ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি
রান্নাঘর ‘চুরি’, খোয়া যাওয়ার মুখে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা
রিকাঠামোয় নানা ত্রুটি ছিল। এমনকী, রোগীদের প্রতি দিনের খাবার রান্না করার রান্নাঘরটিও ‘চুরি’ করে নিয়েছিল অন্য হাসপাতাল। তা সত্ত্বেও আড়াই বছর আগে কেন্দ্রের থেকে ‘ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’র জন্য পূর্ব ভারতে মানসিক চিকিৎসার ‘উৎকর্ষ কেন্দ্র’ বা ‘সেন্টার অফ এক্সেলেন্স’-এর শিরোপা আদায় করে ফেলেছিল রাজ্যের সেই সময়ের বাম সরকার। ৩০ কোটি টাকাও পেয়েছিল। তা-ও রান্নাঘর তৈরি হয়নি! এখন তার মাসুল দিতে হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরকে।
নজিরবিহীন ভাবে দু-তিন কিলোমিটার দূর থেকে রোগীদের খাবার আনতে গিয়ে সেই খাবার হামেশাই ধুলোবালি-কাদা-নোংরা মিশে দূষিত হওয়ার অভিযোগ উঠছিল। এ বার স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বাস্থ্য দফতরকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, হয় অবিলম্বে রোগীদের জন্য হাসপাতালেই রান্নাঘর চালু করতে হবে, না হলে ‘ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’-র ‘সেন্টার অফ এক্সেলেন্স’-এর শিরোপা বাতিল করা হবে। সেই সঙ্গে ফেরত নিয়ে নেওয়া হবে তাদের দেওয়া টাকাও।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরে লেখা চিঠিতে ‘ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’র অধিকর্তা জয়ন্ত বসু জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে হাসপাতালের কাজ দেখতে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তা ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরা। তাঁর কথায়, “রান্নাঘর নেই শুনে তাঁরা হতবাক হয়ে যান। আমরাও স্বীকার করি, হাজরার চিত্তরঞ্জন সেবাসদন থেকে রান্না করিয়ে ভ্যানরিকশায় চাপিয়ে আনতে হয়। ফলে খাবারের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে কোনও নজরদারি করতে পারি না। ঝাঁকুনিতে খাবারের পাত্রের ঢাকা সরে গিয়ে নোংরা জল মিশে যাচ্ছে, কাদা ছিটকে আসছে, পোকা বসছে। সেই খাবারই অসুস্থ মানুষগুলিকে দিতে হচ্ছে। রাঁধুনি ও পরিবেশনকারীদের হাতে গ্লাভ্স, মাথায় প্লাস্টিকের টুপি থাকছে না। এখানকার রোগীরা মানসিক ভাবে অসুস্থ বলে প্রতিবাদ করতে পারছেন না। সেই ফায়দা নিয়ে বিষয়টি এত দিন ধামাচাপা ছিল।”
এখন প্রশ্ন উঠেছে, নিজস্ব রান্নাঘরের ন্যূনতম পরিষেবা না-থাকা সত্ত্বেও এই হাসপাতাল উৎকর্ষ কেন্দ্রের সম্মান পেল কী করে? সেখানেও কি কনে সাজানোর মতো কোনও রান্নাঘর সাজিয়ে দেখানো হয়েছিল? তৎকালীন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সৌমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি, “আমরা কিছুই লুকোইনি। কেন্দ্রের কর্তারা যদি সব দেখেও ছাড়পত্র দেন, তা হলে কী করা যাবে? এখন ওঁরা অন্য সুরে কথা বলছেন।” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছেন, “শুধু রান্নাঘরই নয়, এই কেন্দ্রে ছাত্র ও নার্সদের হস্টেলও নেই। ১৪০টি শয্যা করার কথা ছিল, সে জায়গায় মাত্র ৩৬টি শয্যা রয়েছে। মেয়েদের ওয়ার্ড দখল করে এসএসকেএমের আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাঙ্ক হওয়ায় এখন অস্থায়ী শয্যায় মহিলা রোগীদের রাখতে হয়েছে। একাধিক বিভাগে প্রোফেসার নেই। তবে মূল সমস্যা রান্নাঘরই।”
কী করে চুরি হল আস্ত একটা রান্নাঘর? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০০৬ সালে কাউকে কিছু না বলে বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি ঘরটি দখল করে স্পেশ্যাল ক্লিনিক চালু করে। ওই ঘরে মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার, এপিলেপ্সি, নিউরো মাসকুলার পেন, পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি, স্ট্রোকের ক্লিনিক চলে।
কিন্তু কেন অন্য হাসপাতালের রান্নাঘর নিয়ে নিল বিআইএন? সেখানকার ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা অসিত সেনাপতি বলেন, “যখন রান্নাঘর নেওয়া হয়েছিল তখন ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি মৃতপ্রায় ছিল। কেউ ভর্তি হত না। আর আমাদের স্পেশ্যাল ক্লিনিকের জন্য জায়গা দরকার ছিল। এখন ছাড়তে বললেই তো ছাড়া যায় না। আমাদের ক্লিনিক কোথায় হবে? অনেকে এর উপরে নির্ভরশীল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.