ‘মা-মাটি-মানুষের জন্য’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা তৈরি করেছে ‘যুবা’। যেখানে সরাসরিই লেখা হয়েছে: ‘গাঁধীজি যেমন ‘বাপু’ নামে জাতির জনক হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন, তেমনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দিদি’ নামে সারা দেশে আমজনতার কাছে স্বীকৃতি পেয়েছেন’। বক্তব্যেই স্পষ্ট, ‘দিদি’র ভাবমূর্তিকে সামনে রেখেই এগোতে চায় ‘যুবা’।
পিসি নয়, তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও তৃণমূল নেত্রীকে ডাকেন ‘দিদি’ বলেই। বস্তুত, অভিষেকের নেতৃত্বেই সংগঠিত হচ্ছে ‘যুবা’। অভিষেকই জানিয়েছেন, ৬৫ পৃষ্ঠার ওই পুস্তিকা মূলত ‘যুবা’র সদস্য ও নেতাজি ইন্ডোরের সমাবেশে আমন্ত্রিত প্রতিনিধিদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। তাঁদের বলা হয়েছে, পুস্তিকাটি ভাল করে পড়ে নিয়ে তবেই সম্মেলনে আসতে। অভিষেকের কথায়, “নেতাজি ইন্ডোরের সম্মেলনে দিদি শ্রোতাদের দল সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করতে পারেন। তাঁর নেতৃত্বে আন্দোলন বা তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের সাফল্য নিয়েও শ্রোতাদের সঙ্গে দিদির কথাবার্তা হতে পারে। দিদির সঙ্গে শ্রোতাদের একটা আলাপচারিতার ব্যবস্থা করছি।”
সংগঠনের উপদেষ্টা ও রাজ্যসভার সদস্য ডেরেক ও ব্রায়েনের বক্তব্য, “দিদি মনে করেন, আমার দল যদি করতে চাও, তা হলে আমার দলের নীতি-আদর্শ এবং আমাদের দলের ইতিহাসটা ভাল করে জেনে নাও।” সম্মেলনে মমতা ছাড়াও বক্তা হিসাবে থাকার মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যয়, সুব্রত বক্সী প্রমুখের। অভিষেক বলেন, “বক্তাদের কেউ বলবেন দিদির নেতৃত্বে আন্দোলনের কথা। কেউ বা বলবেন লক্ষ্যে পৌঁছতে দিদি কত অবিচল থাকেন, তা নিয়ে।”
সম্প্রতি যাঁরা তৃণমূলে এসেছেন বা আসার কথা ভাবছেন, তাঁদের অনেকের কাছেই ‘দিদির কীর্তি’র কথা অজানা। অভিষেক বলেন,‘‘নতুন যাঁরা দলে অর্ন্তভুক্ত হচ্ছেন তাঁদের জানা দরকার কোন মাপের নেত্রীর দ্বারা এই দল পরিচালিত হচ্ছে। সেই নেত্রীর জীবন, তাঁর সংগ্রাম, তাঁর ত্যাগ, তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছনোর দৃষ্টান্ত ওই পুস্তিকায় তুলে ধরা হয়েছে।” পুস্তিকায় ‘যুবা’র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যেমন স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, তেমনই মমতার জীবনযাত্রা, তাঁর আন্দোলন-সংগ্রামের (১৯৮৪ সালে লোকসভা ভোটে জিতে সাংসদ হওয়া থেকে শুরু করে রাজডাঙায় উদ্বাস্তুদের আন্দোলনে বুলডোজারের সামনে জীবন তুচ্ছ করে শুয়ে পড়া, ১৯৯৩-এর ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানের কর্মসূচি, ১৯৯১ সালে তাঁর প্রথম কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়া, আবার এক বছরের মধ্যে সেই মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে চলে আসার মতো ঘটনা থেকে শুরু করে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে আন্দোলনে তাঁর সামিল হওয়ার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ) কথা লেখা হয়েছে। আবার রেলমন্ত্রী হিসেবে এবং তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বে রাজ্য সরকারের সাফল্যের কথাও পুস্তিকায় রয়েছে।
সামনে পঞ্চায়েত ভোট। মমতা কি অভিষেকদের সেই ভোটে নামাতে চান?
দলীয় নেতৃত্বের একাংশ স্পষ্ট জানিয়েছেন, ব্যাপারটা একেবারেই তা নয়। তাঁদের বক্তব্য, “আমাদের দলনেত্রী আরও বড় দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি দেখছেন। তাঁর চোখ এখন আগামী লোকসভা ভোটের দিকে। সর্বভারতীয় স্তরে তিনি যুবার মাধ্যমে দলের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে চাইছেন। যে ভাবমূর্তি হল এক জন ভাল নাগরিক হয়ে ওঠা।” সংগঠনের ‘লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য’ বোঝাতে গিয়ে ‘যুবা’র পুস্তিকাতেও লেখা হয়েছে, ‘দলের প্রধান লক্ষ্য, মানুষকে সঙ্গে নিয়ে দলকে সর্বভারতীয় স্তরে প্রচার ও প্রসার করা। এটা তখনই সম্ভব হবে, যখন যুব সম্প্রদায় বিপুল সংখ্যায় অংশগ্রহণ করতে এগিয়ে আসবে। এটাই সর্বভারতীয় তৃণমূল যুবার প্রধান লক্ষ্য’।
বিরোধী থেকে শাসক দল হয়ে ওঠার পরে সংগঠনের ‘স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি’ গড়ে তুলতে মরিয়া দলনেত্রী স্বয়ং। আগামী লোকসভা ভোটে তৃণমূল রাজ্যের বাইরে একটা বড় অংশের মানুষের মধ্যেও ‘প্রভাব ফেলুক’, তা-ই চান মমতা। আর সেই লক্ষ্যেই ‘যুবা’কে এগিয়ে নিয়ে যেতে ‘দিদির জীবন’কেই বাজি ধরছেন ভাইপো অভিষেক!
|
|
|
|
|
|