স্বাধীনতা দিবসের আগে জঙ্গি আতঙ্ক :ছড়িয়েছে ডিমা হাসাও সীমা সংলগ্ন কাছাড়ের বেশ ক’টি গ্রামে। মহকুমা প্রশাসন এবং পুলিশ কড়া নজরদারির আশ্বাস দিলেও বড়সড় হামলার আশঙ্কায় অনেকেই ভিটেমাটি ছেড়ে পালাচ্ছেন।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, দিন দশেক ধরে দুই জেলার সীমা সংলগ্ন এলাকায় দল বেঁধে বন্দুকধারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ পর্যন্ত বড় রকমের কোনও হিংসাত্মক ঘটনা না ঘটলেও তাঁদের আশঙ্কা, সংঘর্ষবিরতি মেনে চলা ডিমাসা জঙ্গিদের সঙ্গে ক’দিনের মধ্যে সরকারের শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। আর তখনই অ-ডিমাসাদের উপরে হামলা চালাবে বন্দুকধারীরা। কারণ, শান্তিচুক্তির শর্ত হিসাবে গঠিত হবে ডিমারাজি টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল। আর আলোচনাপন্থী জঙ্গিদের দাবি মেনে কাছাড়েরও ১৮টি গ্রাম কাউন্সিলের অন্তর্ভুক্ত হবে বলে তাঁদের অনুমান ।
হামলার আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই সদর মহকুমার বড়খলা থানার নারায়ণছড়া, হরিণছড়া, ডলুবস্তি, ঝিঙাছড়া, বালাছড়া প্রভৃতি অঞ্চল থেকে গ্রামবাসীরা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছেন। আতঙ্ক ছড়িয়েছে লক্ষ্মীপুর মহকুমার জয়পুর, এবং লক্ষ্মীপুর থানা এলাকার বিভিন্ন গ্রামেও।
ওই সব এলাকার ডিমাসা জনগণের অবশ্য বক্তব্য, বন্দুকধারীরা মোটেও ডিমাসা জনগোষ্ঠীর নয়। এরা সম্ভবত নাগা জঙ্গি। ডিমাসা গ্রামগুলিতেও তারা জঙ্গিকর আদায়ে চাপ দিচ্ছে। লোদি বস্তির মনোরঞ্জন বর্মনের বাড়ি থেকে দু’দিন আগে গরু নিয়ে গিয়েছে। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে কর আদায় করে রাখতেও তাঁকে নির্দেশ দিয়েছে।
কাছাড়ের পুলিশ সুপার দিগন্ত বরার অবশ্য দাবি, ডিমারাজি নিয়ে গ্রামের মানুষ অহেতুক আতঙ্কে ভুগছেন। কারণ প্রস্তাবিত টেরিটোরিয়াল কাউন্সিললে ডিএইচডি ডিমা হাসাও জেলা সংলগ্ন কাছাড়ের গ্রামগুলিকে অন্তর্ভুক্তির দাবি করলেও সরকারি ভাবে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে তাঁদের কাছেও খবর রয়েছে, পাহাড়ি এলাকায় একটি জঙ্গিগোষ্ঠী ঘোরাফেরা করছে।
এই সঙ্গে এনএসসিএন (আইএম) নাগাল্যান্ডে সংঘর্ষবিরতি মেনে চললেও ডিমা হাসাওয়ে জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। এরাই ডিমাসা ন্যাশনাল রেভল্যুশনারি ফ্রন্টকে (ডিএনআরএফ) নানা ভাবে মদত জোগাচ্ছে। ডিমাসাদের এই নতুন জঙ্গিগোষ্ঠীতে ডিএইচডি (দিলীপ নুনিসা)-র দলছুট ক্যাডাররাও রয়েছে বলে অভিযোগ।
হাফলংয়ের বাঙালি ব্যবসায়ী স্বপন ধরচৌধুরী হত্যা মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে। এই খুনের ঘটনায় গত দু’দিনে তিন জন ধরা পড়েছে। এদের মধ্যে মৃদুল দাস নামে একজন বাঙালি যুবকও রয়েছে। সে নিজেকে ডিএনআরএফ ক্যাডার বলেই পুলিশকে জানিয়েছে। অন্য দুজনএনএসসিএন (আইএম)-এর কর্পোরাল লিভিং স্টোন এবং ডিএনআরএফ-এর টাউন কমান্ডার ধনঞ্জয় ক্যামপ্রাই ওরফে লাভলি ডিমাসা। লিভিং স্টোন পুলিশি জেরায় স্বীকার করেছে, সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশেই সে ডিএনআরএফ জঙ্গিদের সঙ্গে রয়েছে। তার অভিজ্ঞতাকে ডিমাসা জঙ্গি সংগঠনটি কাজে লাগাচ্ছে। অন্য দিকে, ধনঞ্জয়ের কথায়, সে ডিএইচডি (দিলীপ নুনিসা) ক্যাডার ছিল। পরে যোগ দিয়েছে নতুন সংগঠনে। দিলীপ অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ডিএনআরএফ-এর সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। |