এত দিন ধরে শিল্পীর চোখ খুঁজেছে তাঁকেই। কিন্তু লাল চক দিয়ে আঁকা বয়সকালের এক স্কেচ ছাড়া পাওয়া যায়নি আর কিছুই। অদেখা লিওনার্দো দা ভিঞ্চিরই কি সন্ধান মিলল এ বার? তা-ও এক বার নয়, তাঁর নিজের আদল শিল্পী নাকি ব্যবহার করে গিয়েছেন দু’-দু’বার। এবং সেটাও আবার একটাই ছবিতে। এমনটাই দাবি, শিল্প-গবেষক রস কিংয়ের। আর এই রহস্যের কিনারা তিনি করেছেন মিলানের সান্টা মারিয়া দেলা গ্রাৎসির দেওয়াল জুড়ে থাকা ‘মুরাল’ ‘দ্য লাস্ট সাপার’ থেকে। কাগজে নয়, দেওয়ালের গায়ে আঁকা বলেই একে মুরাল বলে। রসের কথায়, সব চেয়ে আশ্চর্যের এটাই যে দীর্ঘদিন ধরে দা ভিঞ্চির নানা আঁকার মধ্যে তাঁকে খোঁজার চেষ্টা হলেও ‘দ্য লাস্ট সাপার’ সেই তালিকায় ছিল না কখনওই। |
কথিত আছে, ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগে ১২ জন শিষ্যের সঙ্গে শেষ বার এক সঙ্গে নৈশভোজ সারেন যীশু। শিষ্যদেরই এক জন যে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চলেছেন, সে কথা তিনি বলেওছিলেন এই ‘শেষ ভোজে’। ‘লাস্ট সাপার’-এর এই চরিত্রদের নিয়েই ইউরোপীয় রেনেসাঁসের যুগে লিওনার্দো দা ভিঞ্চি আঁকেন ‘দ্য লাস্ট সাপার’। রস কিংয়ের দাবি, বারো শিষ্যের মধ্যে টমাস ও ‘জেমস দ্য লেসার’-এর চেহারার ভিতরেই লুকিয়ে আছেন সত্যিকারের লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। নিজের দাবির সমর্থনে বেশ কিছু ঐতিহাসিক প্রমাণও হাজির করেছেন রস। ১৪৯০ এর দশকে যখন দা ভিঞ্চি ছবিটি আঁকছেন, সে সময়ই তাঁর বন্ধু গাসপারো ভিসকন্তি এক কবিতা লেখেন। তাতে নিজের ছবির চরিত্রে নিজেকেই ব্যবহার করায় নাম না করে সমালোচনা করা হয়েছে এক শিল্পীর। রস কিংয়ের দাবি, ওই শিল্পী আসলে দা ভিঞ্চিই। লাল চকের যে স্কেচটিকেই এত দিন লিওনার্দোর আত্মপ্রতিকৃতি বলে মনে করা হয়ে এসেছে, তার সঙ্গেও নাকি স্পষ্টতই মিল আছে দ্য লাস্ট সাপারের ওই দুই চরিত্রের। এমনকী, তাদের মধ্যে প্রকট শিল্পীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও। ছবিতে দেখা যায়, নিজের একটা আঙ্গুল উঁচু করে রয়েছেন টমাস। এই ভঙ্গি ছিল দা ভিঞ্চির নিজস্ব ‘ট্রেড মার্ক’। কোনও কিছুই মানার আগে প্রশ্ন করা ছিল তাঁর স্বভাবজাত। আগেও নানা কারণে বিতর্ক দানা বেঁধেছে ‘দ্য লাস্ট সাপার’কে নিয়ে। রসের গবেষণা ফের উস্কে দিল বিতর্ক। |