দলমার দামাল ধরে ‘শাস্তি’, ‘না’ জানিয়ে দিল বন মন্ত্রক
লমা পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতিদের দৌরাত্ম্য রুখতে চারটি হাতি ধরার অনুমোদন চেয়েছিল রাজ্য বন দফতর। প্রাথমিক ভাবে সে প্রস্তাবে সবুজ সঙ্কেত দিলেও দেশের তাবড় প্রকৃতিপ্রেমী সংগঠনগুলির চাপে শেষ পযর্ন্ত হাতি-ধরার প্রশ্নে আপাতত দাঁড়ি টেনে দিল কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রক।
ভরা ভাদ্রে বৃষ্টি হোক না হোক, রাঢ় বাংলায় ঝাড়খন্ডের দলমা পাহাড় থেকে নেমে আসে হাতির পাল। তারপর, মাস পাঁচেক ধরে চলে দৌরাত্ম্য। প্রায় তিন দশক ধরে বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর কিংবা লাগোয়া বর্ধমানের অন্তত পাঁচটি মহকুমার মানুষ ‘দলমার দাঁতাল’দের এই চেনা দাপটেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন।
প্রায় শ’খানেক হাতির ক্রমান্বয়ে হানায় ওই জেলাগুলির কয়েক হাজার বিঘা জমির ফসল নষ্টের পাশাপাশি জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলির ঘরবাড়ি ভাঙচুর এমনকী প্রাণহানি, বাদ যায়না কিছুই। শস্য এবং প্রাণহানির ক্ষয়ক্ষতি বাবদ প্রতি বছরই কয়েক লক্ষ টাকা গুনতে হয় রাজ্য সরকারকে।
দলমার দামালদের রুখতে গত কয়েক বছর ধরে তাই বিবিধ পদ্ধতি নিয়ে ছিল রাজ্য বন দফতর। সফল হয়নি। বিদ্যুৎবাহী তারের বেড়া, হাতি তাড়ানোয় বিশেষ প্রশিক্ষিত ‘হুলা পার্টি’ নিয়োগ, কোনও পদ্ধতিতেই কিছু হয়নি। হস্তিযূথ কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে তাদের পরিচিত ‘করিডর’ ধরে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ নাগাদ দলমা-প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত তিন জেলার প্রায় আড়াইশো গ্রামে স্বস্তি ফেরে না।
দলের চারটি অল্পবয়সী (সাব-অ্যাডাল্ট) হাতিকে তাই ‘বন্দি’ করে ‘উচিত শাস্তি’ দেওয়ার প্রস্থাব দিয়েছিল বন দফতর। কী সেই শাস্তি? রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল অতনু রাহা জানান, চারটি হাতিকে বন্দি করে প্রশিক্ষণ দিয়ে কুনকি করতে চেয়েছিল বন দফতর। দলের কয়েক জন ধরা পড়ে গেলে, ভয় পেয়ে পরের বছর তারা আর এ পথে আসবে না। এমনই অনুমান ছিল বন দফতরের। প্রথমে সবুজ সঙ্কেত দিলেও কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রক এ দিন হাতি-ধরার সেই প্রস্তাবে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এমন প্রস্তাব অবশ্য নতুন নয়। বছর পাঁচেক আগেও হাতি-ধরার প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ বন দফতর। গ্রাহ্য হয়নি।
দেশের বেশ কয়েকটি প্রকৃতিপ্রেমী সংগঠন এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে, বন্যপ্রাণ আইনের ১১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, হাতি কেন, সিডিউল (১) গোত্রের কোনও বন্য প্রাণীকেই ‘বন্দি’ করা যাবে না। কোনও কারণে, জঙ্গলে ঘুরে ফিরে কিংবা শিকার করে খাবার সংগ্রহ করার ক্ষমতা হারালে তবেই সেই পশুকে ধরে খোলা এনক্লোজারে রাখা যাবে। কেরলের ‘এলিফ্যান্ট লাভার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর কর্তা ই এ ভেঙ্কটচলম বলেন, “বুনো হাতি ধরে কুনকি করার প্রশিক্ষণ-পদ্ধতিও যথেষ্ট ‘নিষ্ঠুর’। সরকারের ক্ষমতা আছে বলেই এ ভাবে বুনো হাতি ধরা যায় নাকি!”
এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বনমন্ত্রকের ‘প্রোজেক্ট এলিফ্যান্ট’ কর্তৃপক্ষের। ওই সংস্থার ডিরেক্টর আর এন প্রসাদ বলছেন, “বুনো হাতিকে বিশেষ কিছু কারণ ছাড়া ধরা যায় না।” তিনি জানান, দলমার হাতিরা তাদের করিডর বরাবর যাতায়াত করে। সে পথে বাধা দেওয়ার প্রশ্নই নেই। দলমার দামালদের দৌরাত্ম্যই আপাতত তাই রাঢ়বঙ্গের ৩ জেলার ভবিতব্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.