ফোনে পুলিশকে গালি,
চকোলেটের ফাঁদে পা
দমায়েশিটা করছে কে?
তোলপাড় গোটা বসিরহাট থানা। আইসি-র কড়া হুকুম, খুঁজে বের করতেই হবে বদমাশকে! যে ভাবেই হোক। তার পর উত্তমমধ্যম দিয়ে উচিত শিক্ষা দিতে হবে তাকে। তবেই যে ঝাল মিটবে!
ঝাল বলে ঝাল!
কান যে এ বার ‘গঙ্গাজল’ (অবস্থা এমনই যে, গঙ্গা না হলে নিদেন পক্ষে ইছামতী হলেও চলত) দিয়ে সাফ করার জোগাড় হয়েছিল। গত ক’দিন ধরে যা গালি শুনতে হয়েছে থানার পুলিশকর্মীদের, তাতে থানার ল্যান্ডফোনটা ধরতেই ভয় পাচ্ছিলেন তাঁরা। ফোন তুলে ‘নমস্কার, বসিরহাট থানা’ বলার জো পর্যন্ত রাখেনি। কানে ফোন নিলেই অকথ্য গালিগালাজ। দিনে অন্তত ১০-১২ বার। মাতৃভাষা আর রাষ্ট্রভাষা মিশিয়ে। মিষ্টি-চিকন গলায় যে এমন ঝাঁঝ হতে পারে, তা তো আগে জানা ছিল না পুলিশের। বিরক্ত হয়ে বড়বাবু বললেন, ‘ধরে আন’।
যে ‘ব্যাটাদের’ ধরল পুলিশ, তা দেখে তো তাদেরই আক্কেল গুড়ুম! এক পুলিশকর্মী বলেই ফেললেন, “ওদের পেটে যে এমন বদমায়েশি, কে বুঝবে বলুন তো?”
বসিরহাট থানায় ফোনে দুই বালকের পুলিশকে বিরক্ত করার
ঘটনা অঙ্কনচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে। ছবিটি এঁকেছেন নদী বসু।
আক্কেল গুড়ুম হওয়াই অবশ্য স্বাভাবিক। যে দুই ‘অপরাধী’ মঙ্গলবার বসিরহাট থানায় পুলিশের সামনে ভিজে বেড়ালের মতো দাঁড়িয়ে ছিল, তাদের এক জন সপ্তম, অন্য জন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। দুই ভাই-ও বটে। দেগঙ্গার রায়পুর এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ক’দিন আগেই দুই ভাই বেড়াতে এসেছিল বসিরহাটের নেওরাদিঘির ধারে তাদের মামাবাড়িতে। মামার খাতা ঘাঁটতে ঘাঁটতে থানার নম্বর পেয়ে যায় তারা। ব্যস আর পায় কে! ফোনের পর ফোনে জেরবার পুলিশ। অবস্থা এমনই হয় যে, থানায় ফোন বেজে গেলেও কেউ তুলছিলেন না। জরুরি ফোনের ক্ষেত্রে একই জিনিস হওয়ায় এক সময় পুলিশের বড়কর্তাদের কাছে অভিযোগ যেতে শুরু করে। কোন নম্বর থেকে এতবার থানায় ফোন আসছে, তা জানতে লেগে পড়ে পুলিশ। মঙ্গলবার শেষ পর্যন্ত হদিস মেলে ‘অপরাধী’র।
বেশ কয়েক বার গালাগালি খাওয়ার পরেও সে দিন বাবা-বাছা করে পুলিশ বলে ‘কী চাও ভায়া’। ও-প্রান্তের চিকন গলা বলে, ‘চকোলেট চাই’। পুলিশ বলে, ‘তা হলে ৩টের সময় চৌমাথার কাছে চলে এস। অনেক চকোলেট দেব’। বিকেলে এই কথোপকথনের পরেই টোপ গেলে বড় ভাই। ছোট জনকে নিয়ে সে সোজা চলে আসে চৌমাথায়। পুলিশ তাদের নিয়ে আসে থানায়। খবর পেয়ে ছুটতে ছুটতে থানায় হাজির মামাও। কে না জানে, ‘পুলিশ ছুঁলে...’!
পুলিশের চাপে বড় ভাই স্বীকার করে, স্রেফ মজা করতেই তারা থানায় ফোন করে গালিগালাজ করত। ছোট ভাই আবার মিনমিন করে বলল, “আমার দোষ নেই। দাদাই সব শিখিয়েছে।” মামা বললেন, “ছেড়ে দিন স্যার। কাকে কী বলতে হয়, ওরা জানে না। কথা দিচ্ছি, আর হবে না।”
পুলিশ আর কী করে! এমনিতেই মানবিক হওয়ার ‘ফরমান’। তার উপর একরত্তি দুই ‘অপরাধী’। কোথায় বড়বাবু ভেবেছিলেন দেবেন কড়কে পাজিটাকে! সেখানে হাল্কা বকুনির পরে দুই ভাইয়ের হাতে লজেন্স, চকোলেট, বিস্কুট দিয়ে বিদায় করেন তাদের। বসিরহাটের আইসি শুভাশিস বণিক বললেন, “বাচ্চারা করেছে। ওদের আর কী বলব।”
সবে গা এলিয়ে বসেছেন সকলে। এমন সময় ঝনঝন করে বেজে উঠল টেলিফোন। আঁতকে উঠে ডিউটি অফিসার অনন্ত ঘোষ বললেন, “আমি কিছুতেই ধরব না। কেউ এক জন ফোন ধর। কে জানে, থানা থেকে বেরিয়ে হয়তো ওরাই আবার ফোন করেছে গালাগালি দিতে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.