ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এক দিকে যখন মেরি কমকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করছে বিশাল জনতা, তখন একই বিমানে ফেরা ভরত ছেত্রীরা এক রকম মুখ লুকিয়ে বেরিয়ে গেলেন বিমানবন্দরের অন্য গেট দিয়ে।
লন্ডন অলিম্পিকে পরপর ছ’টা ম্যাচ হেরে বারো দলের মধ্যে সর্বশেষ স্থান পেয়ে ভারতীয় হকিতে লজ্জার নতুন ইতিহাস গড়লেন ভরতরা। যার জেরে ভারতীয় হকির প্রধান স্পনসর সহারা গ্রুপ হকি থেকে সরে যেতে চাইছে। শুধু সহারা নয়, অন্যান্য স্পনসরও এখন হকি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। যা দেখেশুনে দিশেহারা ফেডারেশন কর্তারা। তার উপর হকি বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই রায় দিয়ে দিয়েছেন যে, ভারতীয় হকিকে বাঁচিয়ে তোলা এখন অসম্ভব। |
হকি ইন্ডিয়া-র সচিব নরেন্দ্র বত্রা অলিম্পিকে ভারতীয় হকির বিপর্যয়ের কারণ দেখানোর জন্য দশ দিনের নোটিশ দিয়েছেন জাতীয় দলের কোচ, ম্যানেজার এবং ফিজিওকে। ২২ অগস্টের মধ্যে ফেডারেশনের কাছে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে ফেডারেশন শুধু টিম ম্যানেজমেন্টের রিপোর্টের উপরই ভরসা করছে না। প্রাক্তন অলিম্পিয়ানদের কাছেও এই ভরাডুবির কারণ জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দরকারে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। অস্ট্রেলীয় কোচ মাইকেল নবসের সিংহাসনও এখন নড়বড়ে। গোটা হকি দলকেই আপাতত দিল্লিতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ফেডারেশন যতই কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা শোনাক, তাদের কাজকর্মে মোটেও খুশি নন প্রাক্তন অলিম্পিয়ানরা। অশোক কুমার যেমন বললেন, “অলিম্পিকে এই ফলের পর কেউই আর ছেলে-মেয়েদের হকি খেলতে পাঠাবে না। গোটা দেশের হকি খেলোয়াড়রাও মনোবল হারিয়ে ফেলেছে। ভারতীয় হকিকে বাঁচানো এখন অসম্ভব।” ধনরাজ পিল্লাই তো বলেই দিলেন, “ভারতীয় হকি মৃত। খেলাটাকে বাঁচানো যায় একমাত্র এই অযোগ্য কর্তাদের সরিয়ে প্রাক্তন অলিম্পিয়ানদের ফেডারেশনে নিয়ে এসে। বিভক্ত দুটি হকি ফেডারেশনকে এক করে দিলেও কাজ হবে।” ধনরাজের আরও দাওয়াই, “এই দল থেকে প্রতিভাবান প্লেয়ারদের রেখে বাকিদের সরিয়ে নতুন করে দল গড়তে হবে। প্রাক্তন অলিম্পিয়ানদের উপর ভার দেওয়া উচিত নতুন প্রতিভা খুঁজে বার করার।”
জাতীয় দল এবং হকি সংস্থার আমূল পরিবর্তন চান পারগত সিংহও। অজিতপাল সিংহ সরাসরি কিছু না বললেও তাঁর বক্তব্য পরিষ্কার। “এই ফলের পর আর কার কী বলার থাকতে পারে? আপনারা সব দেখেছেন।”
জাতীয় হকি অধিনায়ক ভরত ছেত্রীও অবশ্য পালটা যুক্তি দিচ্ছেন। শিলিগুড়ির গোলকিপার দিল্লিতে ফিরে বলেন, “নিজেদের দক্ষতার মাত্র ৩০-৩৫ শতাংশের বেশি অলিম্পিকে দেখাতে না পারায় এ রকম বিপর্যয় ঘটেছে। এই দলে প্রতিভার অভাব নেই। কিন্তু দরকারের সময় সেট দেখাতে পারিনি।” |