আস্থাভোটে পুরপ্রধান হেরে যাওয়ার পরে বাঁকুড়ায় নতুন পুরপ্রধান নির্বাচন স্থগিত রেখেছে রাজ্য সরকার। এই পরিস্থিতিতে শহরের কিছু উন্নয়নমূলক কাজ আটকে রয়েছে বলে অভিযোগ তুললেন খোদ কাউন্সিলরাই। আস্থাভোটের পক্ষে ও বিপক্ষ- দু’পক্ষেরই কাউন্সিলররা উন্নয়নের কাজ আটকে যাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই এই অনাস্থা। তার জেরে তৈরি হওয়া এই জটিলতায় পুর পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় ক্ষুদ্ধ পুরবাসীও। তাঁদের ক্ষোভ, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাঁকুড়া পুরসভায় নতুন করে কোনও উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে না। আবার যে সমস্ত কাজ শুরু হয়েছিল, পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে তা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
কংগ্রেসের ৪ কাউন্সিলরদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গত ২৩ জুন বাঁকুড়ার পুরপ্রধান শম্পা দরিপার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন উপপুরপ্রধান-সহ তৃণমূলের ৬ কাউন্সিলর। ৯ জুলাই আস্থাভোটে শম্পাদেবীর পক্ষে ৮টি ভোট গেলেও ১০টি তাঁর বিপক্ষে যায়। উপপুরপ্রধান অলকা সেন মজুমদাররা ১৬ জুলাই নতুন পুরপ্রধান নির্বাচনের বৈঠক ডাকেন। কিন্তু তার আগেই আস্থাভোটের প্রক্রিয়ায় ত্রুটি রয়েছে বলে দাবি করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বাঁকুড়া পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর ১৩ জুলাই জেলা প্রশাসনের কাছে ফ্যাক্স পাঠিয়ে অনাস্থা প্রক্রিয়া সঠিক ভাবে পালন হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়ে আপাতত পুরপ্রধান নির্বাচন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “অনাস্থা প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা একাধিকবার রিপোর্ট পাঠিয়েছি রাজ্য পুর দফতরে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমাদের পরবর্তী নির্দেশ আসেনি।” |
উপপুরপ্রধান অলকাদেবী বলেন, “পুরপ্রধান না থাকায় কাউন্সিলরদের সভা ডাকা যাচ্ছে না। সে কারণে ৩ লক্ষ টাকার বেশি কোনও প্রকল্পের কাজ করা যাচ্ছে না। তাই কিছু উন্নয়নমূলক কাজ ব্যহত হচ্ছে। আমরাও চাই নতুন পুরপ্রধান শীঘ্র নির্বাচন করে এই সব সমস্যা মেটানো হোক।” তাঁর দাবি, ৩ লক্ষের কম টাকার কোনও কাজ আটকে নেই। কাউন্সিলরা কিন্তু অন্য কথা বলছেন। বাঁকুড়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মাচানতলা মোড় থেকে জেলা সংশোধনাগার পর্যন্ত রাস্তা ও রাস্তার পাশের নালা সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিনের। ওই ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর সঞ্চিতা লাহা বলেন, “অনাস্থা পবের্র কয়েক মাস আগে কাউন্সিলরদের সভায় ওই কাজের জন্য ১২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। টেন্ডার করার মুখেই পুরসভায় অনাস্থা এসে কাজ আটকে গেল। ফলে এই বর্ষায় বাসিন্দারা ভুগছেন।” স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সাধন খাঁ-রা বলেন, “রাস্তার অবস্থা বেশ খারাপ। তারউপর সামান্য বৃষ্টি হলেই আবর্জনায় বুজে থাকা নর্দমা উপচে নোংরা জলে রাস্তা থইথই করে। পুরসভার গোলমালের জন্যই সংস্কারের কাজ আটকে গেল।” গোপীনাথপুর এলাকাতেও কয়েকটি বাড়িতেও একই কারণে নর্দমার জল ঢুকে পড়ছে বলে অভিযোগ।
২ নম্বর ওয়ার্ডের হরিশঙ্করবাবু লেন খানাখন্দে বেহাল হয়ে পড়েছে। স্থানীয় কংগ্রেস কাউন্সিলর রাধারানি বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, “সম্প্রতি ওই রাস্তাটি মেরামতির টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু পুরসভার ডামাডোলের জেরে ওই রাস্তার কাজ শুরু হয়নি। এই পরিস্থিতিতে পুরবাসীরা সঠিক পরিষেবা পাচ্ছেন না বলে দাবি করেছেন প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তি সিংহ। তাঁর অভিযোগ, “বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা বরাদ্দ না হওয়ায় বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ি মেরামত করতে পারছেন না বস্তিবাসীরা।
৩ নম্বর ওর্য়াডের বনপুকুর পাড়ের মাটির রাস্তাটি খানাখন্দে ভরে গিয়েছিল। সেখানে ঢালাইয়ের রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হলেও সেই কাজ এখন অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বাসিন্দা প্রদীপ বাউরি, সাগর বাউরিদের আক্ষেপ, “ভেবেছিলাম এ বার দুর্ভোগ কমবে। কিন্তু সেই কাজ মাঝ পথেই বন্ধ হয়ে গেল। কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ কণ্ডুর অভিযোগ, “অনাস্থায় সায় না দেওয়ার জন্য উপপুরপ্রধান অহেতুক কিছু যুক্তি দেখিয়ে কাজটি বন্ধ করে দিয়েছেন।” উপপুরপ্রধানের দাবি, “ব্যক্তিগত জায়গায় ওই রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ পেয়ে কাজটি আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শিউলি মিদ্যার অভিযোগ, “পুরসভায় অনাস্থা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব নাটক শুরু করেছে। যার জেরে পুরপ্রধান নির্বাচন পিছিয়ে যাচ্ছে ও অচলাবস্থা কাটছেনা। পুরসভার উন্নয়ন মূলক কাজ বন্ধ হওয়ার জন্য তৃণমূলই দায়ি।’’ শম্পা দরিপা অবশ্য বলছেন, “পুরপ্রধান নির্বাচন নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। দল যা সিদ্ধান্ত নেবে আমি তাই মেনে নেব।” তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, “সমস্যাটি মেটানোর জন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।” |