সম্পাদকীয় ১...
অনপনেয়
মর্ত্য সেন বলিবেন, এক জন মানুষের বিবিধ পরিচয় সম্ভব। যিনি এক জন নারী, তিনি একই সঙ্গে এক জন বাঙালি, চিত্রকর, রাজনীতিক, রবীন্দ্রপ্রেমী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হইতে পারেন। তাঁহার একটি পরিচয় অন্য পরিচয়গুলির তুলনায় প্রধান হইয়া উঠিতে পারে কি? ক্ষেত্রবিশেষে পারে বইকি। তিনি যখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আসনের অধিকারী, এবং সেই আসন হইতেই তিনি যখন কোনও মন্তব্য করেন, তখন তাঁহার মুখ্যমন্ত্রী পরিচয়টি মুখ্য। এবং, সেই ক্ষণে সেই পরিচয়টিই তাঁহার একমাত্র, তাঁহার ব্যক্তিপরিচয় গৌণ। মুখ্যমন্ত্রী যে কথা বলিবেন, তাহা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ভারতীয় গণতন্ত্রের এক প্রধান প্রাতিষ্ঠানিক চরিত্রের বক্তব্য। সেই মুখ্যমন্ত্রীর নাম কী, তাঁহার দলীয় পরিচয় কী, জননেত্রী হিসাবে তাঁহার অভিজ্ঞান কী, কোনও প্রশ্নই বিবেচ্য নহে। বস্তুত, তাঁহার কোনও উক্তিই ‘ব্যক্তি’-র নহে, উক্তিটি মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সির। সেই কারণেই, মুখ্যমন্ত্রীর আসন হইতে একটি শব্দ উচ্চারণ করিবার পূর্বেও ভাবা বিধেয়, শব্দটি এই পদের মহিমার সহিত সঙ্গতিপূর্ণ কি না। প্রতিষ্ঠান তাঁহাকে যে আসন দিয়াছে, তাহার সম্মান রক্ষার দায়িত্ব পদাধিকারীর উপরই বর্তায়। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এই কথাটি স্মরণে রাখেন কি না, সংশয় হইতেছে।
বিধানসভার ৭৫ বৎসর পূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলিলেন, বিচারব্যবস্থা হইতে গণতন্ত্র, সর্বত্রই দুর্নীতি আজ মূল স্তম্ভ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। যে কোনও দায়িত্বশীল নাগরিক এই মন্তব্য করিলে তাহার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ পেশ করিবার দায়িত্বটিও তাঁহাকেই বহন করিতে হইবে। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষেত্রে তাহা যথেষ্ট নহে। তিনি যে আসনে বসিয়া আছেন, সেই আসন হইতে কোনও অবস্থাতেই এই উক্তি করা চলে না। বিচারবিভাগ বা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান সম্বন্ধে তাঁহার অভিযোগ থাকিতেই পারে। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর আসন হইতে সেই অভিযোগ তিনি প্রকাশ করিতে পারেন না। প্রশ্নটি আইনি বাধার নহে, কোনও চুক্তির নহে। প্রশ্নটি এক অলিখিত শিষ্টতার। তাঁহার দায়িত্ব, গণতন্ত্রের সম্মান রক্ষা করা, তাহা লঙ্ঘন করা নহে। ভারতীয় গণতন্ত্র বিশ্বসভায় ভারতের বৃহত্তম গর্ব। গণতন্ত্রের সহ্যশক্তি অসীম উগ্র হিন্দুত্ববাদ হইতে চরম বামপন্থা, অনেক বিরুদ্ধ শক্তিকেই গণতন্ত্র বশ করিতে পারে। কিন্তু, ভারতীয় গণতন্ত্রের অন্যতম শীর্ষাসন হইতে যদি কেহ মন্তব্য করেন যে, এই দেশে টাকার বিনিময়ে বিচার ক্রয় করা সম্ভব, তবে গণতন্ত্রের গায়ে একটি অনপনেয় দাগ পড়িয়া যায়। অসম্মানের দাগ। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী গণতন্ত্রকে এই অসম্মান করিয়াছেন। স্বাধীনতা দিবসের পূর্বলগ্নে।
যে কোনও পদই কিছু দায়িত্ববোধ প্রত্যাশা করে। রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদটি তো বটেই। মুখ্যমন্ত্রীর নিকট বাক্সংযম প্রত্যাশিত। তিনি মূলত ময়দানি রাজনীতির ফসল। কিন্তু, মেঠো বক্তৃতায় যাহা বলা চলে, মুখ্যমন্ত্রীর আসন হইতে তাহা বলা চলে না। মুখ্যমন্ত্রী যখন মাঠের জনসভায় বক্তৃতা করেন, তখনও না। কারণ, সেই জনসভাতেও তিনি ‘মুখ্যমন্ত্রী’। দিনকয়েক পূর্বে এক জনসভায় শ্রীবন্দ্যোপাধ্যায় এক যুবককে ‘মাওবাদী’ হিসাবে চিহ্নিত করিয়াছিলেন। এই কাজটির ফল কী হইতে পারে, তাঁহার অজানা নহে। এই আচরণ রাজধর্ম নহে, মুখ্যমন্ত্রী-পদের মর্যাদার সহিত সঙ্গতিপূর্ণ নহে ইহা তাঁহার পূর্বসূরির ‘পেড ব্যাক ইন দেয়ার ওন কয়েন’-এর প্রতিধ্বনি। তাঁহার বাক্সংযমের অভাব বহু রূপে প্রকাশিত। বিধানসভায় বিচারব্যবস্থা সংক্রান্ত মন্তব্যটি তাহারই চরম প্রকাশ। মুখ্যমন্ত্রী স্মরণে রাখিতে পারেন, কথা এক বার বলা হইয়া গেলে তাহা ফিরাইয়া লওয়ার কোনও উপায় থাকে না। কাজেই, কথা বলিবার পূর্বে ভাবিবার সু-অভ্যাসটি তৈরি করা যায় কি না, মুখ্যমন্ত্রী বিবেচনা করিতে পারেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.