|
|
|
|
শিলাদিত্য-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি রাহুল সিংহের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম ও কলকাতা |
শিলাদিত্য-কাণ্ডে তৃণমূলের জোটসঙ্গী কংগ্রেস ও বিরোধী বামেরা সরব হয়েছিল আগেই। এ বার তাদের ‘হাত ধরল’ বিজেপি। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম উপ-সংশোধনাগারে গিয়ে বেলপাহাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় ‘গোলমাল পাকানোয়’ ধৃত শিলাদিত্য চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। আশ্বাস দেন, বিজেপি তাঁর পাশে রয়েছে। পরে শিলাদিত্যর বাড়ি গিয়ে তাঁর পরিজনদের সঙ্গেও কথা বলেন রাহুলবাবু।
শিলাদিত্যর গ্রেফতার নিয়ে ক’দিন ধরেই রাজ্য রাজনীতিতে চর্চা চলছে। কংগ্রেস ও বামেদের মতে, এই ঘটনা ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’ খর্ব করার নজির। এ বার বিজেপির কণ্ঠেও সেই এক সুর। তবে এ ভাবে এ রাজ্যে কোনও বিধায়কহীন বিজেপি নিজেদের ‘প্রাসঙ্গিক’ করে তুলতে চাইছে বলে দলেরই একাংশের ব্যাখ্যা।
এ দিন সকাল সওয়া এগারোটা নাগাদ ঝাড়গ্রাম উপ-সংশোধনাগারে আসেন রাহুলবাবু। জেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট কন্ট্রোলারের উপস্থিতিতে শিলাদিত্যর সঙ্গে মিনিট পনেরো কথা বলেন তিনি। |
|
শিলাদিত্যের স্ত্রী-মায়ের সঙ্গে রাহুল সিংহ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ |
জেল থেকে বেরিয়ে রাহুলবাবু বলেন, “যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী শিলাদিত্যকে মাওবাদী তকমা দিয়েছেন, পুলিশ-প্রশাসনও তাই মুখ্যমন্ত্রীর মুখরক্ষা করতে প্রতিহিংসামূলক আচরণ করেছে। শিলাদিত্য মাওবাদী কি না, তা সিবিআই তদন্ত করে দেখা হোক। সভার দিন তাঁকে ধরে ছেড়ে দেওয়ার পরেও ফের কেন শিলাদিত্যকে গ্রেফতার করা হল, সেটাও তদন্ত করে দেখা হোক। বিষয়টি নিয়ে আমরা মানবাধিকার কমিশনে যাব।”
গত ৮ অগস্ট বেলপাহাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় বিশৃঙ্খলা তৈরির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বিনপুরের বাসিন্দা শিলাদিত্যকে। এখন তিনি জেলহাজতে রয়েছেন। ওই দিন সভা চলাকালীন গলা চড়িয়ে চাষবাসের সমস্যার কথা বলছিলেন এই যুবক। তাঁর ‘আচরণে’ রীতিমতো ‘ক্ষুব্ধ’ হন মমতা। বক্তৃতার মধ্যেই ‘মাওবাদীরা সভায় লোক ঢুকিয়েছে’ বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। শিলাদিত্যকে ‘ধরার’ নির্দেশও দেন। এ দিন রাহুলবাবু বলেন, “শিলাদিত্য আমাকে জানিয়েছেন, সে দিন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ তাঁকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়। কিন্তু ১০ অগস্ট চাষের কাজ করার সময় গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। শিলাদিত্য ও তাঁর পরিবার তৃণমূল সমর্থক। যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ায় বাসের খালাসির কাজ ছেড়ে এখন তিনি চাষবাস করেন। সারের মূল্যবৃদ্ধি ও চাষবাসের সমস্যা নিয়েই সে দিন কথা বলছিলেন তিনি।”
দুপুরে বিনপুরের নয়াগ্রামে শিলাদিত্যের বাড়িতে গিয়ে মা সন্ধ্যাদেবী, স্ত্রী খুকুমণি ও অন্য পরিজনদের সঙ্গে কথা বলেন রাহুলবাবু। সন্ধ্যাদেবী বলেন, “আমার ছেলে কোনওদিনই ঝামেলা-ঝঞ্ধাটে থাকে না। সংসারে ও-ই একমাত্র রোজগেরে। সে দিন ‘দিদি’কে (মুখ্যমন্ত্রী) দেখতে গিয়েছিল। আবেগে হয়তো কষ্টের কথা বলছে।” স্থানীয় বাসিন্দারাও রাহুলবাবুকে জানান, শিলাদিত্য মাওবাদী নন, তিনি দরিদ্র কৃষক।
শিলাদিত্যের মুক্তির দাবিতে বুধবার, স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা নিয়ে মৌন মিছিল করেন বিনপুরের বেশ কিছু বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার এলাকাবাসীর গণ-স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। শতাধিক স্বাক্ষর সংবলিত ওই স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, “জঙ্গলমহলের মানুষ আপনাকে (মমতা) দেখেই পরিবর্তন-পথে সমর্থন জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরিবর্তনের ধরন দেখে আমরা আতঙ্কিত, উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত।”
|
|
|
|
|
|