বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মঙ্গলবার বিধানসভার অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য প্রসঙ্গে বুধবারেই এবিপি আনন্দের স্টুডিওয় বসে প্রাক্তন বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘এতে বিচার ব্যবস্থার উপরে মানুষ আস্থা হারাবে।’
তার পরেই, বুধ ও বৃহস্পতিবার, পরপর দু’রাতে তিন বার টেলিফোন করে হুমকি দেওয়া হল সমরেশবাবুকে। বুধবার রাতে পুরুষ কণ্ঠে দু’বার সেই হুমকি-ফোন আসার পরে তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান। কিন্তু কাজ হয়নি। বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় আবার সল্টলেকের পূর্বাচলে তাঁর ফ্ল্যাটে ফোন আসে। তখন বাড়িতে সমরেশবাবুর স্ত্রী সুনন্দাদেবী একা ছিলেন। এক মহিলা ফোন করে হুমকি দেন, ‘সমরেশ কাজের মেয়েকে ধর্ষণ করেছে বলে রটিয়ে দেব।’
|
সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় |
বৃহস্পতিবার রাতে সমরেশবাবু জানান, তাঁর বাড়িতে রাতদিনের পরিচারিকা নেই। ‘ঠিকে’ কাজের লোক আছেন। তবে এই হুমকি নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। রাতেই তাঁর বাড়িতে পুলিশ যায়। তিনি আবার লিখিত ভাবে বিষয়টি তাদের জানান। এ বার যে-মোবাইল থেকে মহিলা কণ্ঠের ফোনটি এসেছিল, তার নম্বরও পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। সমরেশবাবুর অভিযোগ, “বুধবার রাতে দু’বারই ফোন এসেছিল ল্যান্ড লাইনে। এক বার রাত সওয়া ১১টা নাগাদ। আর এক বার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ।”
সমরেশবাবু জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মহিলা ফোন করে সুনন্দাদেবীকে বলেন, ‘সমরেশ আছে?’ অবসর নেওয়া বিচারপতিকে একমাত্র কোনও নিকট বন্ধু বা আত্মীয়ই এ ভাবে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করতে পারেন। যাঁরা পারেন, তাঁদের সকলেরই গলা চেনেন সুনন্দাদেবী। কিন্তু ফোনের মহিলা কণ্ঠ তাঁর চেনা নয়। তিনি পাল্টা জানতে চান, “কে বলছেন?” মহিলা নিজের পরিচয় না-দিয়ে বলেন, “ওকে সাবধানে থাকতে বলবে। নইলে সমরেশ কাজের মেয়েকে ধর্ষণ করেছে বলে রটিয়ে দেব।’
পুলিশের কাছে প্রাক্তন বিচারপতির অভিযোগ, বুধবার রাতে এক ব্যক্তি নিজেকে একটি ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদিক বলে পরিচয় দিয়ে ফোন করে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। এবিপি আনন্দে সমরেশবাবুর মতামত কেন মুখ্যমন্ত্রীর মতামতের থেকে আলাদা, টেলিফোনের ও-পার থেকে তা-ও জানতে চাওয়া হয়। সমরেশবাবু প্রথমে ওই ব্যক্তিকে সাক্ষাৎকারের সময় ঠিক করে নিয়ে বাড়িতে এসে কথা বলতে বলেন। তিনি যে ফোনে কোনও মন্তব্য করবেন না, তা-ও জানিয়ে দেন। সমরেশবাবুর অভিযোগ, সেই সময় ওই ব্যক্তি ফোন ছেড়ে দিলেও ১৫ মিনিট পরে আবার ফোন আসে। তখন সমরেশবাবুকে বলা হয়, তৃণমূলের আইনি সেল দুর্নীতিপরায়ণ ১২ জন বিচারপতির তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকায় তাঁর নামও আছে।
সমরেশবাবুর অভিযোগ, “আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আমি সিপিএমের লোক। বিমান বসুর সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন মামলার রায় দিয়েছি। আমাকে বলা হয়েছে, আইনি সেল খুব ‘সিরিয়াস’। বিমান বসুকে জেলে পাঠাবে ইত্যাদি।” প্রাক্তন বিচারপতি মন্তব্য করেছেন, “টেলিফোনে এমন ভঙ্গিতে কথা বলা হচ্ছিল, যার অর্থ, আমাকেও তৈরি থাকতে বলা হচ্ছে। এটাই হুমকি।”
বিধাননগর পুলিশের কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, ‘‘একটি ইংরেজি সংবাদপত্রের দফতর থেকে টেলিফোন করা হচ্ছে বলেই প্রাক্তন বিচারপতিকে জানানো হয়েছিল। পরে তিনি সেই সংবাদপত্রের দফতরে ফোন করে জানতে পারেন, সেখান থেকে কেউ তাঁকে টেলিফোন করেননি।” রাজীব কুমার জানান, প্রাক্তন বিচারপতি বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশের কাছে এই নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। |