বাম জমানায় মদন মিত্র ছিলেন বিরোধী পক্ষে। আট বছর আগে সরকারি বাসের ডিপোয় হাঙ্গামা বাধানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এখন তিনিই পরিবহণমন্ত্রী। এত দিনে সেই ডিপো-বিক্ষোভের মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন মদনবাবু। শুক্রবার তাঁর সঙ্গেই আত্মসমর্পণ করেন শাসক দল তৃণমূলের আর এক বিধায়ক সুজিত বসু। দু’জনেই জামিনে মুক্তি পান।
পুলিশি সূত্রের খবর, ২০০৪ সালে তৃণমূলের কিছু কর্মী-সমর্থক উল্টোডাঙায় হাডকো মোড়ের কাছে সরকারি বাস ডিপোয় হামলা করেন। ভাঙচুর চালানো হয় ওই জমিতে থাকা পরিবহণ সংস্থার অফিসে। সেই ঘটনার পরে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে মদনবাবু ও সুজিতবাবুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে মানিকতলা থানার পুলিশ। চার্জশিট দাখিল করার পরে এত দিন ওই দুই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়নি।
সে-দিন বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল কেন? প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বাম জমানায় হাডকো মোড়ের কাছে সরকারি বাস ডিপোর জমি লিজ দেওয়া নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। সেই ‘দুর্নীতি’র বিরুদ্ধেই ওই দুই তৃণমূল নেতার নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়েছিলেন সমর্থকেরা। মদনবাবু বলেন, “ওই আমলে কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি শাসক দলের ঘনিষ্ঠ লোকেদের পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরিবহণ নিগমগুলিতে দরপত্র নিয়ে দুর্নীতিরও কাগজপত্র রয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, তৎকালীন বাম সরকার প্রতিহিংসা থেকেই তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ঠুকে দিয়েছিল। বিধানগরের বিধায়ক সুজিতবাবু বলেন, “দুর্নীতির প্রতিবাদ করতেই আন্দোলনে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে এই সব মামলা করা হয়।” তিনি ভাঙচুরে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কি না, সেই বিষয়ে অবশ্য সরাসরি কিছু বলতে চাননি ওই বিধায়ক।
কিন্তু বাম আমলে পরিবহণ নিগমের দুর্নীতির যে-অভিযোগ উঠেছিল, বর্তমান পরিবহণমন্ত্রী তা নিয়ে কিছু ভাবছেন কী? মদনবাবু জানান, পরিবহণ নিগমে দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত হবে। সেই সঙ্গে পড়ে থাকা জমিগুলিকে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনার কথাও শুনিয়েছেন তিনি। যদিও কী পদ্ধতিতে ওই সব জমি ব্যবহার করা হবে, সেই বিষয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলেনি। মন্ত্রীর কথায়, “কী ভাবে জমি ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে প্রথমে মন্ত্রিগোষ্ঠীতে আলোচনা হবে। পরে সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রিসভা।” এ দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ আইনজীবীদের নিয়ে মদনবাবু ও সুজিতবাবু শিয়ালদহের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অরুণ রাইয়ের এজলাসে হাজির হন। ‘হাই-প্রোফাইল’ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের আত্মসমর্পণ দেখতে আদালতে হাজির হয়েছিলেন অন্য আইনজীবীরাও। সওয়াল-জবাব চলাকালীন দুই নেতা কোর্ট লক-আপের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁদের আইনজীবীরা জামিনের আর্জি জানান। সরকার পক্ষের আইনজীবী অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বিচারককে বলেন, কেন জামিন দেওয়া হবে, অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরা সেটা ব্যাখ্যা করেননি। মদনবাবুর আইনজীবী মলয় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুজিতবাবুর আইনজীবী অসীম কুমার তখন আদালতকে জানান, তাঁদের মক্কেলরা সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি। জামিন দেওয়া হলে তাঁদের পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। তার পরেই মাথাপিছু ৫০০ টাকার ব্যক্তিগত জামিনে দু’জনকে মুক্তি দেন বিচারক। শুনানি শেষ হতেই দুই নেতা আদালত-চত্বর ছেড়ে চলে যান। |