গলার নলি কেটে স্বামীকে খুন করলেন স্ত্রী। তিনি একা নন, ওই তরুণীর বড় বোনও সে সময়ে ঘরেই ছিলেন। মদ্যপ যুবককে মেঝেতে পেড়ে ফেলতে অসুবিধা হয়নি দুই বোনের। তিনিই চেপে ধরেন যুবককে। আর রান্নাঘর থেকে এক ছুটে ধারাল ছুরি এনে স্বামীর গলায় চালিয়ে দেন স্ত্রী। কল্যাণীর বি ব্লকের ওই বাড়ি থেকেই সোমবার রাতে পুলিশ দুই বোনকে গ্রেফতার করেছে।
কিন্তু কেন এই খুনোখুনি?
অভিযোগ, স্ত্রীর সামনেই শ্যালিকা মনিকা মিস্ত্রিকে ধর্ষণ করতে গিয়েছিল মদ্যপ ওই যুবক রথীন মাঞ্জুর। চিৎকার শুনে ছুটে আসেন স্ত্রী মণি। দিদিকে বাঁচাতে রুটি সেঁকার তাওয়া দিয়েই স্বামীর মাথায় আঘাত করলেও ঠেকানো যায়নি মধ্য ত্রিশের রথীনকে। টলোমলো পায়ে উঠে দাঁড়িয়ে দেরাজ থেকে এ বার রিভলভার বের করে স্ত্রীর দিকেই তাক করে সে। উপায় নেই দেখে এ বার দুই বোনই ঝাঁপিয়ে পড়ে রথীনের উপরে। তারপরে মণিকা চেপে ধরে থাকেন হাত আর এক ছুটে রান্নাঘর থেকে ছুরি নিয়ে এসে স্বামীর গলায় বসিয়ে দেয় মণি।
রথীনের স্বভাব-চরিত্র যে বিশেষ ‘সুবিধা’র ছিল না তদন্তে নেমে তা জানতে পেরেছে পুলিশ। কল্যাণীর এসডিপিও চন্দ্রশেখর বর্ধন বলেন, ‘‘ওই যুবক নানান অসামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল। বিভিন্ন যৌনপল্লিতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার। নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ওই যুবকের কাছে যে আগ্নেয়াস্ত্রটি পাওয়া গিয়েছে সে’টি বিহারের মুঙ্গেরে তৈরি বলে জানা গিয়েছে।”
মণির বাড়ি আদতে কল্যাণী সীমান্ত এলাকা। বাড়ির অমতে বিয়ে করে বছর কয়েক আগে সে এক যুবকের সঙ্গে চলে গিয়েছিল। তবে সে বিয়ে টেঁকেনি। বছর সাতেক আগে শিলিগুড়িতে থাকার সময়ে তার সঙ্গে আলাপ হরিয়ানার হিসারের বাসিন্দা রথীনের সঙ্গে। বিয়েও হয়। তবে এ বিয়েও খুব সূখের ছিল না।
কল্যাণীর বি ব্লকের ওই বাড়িতে বছর কয়েক ভাড়া রয়েছেন ওই দম্পতি। তাদের একটি নাবালক ছেলেও রয়েছে। পড়শিরা জানান, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই বচসা লেগে থাকত। বাড়িওয়ালা আশিসকান্তি ধর বলেন, “ওই দম্পতির মধ্যে প্রায়ই অশান্তি হত। পড়শিরাও এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। সোমবারও দু’জনের মধ্যে প্রবল কথা কাটাকাটি হয় বলে শুনেছি।” বোন-ভগ্নীপতির বিবাদ মেটাতেই ওই দিন চুঁচুড়া থেকে মা সন্ধ্যা হালদারকে নিয়ে এসেছিলেন মনিকা। সন্ধ্যদেবী বলেন, “রথীন মদ্যপ অবস্থায় এসে মনিকার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ধর্ষণ করতে যায়। ছোট মেয়ে এসে বাধা দিলে রিভলভার বের করে খুনের হুমকি দিতে থাকে। নিজেদের বাঁচাতেই দুই মেয়ে রথীনের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে।’’ তবে কী করে সে ছুরিকাহত হল তা বুঝতে পারেননি বলেই দাবি করেছেন ওই প্রৌঢ়া। |