|
|
|
|
বিনোদন |
রবীন্দ্রনাথের ওকাম্পো নিয়ে মঞ্চে মল্লিকা
জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
|
|
১৯৫০ সালে ‘চিত্রাঙ্গদা’র বেশে মৃণালিনী সারাভাইকে নৃত্যমঞ্চে দেখেছিলেন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। মৃণালিনী তখন তাঁর নাচের দল নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা সফরে। তাঁকে দেখে ভিক্টোরিয়ার নতুন করে মনে পড়ে গিয়েছিল রবীন্দ্রনাথের কথা। বিশেষত রবীন্দ্রনাথের হাত দু’খানি। সে কথা উল্লেখ করে ভিক্টোরিয়া পরে লেখেন, “...যখন মৃণালিনী সারাভাইয়ের নাচ দেখি, তখন জেনেছি যে সত্যিই ভারতীয় নৃত্যে হাতের মুদ্রা কথা বলে তার নিজের ভাষায়।”
এত দিনে মৃণালিনী-তনয়া নিজে ওকাম্পোর ভূমিকায়। ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথকে চরিত্র করে একটি পূর্ণাঙ্গ নাটক নিয়ে শহরে আসছেন মল্লিকা সারাভাই। নাটকে তিনি ওকাম্পো, আর রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায় টম অলটার।
১৯২৪ সালে আর্জেন্টিনায় ভিক্টোরিয়ার অতিথি হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ভিক্টোরিয়া তখন সে দেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। দেশবিদেশের শিল্পী-সাহিত্যিকদের সঙ্গে তাঁর গভীর সখ্য। তারই মধ্যে রবীন্দ্রনাথের লেখায় তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন প্রাণের আরাম। আর ভিক্টোরিয়ার সান্নিধ্যে আসার পর, রবীন্দ্রনাথ তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন একটি গানের অনুবাদ: ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনি।’ ভিক্টোরিয়ার নাম তিনি দিয়েছিলেন, ‘বিজয়া’। ‘পূরবী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে শুরু করে তাঁর একের পর এক কবিতায় যে নারীর ছায়া পড়েছিল, তিনি ভিক্টোরিয়াই। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে লিখেছিলেন, “আমার কী আছে তার বিচারে নয়, আমি সত্যিই যা, ঠিক সেই ভাবেই তুমি বুঝতে পার আমায়।”
এই অনন্যসাধারণ ভালবাসার উপাখ্যানই মঞ্চে তুলে আনছেন মল্লিকা। ‘গুরুদেবের’ আবরণ থেকে বার করে আনতে চাইছেন সত্যিকার মানুষটিকে। তাঁর ভালবাসা-নিঃসঙ্গতা-দুর্বলতা সমেত আকার দিতে চাইছেন এক ‘বাস্তব’ রবীন্দ্রনাথকে। মল্লিকা বলছেন, “ওঁর কাজ নিয়ে এত কিছু হয়েছে! এত লেখা, এত সিনেমা, নাটক...। অথচ তাঁকে চরিত্র করে, তাঁকে নিয়ে, তাঁর ভালবাসাকে কেন্দ্রে রেখে কোনও কাজ সে ভাবে হয়েছে বলে শুনিনি!” |
|
নাটকে রবীন্দ্রনাথ ও ওকাম্পোর বেশে টম ও মল্লিকা। |
মা মৃণালিনী শান্তিনিকেতনের ছাত্রী ছিলেন। মল্লিকা স্কুলে গিয়ে জীবনে প্রথম যে গান শিখেছিলেন, সেটা রবীন্দ্রসঙ্গীত। “মাকে দেখেছি তাসের দেশ করেছেন, ভানুসিংহের পদাবলি করেছেন। আমি নিজেও চণ্ডালিকা করেছি।” কিন্তু ক্রমশই তাঁকে খেপিয়ে তুলছিল এই বিপুল সৃষ্টির পিছনে সত্যিকার মানুষটিকে খোঁজার ইচ্ছা। গত বছর থেকে শুরু হল আলাদা করে পড়াশোনা। রবীন্দ্রনাথের লেখা, ছবি, চিঠিপত্র, তাঁকে নিয়ে অন্যদের লেখা। দু’টি বইয়ের কথা বিশেষ করে বললেন উমা দাশগুপ্তর অনুবাদে ‘জীবনস্মৃতি’ (‘মাই লাইফ ইন মাই ওয়র্ডস’) এবং কেতকী কুশারী ডাইসনের ‘ইন ইওর ব্লসমিং ফ্লাওয়ার গার্ডেন’! নাটকের মূল ভাবনাটা ভেবে ফেলার পরে স্ক্রিপ্ট লেখা এবং পরিচালনার কাজে মল্লিকা সঙ্গে নিলেন অস্ট্রেলীয় পরিচালক স্টিভ মেয়ার-মিলারকে।
