নিহত ৯ জঙ্গি-সহ দশ
পাক বিমানঘাঁটিতে তালিবান হানা
রাতের অন্ধকারে খাস বিমানঘাঁটির ৯ ফুট উঁচু পাঁচিল বেয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ল এক দল আত্মঘাতী জঙ্গি! তার পর ঘাঁটির ত্রিস্তর নিরাপত্তাবলয় ভেদ করে তারা পৌঁছে গেল ‘এয়ারক্র্যাফ্ট হ্যাঙ্গার’-এর কাছেও!
ঘটনাস্থল পাকিস্তানের কামরায় দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিনহাস বিমানঘাঁটি। বৃহস্পতিবার রাত দু’টো নাগাদ এ ভাবেই সেখানে ঢুকে হামলা চালাল তালিবান জঙ্গিরা। নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে পাক সরকারের অস্বস্তি উস্কে আরও এক বার তালিবানের হাতে আক্রান্ত হল পাক সেনাবাহিনী। দু’তরফের গুলির লড়াইয়ে নয় জঙ্গি ও পাক বায়ুসেনার এক জওয়ান নিহত হয়েছেন। পরে তালিবান মুখপাত্র এহসানউল্লা এহসান হামলার দায়স্বীকার করে এক বিবৃতিতে জানান, ওসামার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতেই এই হামলা।
ইসলামাবাদ থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে মিনহাস ঘাঁটি। পাশেই বায়ুসেনার গবেষণাকেন্দ্র ‘পাকিস্তান এরোনটিক্যাল কমপ্লেক্স।’ চিনের সাহায্যে এই কেন্দ্রে জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান তৈরি করে পাকিস্তান। তা ছাড়া, মিনহাস ঘাঁটিতে পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে বলে বহুকাল ধরেই দাবি করে আসছে পশ্চিমী সংবাদমাধ্যম। পাক সেনা এবং সরকার অবশ্য বরাবরই সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। এ দিনের হামলার পরও সেনার তরফে বলা হয়, “এই জল্পনা ভিত্তিহীন। পাকিস্তানের কোনও বিমানঘাঁটিতেই পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার নেই।” তা সত্ত্বেও এমন ‘উচ্চ সুরক্ষা অঞ্চলে’ এই হামলায় পাকিস্তানে জঙ্গি গতিবিধি নিয়ে নতুন করে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
পড়ে রয়েছে জঙ্গির দেহ। ছবি: এএফপি
পাকিস্তানের সেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হানার ঘটনা অবশ্য এই প্রথম নয়। গত বছরই করাচিতে পাক নৌসেনার ঘাঁটি আক্রমণ করে তালিবান জঙ্গিরা। কামরার এই ঘাঁটির কাছেই ২০০৭ ও ২০০৯-এ আত্মঘাতী হামলা হয়েছিল। তবে, মিনহাস ঘাঁটির নিরাপত্তাবলয় ভেদ করে হামলা এই প্রথম।
কী ভাবে ঘাঁটির ভিতরে ঢুকল জঙ্গিরা? প্রাথমিক ভাবে অনুমান, নিকটবর্তী একটি গ্রাম দিয়ে রাত দু’টো নাগাদ ঘাঁটির কাছে পৌঁছয় তারা। এর পর ঘাঁটির দেওয়াল চড়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে। তবে, রমজান মাসে প্রার্থনার জন্য সে সময় ঘাঁটির ভিতরে সৈন্যদের অনেকেই জেগে ছিলেন। বিস্ফোরক-বোঝাই আত্মঘাতী জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াই শুরু হয় তাঁদের। পাক বায়ুসেনার মুখপাত্র জানিয়েছেন, ঘাঁটির ভিতরে গুলির আওয়াজ পেতেই বাইরে থেকে গ্রেনেড হামলা শুরু করে বাকি জঙ্গিরা।
প্রায় তিন ঘণ্টা চলে দু’তরফের লড়াই। ঘাঁটির ভিতরে সেনার হাতে মারা পড়ে আট জঙ্গি। এক আত্মঘাতী জঙ্গি ঘাঁটির বাইরে নিজেকে উড়িয়ে দেয়। আহত হন বায়ুসেনার বাহিনীর নেতৃত্বে থাকা এয়ার কমোডোর মহম্মদ আজম। তাঁর কাঁধে গুলি লাগে। পরে পাক বায়ুসেনার তরফে জানানো হয়, আজমের অবস্থা ‘স্থিতিশীল।’ জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেডে বায়ুসেনার একটি বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।
ঘটনার পর তালিবানের মুখপাত্র এহসানউল্লা এহসান এক বিবৃতিতে বলেন, “অভিযানের জন্য আমরা গর্বিত! দীর্ঘদিন ধরে তালিবান কামরা ঘাঁটিতে হামলার ছক কষছিল তালিবান।” এহসানের কথার সূত্র ধরেই নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মিনহাস ঘাঁটিতে হামলার ঘটনায় পাকিস্তানে নিরাপত্তাব্যবস্থার ঢিলেমি আরও একবার সামনে এল। কারণ, দিন কয়েক আগেই পাকিস্তানের একটি জনপ্রিয় দৈনিক গোয়েন্দা রিপোর্ট উদ্ধৃত করে জানায়, রমজান মাসের ২৭ বা ২৮ তম দিনে (অর্থাৎ ১৬ বা ১৭ অগস্ট) পাক বায়ুসেনার ঘাঁটিতে হামলা চালাতে পারে তেহরিক-ই-তালিবান। অর্থাৎ, পাক গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কাছে আগে থেকেই হামলার আভাস ছিল বলে ধরে নেওয়া যায়। তার পরেও এই ঘটনা কেন ঠেকানো গেল না সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি অবশ্য আজকের ঘটনায় সেনার ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। তাঁর কথায়, “পাক সেনা যে দ্রুততার সঙ্গে পুরো ব্যাপারটা সামলেছে, তাতে বোঝা যায় তারা কতটা তৈরি ছিল।” তবে, তালিবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমেরিকার ‘গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী’ পাকিস্তান সাম্প্রতিক অতীতে বারবার তালিবানেরই হামলার মুখে পড়েছে। প্রেসিডেন্টের দরাজ সার্টিফিকেটেও নিরাপত্তার সেই ফাঁকফোঁকর ঢাকা পড়ছে না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.