নেই উপযুক্ত পরিকাঠামো। ফলে দিনের পর দিন ক্রমেই বেহাল হয়ে পড়ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গুরুত্বপূর্ণ দু’টি মৎস্যবন্দর কাকদ্বীপ ও ফ্রেজারগঞ্জ। এর ফলে সমস্যায় পড়েছেন মৎস্যজীবী থেকে মাছ ব্যবসায়ীরা। বেহাল পরিকাঠামোর উন্নয়নে বার বার মৎস্য দফতরে আবেদন জানালেও কোনও কাজই হয়নি বলে মৎস্যজীবীদের অভিযোগ।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকার মৎস্যজীবীদের সুবিধার্থে বিগত বাম সরকারের আমলে কাকদ্বীপে এবং বকখালির ফ্রেজারগঞ্জে দু’টি মৎস্যবন্দর তৈরি করা হয়। ওই দু’টি বন্দর থেকে গভীর সমুদ্রে যাওয়া সমস্ত ট্রলার পানীয় জল, জ্বালানি, বরফ সংগ্রহ করা থেকে ট্রলার থেকে মাছ নামানো-ওঠানো এবং বাজারে পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকী ফ্রেজারগঞ্জ মৎস্য বন্দরে গভীর সমুদ্রে যাওয়া মৎস্যজীবীদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখার জন্য টাওয়ারও চালু করা হয়। সেই সঙ্গে খারাপ হয়ে যাওয়া ট্রলার সারানোর জন্য তৈরি করা হয় ড্রাই ডক। কিন্তু ওই দু’টি মৎস্য বন্দর পুরোদমে চালু হওয়ার কয়েক বছর পর থেকেই সমস্যা দেখা দেয়। |
কাকদ্বীপ মৎস্য বন্দরটি তৈরি হয়েছিল মুড়িগঙ্গা নদী লাগোয়া কালনাগিনী খালের ধারে। বন্দর তৈরির সময় খালের গভীরতা ছিল যথেষ্ট। গভীর সমুদ্র থেকে ট্রলরা মুড়িগঙ্গা নদী হয়ে ওই খালে ঢুকে পড়ত। কিন্তু ক্রমশ পলি পনে পড়ে খালের গভীরতা নষ্ট হতে থাকে। পলি সংস্কার না হওয়ার কারণে ভাটার সময় খালে জল প্রায় থাকে না বললেই চলে। ফলে গভীর সমুদ্র থেকে ফেরা মাছবোঝাই ট্রলারগুলিকে জোয়ারের জন্য মুড়িগঙ্গায় দীঘর্ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। জোয়ার এলেই সেগুলি খালে ঢুকতে পারে। আর জোয়ারের অপেক্ষায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ট্রলারগুলি নদীতে অপেক্ষার কারণে ক্ষতি হয় মাছের। তা ছাড়া বন্দরে ট্রলারগুলির চাহিদা মতো বরফ, জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য কোনও পাইকারি বাজার গড়ে না ওঠায় প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে মৎস্যজীবীদের। ট্রলার থেকে মাছ নামানোর পরে তা ডায়মন্ড হারবারের আড়তে নিয়ে যেতে হয়। এতে সময় ও খরচ দু’টোই বেড়ে যায়। তা ছাড়া বন্দর থেকে গভীর সমুদ্রে যাওয়া ট্রলারগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য কোনও ওয়্যারলেস ব্যবস্থা নেই কাকদ্বীপ বন্দরে। অন্য দিকে ফ্রেজারগঞ্জ মৎস্যবন্দরে ওয়্যারলেস ব্যবস্থা থাকলেও দীর্ঘ দিন ধরেই তা অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। খারাপ হয়ে যাওয়া ট্রলার সারানোর জন্য এই বন্দরে ‘ড্রাই ডক’ তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে তা আজও চালু হয়নি। |
কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতির সভাপতি বিজন মাইতি বলেন, “কাকদ্বীপ, সাগর, নামখানা ও পাথরপ্রতিমা এই চারটি ব্লকের প্রায় তিন হাজার ট্রলার মাছের মরসুম জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাস গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। ট্রলার সারানোর জন্য খোনে কোনও ‘ড্রাই ডক’ না থাকায় মেরামতির জন্য অন্যত্র নিয়ে যেতে হয়। পরিকাঠামোর এই সব সমস্যা নিয়ে বহুবার মৎস্য দফতরের কাছে দরবার করা হয়েছে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।”
কাকদ্বীপ ও ফ্রেজারগঞ্জ মৎস্য বন্দরের বেহাল পরিকাঠামোর প্রসঙ্গে মৎস্য দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর (সামুদ্রিক) সন্দীপ কুমার বলেন, “ওই দুই বন্দরে সমস্যা রয়েছে। কাকদ্বীপ বন্দরের পলি সংস্কার নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শীঘ্রই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে” ফ্রেজারগঞ্জ মৎস্যবন্দরে অকেজো হয়ে যাওয়া ওয়্যারলেস টাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি জানান, দক্ষ কর্মী না থাকায় ওটি সারানো যায়নি। যন্ত্রটি সারানোর জন্য এডিজি উপকূল নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে কথা হয়েছে। |