বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গত কয়েক দিন ধরেই চলছিল বিক্ষোভ। দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিম ভাগের রুস্টেনবার্গের মারিকানার লোনমিন প্ল্যাটিনাম খনিতে। সেই বিক্ষোভেই গত কাল নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। তাতে নিহত হয়েছেন ৩৬ জন খনি শ্রমিক। আহত কমপক্ষে ৭৮ জন।
আর এই ঘটনাই প্রশ্ন তুলেছে, আবার কি সেই বর্ণবিদ্বেষের যুগ ফিরে আসছে এ দেশে? ১৯৬০ আর ৭০-এর দশকের সময়টায় দেশে নিরস্ত্র জনসমাবেশের উপর গুলি চালানো ছিল রোজকার ঘটনা। মারিকানায় কালকের ঘটনা কিন্তু ১৯৬১ সালের মার্চ মাসের একটা দিনের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। বর্ণবৈষম্য আইনের প্রতিবাদে শার্পভিলে সে দিন জড়ো হয়েছিলেন শয়ে শয়ে বিক্ষোভকারী। সে দিনও সেই বিক্ষোভে গুলি চালিয়েছিল সাদা চামড়ার পুলিশ। মৃত্যু হয়েছিল ৬৯ জনের। যদিও শার্পভিলের সঙ্গে মারিকানার একটা পার্থক্য আছে। সাদা নয়, মারিকানায় কাল বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালিয়েছে কালো চামড়ার পুলিশই। |
লোনমিন খনিতে গত সপ্তাহ থেকেই শ্রমিক অশান্তি চলছে। তিন দফা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কাজ বন্ধ করে চলছিল বিক্ষোভ। মূলত দুই শ্রমিক সংগঠনই এত দিন ধরে তাতে ইন্ধন জোগাচ্ছিল।
মালিক পক্ষ আলোচনার পরে কাজ শুরু করার জন্য চাপ দিলেও শ্রমিক সংগঠনগুলি তাতে বাধা দিয়ে আসছিল। ৩৭ বছরের ডেভিড নকোলিসি লোনমিনে ড্রিল অপারেটরের কাজ করেন। তাঁর কথায়, “খনিগর্ভে দিনের পর দিন কাজ করার জন্য একটা ভদ্রস্থ বেতনের দাবি করেছিলাম আমরা। আর সেই জন্যই আমাদের এমন ভাবে মেরে ফেলা হল।” প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, লোনমিন খনিতে কাল টানা দু’মিনিট ধরে গুলি চালানোর আওয়াজ শোনা গিয়েছে। পুলিশ এসেওছিল বুলেটপ্রুফ পোশাক পরে। ঘটনার খবর পেয়েই নিজের মোজাম্বিক সফর কাটছাঁট করে লোনমিন খনি পরিদর্শনের যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকোব জুমা।
যদিও রুস্টেনবার্গের পুলিশ কমিশনার রিয়াহ ফিয়েগা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আত্মরক্ষার্থেই কাল গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। তাঁর কথায়, “কাঁদানে গ্যাস আর জল কামান দিয়ে প্রথমে বিক্ষোভকারীদের হঠানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিছু মানুষ তাতে পিছু হটেও যান। কিন্তু একটা দল হঠাৎই অস্ত্র হাতে পুলিশের দিকে তেড়ে আসে। এক প্রকার বাধ্য হয়ে নিজেদের বাঁচাতেই গুলি ছোড়ে পুলিশ।” পুলিশ কমিশনারের আরও দাবি, বিক্ষোভকারীদের এই সমাবেশ আদৌ নিরস্ত্র ছিল না। তির, মুগুর, বড় ছুরি। নানা ধরনের অস্ত্র নিয়ে রীতিমতো তৈরি হয়েই এসেছিলেন প্রায় তিন হাজার খনি শ্রমিক। তাঁরা যে আত্মরক্ষার্থেই গুলি ছুড়েছেন, তার প্রমাণ দেখানোর জন্য সশস্ত্র বিক্ষোভের বেশ কিছু ছবিও জোগাড় করেছেন পুলিশের পদস্থ কর্তারা। এমনকী পুলিশ দাবি করেছে, গত সোমবার তাদেরই এক পদস্থ অফিসারের থেকে খোয়া যাওয়া একটি আগ্নেয়াস্ত্র বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে কাল উদ্ধার হয়েছে।
তবে পুলিশ নিজেদের গা বাঁচাতে যতই সাফাই দিক, গুলিচালনার ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই গোটা দেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। |