রবীন্দ্রনাথের জন্মের ১৫০ বছর উপলক্ষে সম্প্রতি রবীন্দ্র প্রযোজনার ঢেউ এসেছে বাংলা রঙ্গমঞ্চে। অথচ প্রেমিক রবীন্দ্রনাথ তো দূরস্থান, ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথকে নিয়েই তেমন উল্লেখযোগ্য কোনও নাটক এখনও এ শহরে তৈরি হয়নি।
মল্লিকার কিন্তু স্পষ্ট কথা, “আমি বিশ্বাস করি রবীন্দ্রনাথকে মহৎ বলে তুলে ধরার জন্য তাঁর জীবনের নানা অংশকে আড়াল করে রাখার দরকার নেই।” তাই ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে শুরু হয়ে নাটক চলে যায় অতীতে। যুবক রবীন্দ্রনাথের পাশে দেখা যায় কাদম্বরী দেবী, কবিপত্নী মৃণালিনীকেও। এ হেন প্রযোজনাটি কলকাতায় অভিনয় করার জন্য মুখিয়ে আছেন মল্লিকা এবং টম অলটার। আগামী ২৪ অগস্ট শহরের একটি নাট্যোৎসবে যোগ দেবেন তাঁরা। উত্তেজিত টম বলছেন, ‘‘এ এক বিরাট চ্যালেঞ্জ!”
নাট্যোৎসবের আয়োজক সৌমিত্র মিত্র জানাচ্ছেন, মল্লিকার নাটকটির হদিস তাঁকে দিয়েছিলেন শর্মিলা ঠাকুর। শর্মিলার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা শুনেই তিনি মল্লিকার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নাচের পাশাপাশি মঞ্চাভিনয়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা মল্লিকার। পিটার ব্রুকের মহাভারতে তিনি ছিলেন দ্রৌপদীর ভূমিকায়। বছর তিনেক আগে বের্টোল্ট ব্রেখট অবলম্বনে ‘অওরত ভালী রামকলি’ নাটকে সাড়া জাগানো অভিনয় করেছিলেন। (ব্রেখটের সেই নাটক বাংলায় রূপান্তর করেছিলেন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। উৎসবে সেই ‘ভালমানুষ’-এর রিমেকও থাকছে।)
মল্লিকার নাটকের নাম? ‘উইথ লভ’।
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো লিখেছিলেন, “সান ইসিদ্রোতে থাকার সময় কয়েকটি বাংলা শব্দ শিখিয়েছিলেন কবি। আমি মনে রেখেছি শুধু একটি... ভালবাসা।”
|
গোবরডাঙায় নাট্য-কর্মশালা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গোবরডাঙা |
দু’দিনের নাট্য-কর্মশালা শেষ হল গোবরডাঙা হিন্দু কলেজে। ইউজিসি-র সহযোগিতায় আয়োজিত ওই কর্মশালা পরিচালনা করে গোবরডাঙা নাট্য সংস্থা ‘শিল্পায়ন’। শনি ও রবিবার দু’দিনের কর্মশালার শেষে শিক্ষার্থীদের হাতে শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়। সোমবারের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁর সাংসদ গোবিন্দচন্দ্র নস্কর। শনিবার কর্মশালার উদ্বোধন করেন গোবরডাঙা পুরসভার চেয়ারম্যান সুভাষ দত্ত। উপস্থিত ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ গোপীনাথ হাইত, কলেজ পরিচালন সমিতির সদস্য শঙ্কর দত্ত প্রমুখ। তিনি জানান, কলেজের ৬০ জন ছাত্রছাত্রী কর্মশালায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কর্মশালার মুখ্য প্রশিক্ষক ছিলেন দীপা ব্রহ্ম। পরিচালনা করেন আশিস চট্টোপাধ্যায়। |
|
|
|
|
|