ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ হইতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষদের স্বভূমির নিরাপত্তায় ফিরিবার তাড়না স্রোতের আকার ধারণ করিয়াছে। অসম, মিজোরাম, মেঘালয়, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ ও নাগাল্যান্ডের হাজার-হাজার ছাত্রছাত্রী, চাকুরিজীবী পুণে, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, মুম্বই প্রভৃতি স্টেশন হইতে নিজ-নিজ রাজ্যের ট্রেন ধরিতেছেন। গুয়াহাটি স্টেশনে এখন তাঁহাদের উদ্বিগ্ন মা-বাবা, অভিভাবকদের ভিড়। মুসলিমদের আক্রমণ এবং আক্রমণের হুমকিই উত্তর-পুবের মানুষদের বিপন্নতার কারণ। অসমের স্বশাসিত বড়োল্যান্ডে বড়ো জনজাতি বনাম বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রতিক্রিয়া রূপেই অবশিষ্ট ভারতের মুসলিম জনসমাজের একাংশের মনে উত্তর-পূর্বের মঙ্গোলয়েড চেহারার মানুষদের প্রতি তীব্র বিরূপতা তৈয়ার হয়। কায়েমি স্বার্থান্বেষীরা এই বিরূপতাকে কাজে লাগাইয়া নাগা, মিজো, অসমিয়া, মণিপুরি ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর উপর হামলা চালায়। সন্ত্রস্ত জনজাতির মানুষ তাই দলে-দলে নিজ রাজ্যের উদ্দেশে পাড়ি জমাইয়াছেন।
প্রশ্ন উঠিতেছে, ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মানুষ কি তবে নিজ রাজ্যের ভৌগোলিক চৌহদ্দির বাহিরে নিরাপদ নহেন? প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হইতে শুরু করিয়া বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও উত্তর-পূর্বের জনজাতিদের আশ্বস্ত করিতে বিবৃতি দিতেছেন। কিন্তু ওই বিবৃতিতে ভরসা নাই। কেননা যে-দুর্বৃত্তরা জনজাতির মানুষদের হুমকি দিয়াছে, সন্ত্রস্ত কিংবা আক্রমণ করিয়াছে, তাহাদের কঠোর, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার কোনও ঐতিহ্য এ দেশে গড়িয়া ওঠে নাই। এই তোষণনীতির কারণেই বাংলাদেশ হইতে লক্ষ লক্ষ বেআইনি অনুপ্রবেশকারী উত্তর-পুবের সীমান্তবর্তী সব কয়টি রাজ্যের জনসমাজে লীন হইয়া স্থানীয় জনবিন্যাসের কাঠামো পরিবর্তিত করিয়া চলিয়াছে।
একটা ভাল ব্যাপার ইহাই যে, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মুসলিমরা জনজাতির পলাতক ছেলেমেয়েদের আশ্বস্ত করিতে স্টেশনে স্টেশনে হাজির। বলিতেছেন, তাহারা যেন চলিয়া না যায়। এই শুভবুদ্ধি জাগ্রত হইতে সম্প্রদায়ের এত বিলম্ব হয় কেন? কেনই বা এত অল্পসংখ্যক ব্যক্তি সম্প্রদায়ের তরফে অনুশোচনা প্রকাশে আগাইয়া আসেন? কায়েমি স্বার্থবাদীরা যখন গুজব ছড়াইয়া, এম এম এস মারফত মিথ্যা অপপ্রচার চালাইয়া সম্প্রদায়ের অশিক্ষিত জনসমুদায়কে প্ররোচিত, উত্তেজিত, মারমুখী করিয়া তুলিতেছিল, তখন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন এই মানুষগুলি কোথায় ছিলেন? তাঁহারা কেন সমান্তরাল সংগঠন গড়িয়া তখনই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়ান নাই? শুভবুদ্ধিকে তাকে তুলিয়া রাখা কিন্তু কোনও কাজের কথা নয়। অনেক দাঙ্গা শুরুই হইতে পারে না, যদি দাঙ্গাকারী সম্প্রদায়ের শুভবুদ্ধিসম্পন্নরা আগাম সতর্ক থাকেন, নজরদারি চালান এবং দুর্বৃত্তদের সমাজ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের হাতে তুলিয়া দেন। প্রশাসনকেও যথেষ্ট ঢিলেঢালা মনে হইয়াছে। প্রধানমন্ত্রী শান্তিরক্ষার কথা বলিতেছেন। শুধু কথায় কাজের কাজ হইবে না। |