ডেঙ্গি-পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিতর্কে পুরকর্তারা
ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে এ বার বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের চিকিৎসা-বিধিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে বসল কলকাতা পুরসভা। পুরসভার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বিধি না-মেনেই বিভিন্ন ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতাল ডেঙ্গি নির্ণয়ের পরীক্ষা করছে। তাই ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা এত বেশি বলে মনে হচ্ছে। যারা এই ভাবে বিধি না-মেনে পরীক্ষা করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুরসভা।
পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ শুক্রবার বলেন, “আমরা কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি, জ্বরের দু’দিনের মাথায় ‘অ্যান্টিজেন’ পরীক্ষা করে ডেঙ্গি ভাইরাস পজিটিভ বলে দেখানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নিয়মে জ্বরের পাঁচ দিনের মাথায় ‘অ্যান্টিবডি’ পরীক্ষা করতে হয়। সেই রিপোর্ট পজিটিভ হলে তবেই ডেঙ্গি বলা যাবে।” অর্থাৎ, দু’দিনের ওই পরীক্ষায় যে সব ডেঙ্গি ধরা পড়েছে, সেগুলিকে আমল দিতে নারাজ পুরসভা।
কিন্তু পুরসভার এমন দাবি নিয়ে শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা আবার অন্য রকম বলছেন। সুব্রত মৈত্র বলেছেন, “ডেঙ্গি তো খারাপ অসুখ নয় যে, সেটা নিয়ে অযথা এমন বাড়াবাড়ি করা হবে। আগে থেকে সতর্ক হলে ক্ষতি কী? দু’তিন দিন জ্বর থাকলেই অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া দরকার। ডেঙ্গির কোনও আলাদা চিকিৎসা নেই, কিন্তু ডেঙ্গি হয়েছে জানতে পারলে নজরদারিটা চালানো যায়।” পরজীবী-বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীও সুব্রতবাবুর সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, “ভাইরাস রক্তে ঢুকলেই রক্তে অ্যান্টিজেন পাওয়া যায়। আগেই বোঝা যায়, শরীরে ডেঙ্গির ভাইরাসটা ঢুকেছে কি না। এতে বরং রোগ কতটা ছড়াচ্ছে, তার আগাম খোঁজ পাওয়া যায়। সাবধানতা অবলম্বন করা যায়।”
ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
অতীনবাবুর আরও অভিযোগ, ‘এলাইজা কিট’ দিয়ে রক্তের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাতে হয়। কিন্তু অনেক বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম ও ক্লিনিক অন্য কিট দিয়ে রক্তের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করছে। যা নিয়মবিরুদ্ধ। তবে, পুরসভার এ হেন যুক্তিও মানতে নারাজ চিকিৎসকেরা। একটি বেসরকারি ক্লিনিকের এক চিকিৎসকের বক্তব্য, এলাইজা এবং ক্রোমাটোগ্রাফি পরীক্ষায় রক্তের অ্যান্টিজেন ধরা পড়ে। ক্রোমাটোগ্রাফি পরীক্ষা সর্বজনস্বীকৃত। এলাইজা পরীক্ষায় অনেক সময়ে অ্যান্টিজেন ধরা পড়ে না। কিন্তু তা ক্রোমাটোগ্রাফি পদ্ধতিতে ধরা পড়ে। ওই চিকিৎসক বলেন, “যদি ক্রোমাটোগ্রাফি পদ্ধতি অস্বীকৃত হয়, তা হলে পুরসভা শহরের সব ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালে হানা দিয়ে ওই যন্ত্র বাজেয়াপ্ত করুক। সমস্যা মিটে যাবে।”
যাঁরা পরজীবী নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁরা মনে করছেন, কোনও যন্ত্র বা পদ্ধতি যদি শরীরে কোনও পরজীবীর উপস্থিতি আগে ধরতে পারে, সেই যন্ত্র বা পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা তত বেশি। এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পুরসভা বা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের উচিত বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া কিংবা বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধ দেখে নেওয়া। রক্তে ডেঙ্গি বা চিকুনগুনিয়ার মতো রোগের জীবাণুর উপস্থিতি তাড়াতাড়ি ধরা গেলে রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অনেক বেশি সময় পাওয়া যায়।

রাজ্যে ডেঙ্গি-চিত্র
• ২০১১ সালে ৫১০ জন আক্রান্ত
• ২০১২ সালে অগস্ট পর্যন্ত ১৩০ জন(এর মধ্যে ৮০টি ডেঙ্গি বলে অনুমান)
জেলা গত বছর জুলাই পর্যন্ত এ বছর এখনও পর্যন্ত
কলকাতা আক্রান্ত ৭৪ ১১৪ (৬৪ জনের নিশ্চিত ডেঙ্গি, বাকিদের ডেঙ্গি বলে অনুমান)
উত্তর ২৪ পরগনা আক্রান্ত ১০ ১৪ জনের নিশ্চিত ডেঙ্গি
• সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত ডেঙ্গির রোগী ১৩০ জন
• বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে মোট নিশ্চিত রোগী ৯ জন
• আইডি হাসপাতালে এখন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ৯ জন

শুধু কলকাতা পুরসভাই নয়, বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গি নির্ণয় নিয়ে সন্দিহান বিধাননগর পুর-কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও। তাদের বক্তব্য, ডেঙ্গি নির্ণয়ের পরীক্ষায় যে সব তথ্যের প্রয়োজন, বেসরকারি হাসপাতাল তা দিচ্ছে না। কলকাতা পুরসভা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধিকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি করেছে। ডেঙ্গি নির্ণয়ে একটি চিকিৎসা-বিধি তৈরি করবে তারা। সেই নির্দেশিকা পাঠানো হবে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলিতে। নির্দেশিকা মেনে রোগ নির্ণয় হচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।
বিধাননগরে সরকারি মতে ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা ১১। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোনও ব্যক্তিকেই পুরসভা বা স্বাস্থ্য দফতর ডেঙ্গি রোগী বলে চিহ্নিত করেনি। কেন? স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “ডেঙ্গি নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষায় যে বিস্তারিত তথ্য প্রয়োজন, বেসরকারি হাসপাতালগুলি তা দিচ্ছে না। তাই তাঁদের ডেঙ্গি রোগী বলে স্বীকার করা যাবে না।” কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল ডেঙ্গি নির্ণয়ে বিধি ভাঙলে সে ক্ষেত্রে পুরসভা বা স্বাস্থ্য দফতর ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “বেসরকারি হাসপাতাল যে তথ্য দিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যে সব তথ্য চেয়েছি, তা না পেলে প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.