মেদিনীপুরে পৃথক সভায় বৈশ্বানর
ঝাড়গ্রামে পদযাত্রা, ‘সুর নরম’ শঙ্কুদেবের
‘দেখে নেব’ গোছের হুঁশিয়ারি নয়, উল্টে বাম-মনস্ক শিক্ষক-অধ্যাপকদের ‘রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা’ করার জন্য সংগঠনের কর্মীদের পরামর্শ দিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ‘বিশৃঙ্খলায়’ জড়িয়ে যাতে ‘ভাবমূর্তি’ ক্ষুণ্ণ না হয়, সে জন্য কিছু দিন আগেই টিএমসিপিকে ‘সতর্ক’ করেছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সম্ভবত তার জেরেই ‘সুর নরম’ করলেন শঙ্কু। শুক্রবার দুপুরে ঝাড়গ্রাম শহরের পাঁচমাথা মোড়ে পথসভায় শঙ্কু বলেন, “সংবাদমাধ্যমের একাংশ বলছে, আমরা নাকি অধ্যাপকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছি? এটা ঠিক নয়। কলেজে এসে অধ্যাপক যদি অধ্যাপনার বদলে সিপিএম করেন, বা ‘কমরেড’ সুলভ আচরণ করেন, তাহলে আমরা রাজনৈতিক ভাবেই জবাব দিতে তৈরি আছি।”
ঝাড়গ্রামে শঙ্কুদেব পণ্ডা।
আগামী ২৮ অগস্ট টিএমসিপি’র প্রতিষ্ঠা দিবসে কলকাতায় গাঁধী মূর্তির পাদদেশে ছাত্র সমাবেশ হবে। সেখানে মুখ্য বক্তা থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই প্রস্তুতিতে এ দিন ঝাড়গ্রাম শহরে পদযাত্রা ও পথসভা করে টিএমসিপি। নেতৃত্ব দেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব। এর আগে একাধিক কর্মসূচিতে ‘আক্রমণাত্মক’ ভাবেই সিপিএম-সমর্থক শিক্ষক, অধ্যাপকদের সমালোচনা করেছেন শঙ্কু। রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ দিন অবশ্য শঙ্কুর সেই ‘তেজ’ দেখা যায়নি। বরং খানিকটা বিশ্লেষণাত্মক ভঙ্গিতে তিনি বলেন, “মানুষের একাধিক চরিত্র রয়েছে। সিপিএমের কোনও জোনাল-নেতা অধ্যাপক হতে পারেন। কিন্তু কলেজে গিয়ে তিনি যদি রাজনীতি করেন তা কখনই বরদাস্ত করা হবে না। অধ্যাপক কলেজে এসে নিজের দায়িত্ব পালন করুন, আমরাও তাঁর প্রতি সম্ভ্রম দেখাব।” ‘মাওবাদী-সিপিএম আঁতাত’-এরও অভিযোগ তোলেন শঙ্কু। তিনি বলেন, “খুনি ও সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী সিপিএম তিন দশক ধরে বাংলার সর্বনাশ করেছে। ‘উন্নয়ন বিরোধী’ ও ‘খুনি’ মাওবাদীরা তাদের দোসর। পরিবর্তনের রাজ্যে জঙ্গলমহলে শান্তি বিরাজ করছে। রাজ্যে এখন যেখানেই সিপিএম মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে, সেই সব জায়গায় সিপিএমকে গর্তে ঢুকিয়ে দিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জেনারেশন নেক্সট্ টিমসিপি’ তৈরি আছে।”
২৮ অগস্টের প্রস্তুতি হিসেবে এ দিন মেদিনীপুরেও একটি পৃথক সভা হয়। সেখানে মুখ্য বক্তা ছিলেন রাজ্য টিএমসিপি’র চেয়ারম্যান বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, বৈশ্বানরই আগে সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ছিলেন। পরে তাঁকে চেয়ারম্যান করে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় শঙ্কুকে। টিএমসিপি সূত্রের খবর, তার পর থেকেই শঙ্কু-বৈশ্বানর ‘দ্বৈরথ’ চলছে। তারই পরিণতিতে একই জেলায় একই দিনে ২৮ অগস্টের দু’টি প্রস্তুতি সভা হল বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত। শঙ্কুর সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের দুই রাজ্য সম্পাদক সুজিত শ্যাম ও অম্লান মণ্ডল, টিএমসিপি’র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা চেয়ারম্যান রমাপ্রসাদ গিরি, জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ, গোপীবল্লভপুরে বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো প্রমুখ। অন্য দিকে, বৈশ্বানরের সভায় দেখা গিয়েছে টিমসিপি’র জেলা সভাপতি লোকেশ কর, মেদিনীপুর শহর সভাপতি বুদ্ধ মণ্ডল, শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো প্রমুখ।
মেদিনীপুরে বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়।
শঙ্কুর সঙ্গে দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ এড়িয়ে প্রসঙ্গে বৈশ্বানর বলেন, “মেদিনীপুরে সংগঠনের অফিসিয়াল মিটিং ছিল। ঝাড়গ্রামেও পদযাত্রা হয়েছে বলে শুনেছি। আমরা তো সব জায়গাতেই যাচ্ছি। এতে অসুবিধার কী আছে?” অন্য দিকে, ‘প্রাক্তন সাংবাদিক’ শঙ্কুর মতে, “সংবাদমাধ্যমের একাংশ আমাদের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছে। ওরা যত বিভেদ তৈরির চেষ্টা করবে, সংগঠনগত ভাবে আমরা আরও শক্তিশালী ও একজোট হব।” এ দিন বিকেলে মেদিনীপুরে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবতীর সঙ্গে দেখা করে জঙ্গলমহলের কলেজ গুলিতে আসন সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানান শঙ্কু। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রণজিৎ ধর শিক্ষাঙ্গণে বাম রাজনীতি করছেন বলে উপাচার্যের কাছে অভিযোগও জানান তিনি। পরে শঙ্কু বলেন, “বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সিপিএম কর্মীর মতো আচরণ করছেন। ঠিকাদারদের সঙ্গে একাধিক অনৈতিক কারবারেও তিনি জড়িত। বিষয়টি উপাচার্যকে জানিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ দাবি করেছি।”

—নিজস্ব চিত্র।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.