চোখে পড়ার মতো ঈদের ভিড় দেখা যাচ্ছে বহরমপুরের রাস্তায়। জমে উঠেছে শেষ মুহূর্তের ঈদের বাজার। বিশেষ করে খাগড়া-কাদাই এলাকার বিভিন্ন পোশাকের দোকানে উপচে পড়া ভিড়। ওই ভিড় দেখে বস্ত্র ব্যবসায়ীরা উৎফুল্ল। ক্রেতা টানতে কোনও কোনও ব্যবসায়ী আবার মঙ্গলবার বাজার বন্ধের দিনেও প্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছিলেন। জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ঈদের কেনাকাটা করতে বহরমপুর শহরে ভিড় জমিয়েছেন।
কিন্তু তাতেই কি ঢেকে থাকছে মন্দার চোরা স্রোত? গ্রামের চিত্র শহরের সঙ্গে মেলে না। জলঙ্গির মনসুর শেখ জানান, মেয়ের দাবি ছিল সামান্যই-‘ঝিলিক’ চুড়িদার আর ‘মিসড কল’ চটি। কিন্তু সেটুকু দিতে পারেননি। তাঁর কথায়, “জমির পাট পড়ে থাকল জমিতেই পাটটুকু যে পচাবো সে জল কোথায়? হাতে পয়সাও নেই, এদিকে ঈদও দরজায় কড়া নাড়ছে। এ বারের বর্ষা বড্ড বেইমানি করল গো!’’ |
বৃষ্টি ভাল হয়নি। তাই গ্রামের মানুষের হাতে অন্য বার ঈদের মুখে যে কিছুটা টাকা থাকে, এ বার তা তেমন ভাবে নেই বলেই মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। মুর্শিদাবাদের চেম্বার অফ কমার্সের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদ্যোৎ দে বলেন, “কয়েকটি পোশাকের দোকানের ভিড় দেখে ঈদের বাজার মাপতে গেলে ভুল হবে। বড় অংশের মানুষের হাতে অর্থ নেই। তাই বস্ত্র ব্যবসায়ী ছাড়া অন্য ব্যবসায়ীদের বেচাকেনায় মার খাচ্ছে। সব মিলিয়ে মন্দা চলছে ব্যবসায়।” তিনি বলেন, “বৃষ্টি না হওয়ায় মুর্শিদাবাদের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি মার খেয়েছে। অনাবৃষ্টির কারণে বেশ কয়েকটি ফসল চাষিরা বুনতে পারেননি। বেশ কিছু ফসলেরও আশানুরূপ দাম পাননি তাঁরা। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে দাঁড়িয়ে চাষিদের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে।” জলঙ্গি বাজারের এক ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন,‘‘ জমি থেকে পাট ঘরে উঠে পড়লেই জানতে হবে সাধারণ মানুষের হাতে পয়সা রয়েছে। ঈদের আগে সাধারণ মানুষের সেই পয়সাতেই চাঙ্গা থাকে সীমান্তের বাজারগুলো। প্রথমদিকে বর্ষা নিয়ে আশঙ্কায় ছিলাম। তবে ভেবেছিলাম শেষের দিকে অন্তত কিছু বৃষ্টি হবে। কিন্তু কোথায় বৃষ্টি? পাট দাঁড়িয়ে থাকল মাঠে আর থমকে গেল বাজারও।” |
শ্রীপৎ সিংহ কলেজের অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান আহমেদ অবশ্য বলেন, “ঈদের বাজারে ভিড় আছে ঠিকই। কিন্তু ওই ভিড় প্রমাণ করে না মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল। তবে সংখ্যাতত্ত্বের দিক থেকে কম হলেও একশ্রেণির মানুষের হাতে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের অর্থের অভাব নেই। ঈদকে সামনে রেখে তাঁদের কেনাকাটায় কোনও খামতি নেই।” তাঁর কথায়, “পরিবার-প্রিয়জনের চাহিদা মেটাতে নতুন পোশাক কিনতে বাধ্য হচ্ছেন একশ্রেণির মানুষ, তেমনই ছেলেমেয়ের আব্দার মেটাতে না পারার যন্ত্রণাও রয়েছে অন্য পক্ষের।” লালবাগ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “ঈদ উপলক্ষে লালবাগ ও আশপাশের পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের পাশাপাশি ভগবানগোলা-লালগোলা-রানিতলা-জিয়াগঞ্জের বাসিন্দারা লালবাগের বাজারে ভিড় করেন। এক শ্রেণির মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, তাঁরা কেনাকাটা করেছেন। অন্য দিকে কৃষিজীবী মানুষ সেই তিমিরেই রয়েছেন।” কান্দির সালারের ব্যবসায়ী চন্দন কাজি বলেন, “খরার সময়ে ধানের দাম পায়নি চাষিরা। এছাড়াও বৃষ্টির খামখেয়ালিতে আউস ধান লাগানোর ভরসা পাননি তাঁরা। সেই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার অস্বাভাবিক হওয়ায় সালারের বাজারে আশানুরূপ ভিড় নেই। নিজেদের পোশাক যেখানে কিনতে পারছেন না, সেখানে জাকাতের পোশাক কেনাও তাঁদের কাছে দূর্অস্ত।” তবে আশার কথাও কিছু রয়েছে। ডোমকল মহকুমার চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি পার্বতীশঙ্কর নন্দী যেমন বলেন, “বাজারে যেটুকু গতি দেখছেন, সেটা ওই ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের সৌজন্যে। ওদের পাঠানো টাকাতেই শেষ মুহূর্তে কিছুটা হলেও বাজার জমছে এইটুকুই যা ভরসা।” |
শুক্রবার বহরমপুরের ফলের বাজারে আপেলের দর কিলো প্রতি ১৫০-১৬০ টাকা, বেদানা ১০০-১৫০, খেজুর ৬০-৭০, কিসমিস ২০০ টাকা, খোরমা ১২০-২০০, চেরি ১০০, মুসম্বি প্রতিটি ৫-১০ টাকা, আনারস ৫০-৭০ টাকা দরে বিকোচ্ছে। সেখানে সেমাইয়ের দর কিলো প্রতি ৫০-৭০ টাকা, লাচ্চা সেমাই অবশ্য ১০০-১৫০ টাকা কিলো দরে বিক্রি হচ্ছে। |