দিনরাত সাপের ভয়ে থানায় তটস্থ পুলিশ
কেউ কার্বলিক অ্যাসিড ছড়ানোর কাজের দেখভালে ব্যস্ত। কেউ আবার ঘরে ঘরে ঘুরে বিভিন্ন ফাঁকফোকর বন্ধের তদারকি করছেন। দিনের বেলা প্রত্যেকে মেঝের দিকে তাকিয়ে হাঁটাচলা করছেন। সন্ধে নামলেই লাঠি, বন্দুক, রিভলভারের সঙ্গে টর্চ নিচ্ছেন সকলেই। বড়বাবু থেকে সাধারণ হাবিলদার সকলেই সমান তটস্থ। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক হয়ে পড়েছে যে গোখরোর আতঙ্কে দিশেহারা গোটা থানা। গত কয়েক দিন ধরে এমন অবস্থাই চলছে কোচবিহারের বক্সিরহাট থানা চত্বরে। বন দফতর থেকে সর্প বিশেষজ্ঞ দফায় দফায় ডাক পড়ছে সবার। সবমিলিয়ে স্বাধীনতা দিবস পরবর্তী নাশকতার আশঙ্কা এড়াতে নজরদারি বাড়ানোর ব্যস্ততার মধ্যেও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে রীতিমতো দুঃশ্চিন্তায় খোদ পুলিশকর্মীরা। ওই ‘সর্পাতঙ্কের’ খবর পৌঁছেছে জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তাদের কাছে। যদিও সংবাদমাধ্যমের কাছে ওই ব্যাপারে বিশদে কিছু বলতে চাননি কেউ। কোচবিহারের পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “বর্ষার সময় সাপের উপদ্রব হতেই পারে। তা নিয়ে এত দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তা ছাড়া আমার বাংলো চত্বরেও তো মাঝে মধ্যে সাপ ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়।”
বক্সিরহাট থানায় সাপের আতঙ্ক।
পুলিশ সুপার যাই বলুন সাপের আতঙ্ক কতটা গাড় হয়েছে তা স্পষ্ট সর্প বিশেষজ্ঞ মিন্টু চৌধুরীর সঙ্গে ওই থানার কর্তাদের যোগাযোগেই। পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বক্সিরহাট থানার ওসি বিশ্বাশ্রয় সরকার ফোনে মিন্টুবাবুকে গোটা ঘটনা জানিয়েছেন। মিন্টুবাবু শনিবার সাপের খোঁজে বক্সিরহাট থানায় যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এদিন মোবাইলে মিন্টুবাবু বলেন, “বক্সিরহাট থানার তরফে ওসি যোগাযোগ করেছিলেন। ওঁদের সাপের আতঙ্ক কাটাতে শনিবার ওখানে যাব জানিয়েছি। সরেজমিনে সব কিছু না দেখে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না।” পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার রাতে। পরদিন স্বাধীনতা দিবসে নাশকতার আশঙ্কা এড়াতে দিনভর কাজে ব্যস্ত ছিলেন অসম লাগোয়া ওই থানার পুলিশ কর্তারা। রাতেও নিরাপত্তার তদারকি করছিলেন ওই থানার ওসি বিশ্বাশ্রয় সরকার ও তাঁর সহকর্মী এক সাব ইন্সপেক্টর বাঁধন রায়। টিন, প্লাইউডের বেড়া আর পাকা মেঝের ওসি’র চেম্বারে ওই আলোচনার সময়েই আচমকা মনোসংযোগে বিঘ্ন ঘটায় ফোঁস ফোঁস শব্দ। চোখ ঘোরাতেই ওসি’র চক্ষুস্থির। তাঁর বসার চেয়ার থেকে মেরেকেটে একহাত দূরে মাথা তুলে রয়েছে বড়সড় গোখরো। কোনওমতে দু’জনে চেয়ার ছেড়ে দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে যান। খোদ বড়বাবু ওভাবে দৌড়ে বাইরে বেরনোয় হৈচৈ পড়ে যায় গোটা থানায়। তার ওপর স্বাধীনতা দিবসের আগের রাত বলে কথা। বোমাতঙ্ক, জঙ্গি নাশকতা নানা রকম জল্পনার মধ্যে থানায় ছুটে যান ইতিউতি ব্যস্ত অন্য পুলিশকর্মীরাও। ধোঁয়াশা কাটে বড়বাবু ও তাঁর সঙ্গীর সম্বিত ফিরতে। পলকে সাপটি ওই ঘরের মেঝের একটি গর্তে ঢুকে পড়ে। রাতেই স্থানীয় সাপুড়েদের খবর দেওয়া হয়। ফোন করা হয় বন দফতরেও। বুধবার দিনভর তল্লাশ চালিয়েও গোখরোর খোঁজ মেলে। এডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের কর্মীরা চেষ্টা করেছেন। আপাতত থানার সমস্ত ফাঁকফোকর বন্ধ করার পাশাপাশি থানা চত্বরে কার্বলিক অ্যাসিড ছড়ানোর মত কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।” বৃহস্পতিবারেও গোটা থানায় তল্লাশি চালান সাপুড়ে। তাঁরাও সাপের সন্ধান পাননি। আতঙ্ক কাটাতে থানা থেকে যোগাযোগ করা হয় সর্প বিশেষজ্ঞ মিন্টু চৌধুরীর সঙ্গে। ওই থানার এক জন আধিকারিক বলেন, “গোখরো বিষধর সাপ। ফলে আমাদের আতঙ্ক হওয়া স্বাভাবিক। তা ছাড়া থানার ভেতরে অজস্র ফোকর রয়েছে। যে ভাবে ওই রাতে সাপটি একটি গর্তে ঢুকে গিয়েছে তাতে আরও সাপ থাকতে পারে। এখন ভয়ে ভয়ে কাজ করতে হচ্ছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.