তাপবিদ্যুতের পাশাপাশি রাজ্যে এ বার পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুৎও উৎপাদন করবে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)। সেচের খালের উপরে পর-পর সৌর প্যানেল বসিয়ে তা থেকে উৎপাদন করা হবে বিদ্যুৎ।
গুজরাত ও রাজস্থানে এ ভাবে খালের উপরে সৌর প্যানেল লাগিয়ে সৌরবিদ্যুৎ তৈরির প্রক্রিয়া সম্প্রতি শুরু হয়েছে। এ বার তার সঙ্গে জুড়তে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের নামও। ডিভিসি-র আশা, ওই প্রকল্প থেকে ১৫ মেগাওয়াটের মতো সৌরবিদ্যুৎ তৈরি করা যাবে। প্রাথমিক ভাবে যা সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাঁকুড়ায় ডিভিসি-র সেচের খালের উপরে সৌর প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।
সেচের খালের উপরে এই ধরনের সৌর প্যানেল লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করায় দু’টি সুবিধা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ডিভিসি-কর্তারা। তাঁরা বলছেন, প্রকল্পের জন্য কোথাও জমি কেনা বা অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না। ফলে জমি সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা প্রথম থেকেই আর থাকছে না। পাশাপাশি, খালের উপরে সৌর প্যানেলগুলি পর-পর বসানো থাকলে বছরে কয়েক লক্ষ গ্যালন জলও বাঁচানো যাবে। কারণ, সৌর প্যানেলে খাল থাকায় বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া কম হবে। ডিভিসি-র চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেন জানান, এই প্রকল্পটিতে ১২০ কোটি টাকার মতো খরচ হবে। প্রকল্প খরচের কিছু অর্থ সংস্থা নিজে বিনিয়োগ করবে, বাকি টাকা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া হবে। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “উৎপাদিত সৌরবিদ্যুতের পুরোটাই ডিভিসি-র নিজস্ব চাহিদা মেটাতেই খরচ করা হবে।” |
গুজরাত, রাজস্থানে এখন খালের জমি ব্যবহার করে একই প্রযুক্তিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার ব্যাপারে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদী সরকার নর্মদা সেচ খালের উপরে একটি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। ওই খালের উপরে প্রায় আধ কিলোমিটার জুড়ে সোলার প্যানেল বসিয়ে ইতিমধ্যেই সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। যা আশপাশের গ্রামগুলিকে সরবরাহ করা হচ্ছে। রাজস্থান সরকারও এই একই পদ্ধতিতে খালের জমি ব্যবহার করে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নতুন বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা নিয়েছে।
তবে গুজরাত ও রাজস্থানের ক্ষেত্রে এই প্রকল্প ১০০ শতাংশ কার্যকর হলেও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। কারণ, ওই দুই পশ্চিমী রাজ্যে সারা বছর তীব্র সূর্যালোক থাকে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে বর্ষার চার মাস দিনের বেশির ভাগ সময়েই আকাশ থাকে মেঘে ঢাকা। আবার শীতে কুয়াশা কাটতে সময় নেয় বেশি। তাই সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনও কম হয়।
তবে ডিভিসি-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি অনুযায়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি এখন পরিবেশবান্ধব অপ্রচলিত শক্তি উৎপাদনও করতে হবে। তাই রাজ্যের অন্যতম শুখা জেলা বাঁকুড়াতেই এই প্রকল্প গড়ার কথা ভাবা হচ্ছে। বাঁকুড়ার কোন অঞ্চলে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি গড়ে তোলা যায়, তার জন্য প্রাথমিক সমীক্ষার কাজও শুরু হয়েছে। আর প্রকল্পের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্সকে। খুব শীঘ্রই সংস্থাটি তাদের রিপোর্ট ডিভিসি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবে বলে জানানো হয়েছে। |