রাস্তা মেরামতির দাবিকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকালে দু’দলে মধ্যে মারামারি বাধল মিনাখাঁর চাপালি পঞ্চায়েতের ঘোনারবন গ্রামে। বোমা-গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। জখম হায়াত আলি মোল্লা নামে এক জনকে ভর্তি করা হয়েছে বসিরহাট হাসপাতালে। স্কুলের সামনে বোমা পড়ায় ছাত্রছাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। স্কুল ছেড়ে পালায় অনেকে। সে সময়ে পুকুরে পড়ে চোট পেয়েছে দুই ছাত্র।
এই ঘটনায় রাজনীতির রঙ লেগেছে। সিপিএমের দাবি, বহিরাগত দুষ্কৃতীদের নিয়ে গ্রামে হামলা চালানোর প্রতিবাদ করেছেন স্থানীয় মানুষ। অন্য দিকে, তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, গ্রামে ইটভাটা করার অনুমতি দিয়েছে সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত। যার জেরে রাস্তা খারাপ হয়েছে। সিপিএমের লোকজনই বহিরাগতদের নিয়ে এসে হামলা চালায়। মিনাখাঁর ওসি প্রসূন মিত্র বাহিনী নিয়ে গ্রামে আসেন। এলাকায় পুলিশি টহল চলছে।
চাপালি পঞ্চায়েত ভবনের সামনে দিয়ে গিয়েছে চৈতল রোড। তারই সংযোগকারী একটি রাস্তা চলে গিয়েছে হোসেনপুর ফেরিঘাটের দিকে। প্রায় সাত কিলোমিটার ওই রাস্তার হাল বর্তমানে খুবই খারাপ। ঘোনারবন, সুলতানপুর, চাপালি, নুরপুর, হোসেনপুর-সহ কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ এই রাস্তাটি ব্যবহার করেন। ফলে তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন। কয়েকটি স্কুলও আছে এই রাস্তার পাশে। বছর তিনেক আগে স্থানীয় পঞ্চায়েতের অনুমতি-স্বাপেক্ষে ওই রাস্তার পাশে নুরপুরে একটি ইটভাটা তৈরি হওয়ার পরে রাস্তায় ভারি লরি চলাচল বেড়েছে। রাস্তার হাল দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। প্রায়ই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটছে। অসুস্থ মানুষকে ওই রাস্তা দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও সমস্যা হচ্ছে। এ সবের জেরেই ঘোনারবন গ্রামের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দারা রাস্তায় বাঁশ পুঁতে বিক্ষোভ শুরু করেন। লরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সমস্যায় পড়েন ব্যবসায়ীরাও।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বেলা ১০টা নাগাদ ইট ব্যবসায়ীদের পক্ষে ওই বাঁশ সরিয়ে অবরোধ তুলে নিতে বলা হয়। তা থেকেই বচসা ও গণ্ডগোলের সূত্রপাত। বহিরাগত কিছু লোক গ্রামে ঢুকে বোমা-গুলি ছুড়তে শুরু করে। গ্রামবাসীদের একাংশ তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
গ্রামবাসীদের পক্ষে ইউসুফ আলি গাজি, ইউনুস আলি মোল্লারা বলেন, “ইটভাটা হওয়ায় রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ হয়েছে। পঞ্চায়েত কিংবা ভাটা মালিকদের জানিয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছে না। তারই প্রতিবাদ জানাতে বাঁশ পোঁতা হয়েছিল। হঠাৎ কিছু লোক এসে বোমা-গুলি ছুঁড়তে শুরু করল। সে সময়ে গ্রামের লোক ইট-পাটকেল নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় তারা পালিয়েছে।
চাপালি পঞ্চায়েতটি দীর্ঘ দিন ধরে সিপিএমের দখলে। পঞ্চায়েতের প্রধান বিমল সর্দার বলেন, “গ্রামের গরিব মানুষের কথা ভেবে ইটভাটা তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কথা দেওয়া সত্ত্বেও ভাটা মালিকেরা রাস্তা না সারানোয় এই বিপত্তি। ভাটা মালিকেরা যদি গ্রামের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলতে না পারেন, তবে ব্যবসার অনুমতি বাতিল করা হবে। তৃণমূল বাইরে থেকে লোকজন এনে হামলা চালানোয় মানুষ প্রতিবাদ করেছেন। তবে তৃণমূল এ ভাবে হামলা চালিয়ে ঠিক করেনি।’’ কিন্তু রাস্তা সারানোর জন্য ভাটা মালিকদের উপরে পঞ্চায়েতকে ভরসা করতে হবে কেন? এত দিনই বা রাস্তা সারানো হয়নি কেন? এ প্রশ্নের জবাবে প্রধান বলেন, “সাত কিলোমিটার রাস্তায় পিচ দেওয়ার ক্ষমতা পঞ্চায়েতের হাতে থাকে না। বর্তমান সরকারও ভরসা দিতে পারেনি।”
প্রধানের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা রুহুল আমিন মোল্লা বলেন, “বিগত বছরগুলিতে রাস্তার কোনও কাজই করেনি সিপিএম। এখন সাংসদ কোটার টাকায় রাস্তার কাজ শুরু হবে জানতে পেরে মানুষের নজর পেরাতে গণ্ডগোল পাকাচ্ছে।” সিপিএমই বাইরের লোক এনে হামলা চালিয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন তিনি। নেতারা একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপালেও আখেরে ভক্তভোগী গ্রামের সাধারণ মানুষ। আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দা ধর্না সর্দার, অঘোর সর্দারদের কথায়, “এক সময়ে আমাদের ভুল বুঝিয়ে চাষের জমিতে মাছের ভেড়ি তৈরি করা হয়েছিল। একই উপায়ে ইটভাটা করা হল। বর্ষায় মেছোভেড়ির জল উপচে বাড়ি-ঘর ভাসাচ্ছে। ভারি গাড়ি চলায় রাস্তা ভেঙে ডোবার চেহারা নিয়েছে। নেতাদের আমাদের নিয়ে কোনও হুঁশ নেই!” গ্রামের লোকের অভিযোগ, ব্যবসায় সব দদলের লোকই জড়িয়ে। এখন তারা নিজেরা ঝামেলা পাকিয়ে গ্রামের মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। |