সম্পাদকীয় ২...
সংসদের গুরুত্বহ্রাস
স্বাধীনতার পর সাড়ে ছয় দশক কাটিয়া গেল। এই কালপর্বে ভারতীয় গণতন্ত্রের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান আইনসভা তথা পার্লামেন্ট কি উত্তরোত্তর আরও গুরুত্বপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে? অন্তত তেমন হওয়াই প্রত্যাশিত ছিল। আইনসভাই সেই মঞ্চ, যেখানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচকমণ্ডলীর স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় লইয়া আন্দোলিত হইবেন, তর্ক-বিতর্ক চালাইবেন, পরামর্শ দিবেন এবং প্রয়োজনে সরকারকে আইন প্রণয়নে বা পরিমার্জনে বাধ্য করিবেন। পরিষদীয় গণতন্ত্রে আইনসভার সার্বভৌমত্বও এই কারণেই এত জরুরি। জনসাধারণের আশা-আকাঙ্ক্ষা, অভাব-অভিযোগ, দাবি-দাওয়া লইয়া পার্লামেন্টই তো মুখর হইবে। কিন্তু পার্লামেন্টের অধিবেশন যদি ক্রমশ সঙ্কুচিত হইতে থাকে, সেই সঙ্কুচিত সময়ও যদি জনপ্রতিনিধিদের পারস্পরিক কাজিয়ায়, বয়কটে, ওয়াক-আউটে অপচয়িত হয়, তবে নির্বাচকমণ্ডলীর প্রতি সুবিচার করা হয় না। বর্তমানে, দুর্ভাগ্যবশত, ঠিক তাহাই ঘটিতেছে।
গত শতকের পঞ্চাশের দশকে অর্থাৎ পরিষদীয় গণতন্ত্রকে শাসনপ্রণালী রূপে বরণ করার পরে-পরেই পার্লামেন্টের অধিবেশন বেশ কিছু দিন ধরিয়া চালু থাকিত। বছরে গড়ে ১২৭ দিন ধরিয়া অধিবেশন চলিত। তাহার পর ক্রমশ অধিবেশনের মেয়াদ কমিতে থাকে। ২০০৮ সাল নাগাদ তাহা ৪৬ দিনে নামিয়া আসে। জনসাধারণের অভাব-অভিযোগ তুলিয়া ধরার প্রয়োজন কি তবে হ্রাস পাইতেছে? কেবল মেয়াদ কমিয়া যাওয়াই নয়, অধিবেশনের দিনগুলিও বয়কটে, ওয়াক-আউটে, ঝগড়াঝাটিতে নষ্ট করার প্রবণতা উদ্বেগজনক ভাবে বাড়িয়াছে। বর্তমানে যে পঞ্চদশ লোকসভা চালু রহিয়াছে, তাহার তিন বছরের অধিবেশনে এ যাবৎ প্রায় পাঁচ শত ঘণ্টা নিষ্ফলা অপব্যয় হইয়াছে। অথচ প্রতি দিন লোকসভার অধিবেশন বসাইতে সরকারের কোষাগার হইতে বিপুল অর্থব্যয় হয়। সাংসদদের বেতন-ভাতা বাবদ যে অর্থ ব্যয় হইতেছে, তাহার পরিমাণও খুব কম নয়। এই বেতন-ভাতা বৃদ্ধির সহিত সমান্তরাল ভাবে সংসদের কার্যকারিতা উন্নতি করিয়াছে, এমন কথা মনে করিবার কোনও কারণ নাই, বরং বিপরীত ঘটনাটিই সত্য।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠিতেছে, ভারতীয় রাজনীতিকরা কি ইচ্ছাকৃত ভাবেই সংসদের গুরুত্ব কমাইয়া দিতেছেন? সাংসদদের সভাকক্ষে হাজিরার পরিমাণও উদ্বেগজনক। ন্যূনতম সংখ্যক সাংসদের উপস্থিতির অভাবে প্রায়শ সভার কাজ চালানোই অসম্ভব হইয়া উঠিতেছে। উপস্থিত থাকিলেও সাংসদরা ‘প্রশ্নোত্তর পর্ব’ ও ‘জিরো আওয়ার’-এর মতো অধিবেশনের গুরুত্বপূর্ণ পর্বগুলিকে স্রেফ হই-হট্টগোল করিয়া ভণ্ডুল করিয়া দিতেছেন। এই আচরণ আইনসভার উপযোগিতাই নষ্ট করিয়া দিতেছে। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া একটি অসমাপ্ত সংসদীয় আলোচনা (মাওবাদ মোকাবিলার পদ্ধতি সংক্রান্ত) দ্বিতীয় দিন শুরু করিতে যদি ২০১২ সালের ১৪ অগস্ট আসিয়া যায়, তবে সংসদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার পক্ষে বৃহত্তম বিপদ লইয়া আলোচনাও যদি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে গুরুত্ব না পায়, তবে কোন বিষয়টি পাইবে? আর বিতর্কের মান লইয়া যত কম বলা যায়, ততই ভাল। ভারতীয় সংসদে এক কালে যে মানের বিতর্ক হইত, আজ তাহা প্রায় কল্পকাহিনিতে পরিণত। এই পরিণতি ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে গৌরবের নহে। ইতিহাসের চাকা ঘুরাইবার দায়িত্ব সাংসদদেরই লইতে হইবে। উহা তাঁহাদের গণতান্ত্রিক দায়িত্ব।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.