ফুটবল প্রতিযোগিতা নয়, যেন এক উৎসব!
বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের ভিড়, মাঠ ঘিরে আলো, অস্থায়ী গ্যালারি, হরেক খাবারের দোকান, আরও কত কী!
খেলছে কারা?
ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান নয়। বিভিন্ন জেলার দল। কিন্তু সেই সব দলের খেলা দেখতে প্রতি বছর জন্মাষ্টমীতে সরগরম হয়ে ওঠে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার প্রত্যন্ত গ্রাম খয়রামারি। উৎসবে মেতে ওঠে গোটা গ্রাম। কর্মসূত্রে যাঁরা অন্যত্র থাকেন, ছুটি নিয়ে চলে আসেন তাঁরাও।
খয়রামারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ওই প্রতিযোগিতায় এ বার ৮টি দল যোগ দিয়েছিল। খয়রামারি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে দিনরাতের নক-আউট এই প্রতিযোগিতার ফাইনালে নদিয়ার ধানতলার একটি দল বাগদার একটি দলকে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় হন বাগদার দলটির কিশোর মণ্ডল। চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্স দলকে নগদ অর্থ ও ট্রফি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। গ্রামে একটিই দুর্গাপুজো হয়। বেশিরভাগ গ্রামবাসীই দিনমজুর বা খেতমজুর। কাজের খোঁজে অনেক গ্রামবাসী ভিন্ রাজ্যেও চলে যান। দুর্গাপুজোকে বাদ দিলে এই খেলার দিনটির জন্যই সার বছর অপেক্ষা করে থাকেন গ্রামবাসীরা। প্রতিযোগিতার দিন কয়েক আগে থেকে গ্রামে সাজো সাজো রব পড়ে যায়। প্রতিযোগিতার সকালে গ্রামবাসীরা দ্রুত ঘরের কাজ সামলে হাজির হয়ে যান মাঠে। চলে আসেন মহিলারাও।
কেন ফুটবল ঘিরে এই উন্মাদনা?
উদ্যোক্তা সংস্থার সম্পাদক শঙ্কর বিশ্বাস বলেন, “প্রত্যন্ত এই গ্রামে মানুষের বিনোদনের কোনও ব্যবস্থা নেই। তাই এই প্রতিযোগিতাকে উৎসব বলেই মনে করেন গ্রামবাসীরা।”
বৃহস্পতিবার প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন রানাঘাট পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক সমীর পোদ্দার। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সিন্দ্রাণী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কালীপদ মণ্ডল, বাগদার বিডিও খোকনচন্দ্র বালা, ওসি গোপাল বিশ্বাস প্রমুখ। বনগাঁ মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী সভাপতি সুব্রত বক্সি বলেন, “এখানে প্রথমবার এসে আমি অভিভূত। ফুটবলকে ঘিরে এত আবেগ দেখা যায় না।”
খেলার দিন বাগদার হেলেঞ্চা থেকে প্রতি বছর খয়রামারিতে চলে আসেন জয়ন্ত বিশ্বাস। তিনি বলেন, “খেলার জন্য পরিবেশটা এত পাল্টে যায়, দারুণ লাগে। তাই প্রতি বছর আসি। গ্রামেরই কোনও বাড়িতে খেয়ে নিই।” আর এক দর্শক বলেন, “শুধু খেলা তো নয়, আসি উৎসবে সামিল হতে।” |