|
|
|
|
|
|
নানা আয়োজন |
শতবর্ষে পক্ষীপ্রেমী |
অশোক সেনগুপ্ত |
ময়না হাঁটছে, নড়ছে, ডিগবাজি খাচ্ছে অবাক হয়ে খাঁচার পাখিটিকে নিস্পলক দৃষ্টিতে দেখত ছোট্ট খুচু। ১০ বছরের জন্মদিনে চিকিৎসক সুন্দরীমোহন দাসের স্ত্রী হেমাঙ্গিনী দেবীর কাছ থেকে পাখিটা উপহার পেয়েছিল খুচু। এর পর থেকে পাখিই হয়ে উঠল ছেলেটির ধ্যানজ্ঞান।
মা বসন্তবালাও পশুপাখি পুষতেন। বাবা গগনচন্দ্র হোম ছিলেন ময়মনসিংহের সিটি স্কুলের শিক্ষক, সেই সঙ্গে ‘সঞ্জীবনী’-র সহ সম্পাদক। দাদা অমল ছিলেন রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য। সাংবাদিকতা, ফুটবল-ক্রিকেট, সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি সরকারের উঁচু পদে আসীন ছিলেন তিনি। বেশ কিছুকাল সম্পাদনা করেছেন ‘ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল গেজেট’। এ হেন পরিবারে অজয় হোমের জন্ম ১৯১৩-র ২ মে।
|
|
ব্রাহ্ম স্কুলে পড়া শেষ করে অজয় ঠিক করলেন, স্পোর্টিং ইউনিয়নে ক্রিকেট খেলবেন। সে কালের দুই শ্রদ্ধেয় ক্রিকেটার কার্তিক বসু ও গণেশ বসুর কাছে ক্রিকেটের তালিম নিয়ে উইকেটরক্ষক হিসেবে নাম করলেন। ক্রিকেট নিয়ে ধারাবাহিক লিখেছেন ‘সন্দেশ’-এ। পাশাপাশি চলতে লাগল পাখি নিয়ে গবেষণা, বিদ্যাসাগর কলেজে পড়াশোনা। গোয়ার এক দক্ষ পাচকের কাছে নিষ্ঠার সঙ্গে রান্না শিখে বহু জনের রসনার তৃপ্তি দেন। হাতের লেখা ছিল চোখে পড়ার মতো সুন্দর। ব্রিজ খেলতে গিয়ে তৈরি করলেন ‘হোম’স থ্রি-স্টেজ ফর্মুলা’। কৃষ্ণচন্দ্র দে-র ভাইপো প্রভাস দে-র সঙ্গে তৈরি করেন ‘একতারা’ নামে সঙ্গীতায়তন। বেতারে গান করেছেন নানা সময়ে। বিজ্ঞানের স্নাতক, দেশ-বিদেশের সাহিত্য পড়তেন গোগ্রাসে। বেশ ক’টি ভাষা রপ্ত করেছিলেন অজয়বাবু। দাদা অমল হোম বলতেন, “খুচুর ১৭টা পোর্টফোলিও। কোনটা রাখবে জানি না।”
কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের (অধুনা বিধান সরণি) বাড়ির দোতলা থেকে তিনতলার সিঁড়ি পর্যন্ত ছিল হরেক মাপের গোটা তিরিশ খাঁচা। পাখির উপর বিভিন্ন দেশে প্রকাশিত ডাকটিকিট সংগ্রহ করতেন। ১৯৬৫ ও ১৯৬৯-এ সভাপতিত্ব করেন সারা বাংলা সাহিত্যমেলা। প্রকাশ করেন সিনেমাপত্রিকা ‘ছায়াপথ’। দীর্ঘকাল সম্পাদনা করেন ‘প্রকৃতি জ্ঞান’ পত্রিকা। প্রতিষ্ঠা করেন ‘প্রকৃতি সংসদ’। অমল-অজয় দুই ভাই ছোট ছেলেমেয়েদের নানা জায়গায় নিয়ে যেতেন পশুপাখি চেনাতে।
|
|
বাঘের সঙ্গে অজয় হোম |
রবীন্দ্রতথ্যে সমৃদ্ধ ছিলেন বলে পুলিনবিহারী সেনের প্রকাশিত বইগুলোর প্রুফ দেখতেন অজয় হোম। অসাধারণ স্মৃতিশক্তি ছিল তাঁর। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর মূল্যবান বিভিন্ন প্রকাশনা তাঁরই তত্ত্বাবধানে। ঘনিষ্ঠতা ছিল কালিদাস নাগ, প্রেমেন্দ্র মিত্র, লীলা মজুমদারের মতো দিকপালদের সঙ্গে। ১৯৯২-এর ৩০ অক্টোবর মারা যান অজয় হোম।
বর্তমান প্রজন্মের কাছে মানুষটিকে পরিচিত করতে একমাত্র কন্যা সুতপা রায়চৌধুরী, গৌতম নিয়োগী, ‘প্রকৃতি সংসদ’-এর সম্পাদক কুশল মুখোপাধ্যায় প্রমুখ তৈরি করেছেন ‘অজয় হোম শতবর্ষ উদ্যাপন কমিটি’। এতে সামিল হয়েছেন অমল হোমের দুই পুত্রও।
কী ভাবে পালন করা হবে এ হেন কীর্তিমান যশস্বীর শতবর্ষ? রঙিন ছবি-সহকারে পুনঃপ্রকাশিত হবে ‘বাংলার পাখি’ ও ‘চেনা অচেনা পাখি’। অভিজ্ঞদের নিয়ে হবে আলোচনাচক্র। সুতপা রায়চৌধুরী জানালেন, বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত অজয়বাবুর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লেখা সংগ্রহ করে সেগুলো প্রকাশের ভাবনাও রয়েছে। চেষ্টা চলছে চিড়িয়াখানায় তাঁর বাঘের সঙ্গে খেলা, শিম্পাঞ্জিকে দুধ খাইয়ে মুখ মুছিয়ে দেওয়ার মতো মজাদার হারিয়ে যাওয়া
ছবিগুলো উদ্ধারেরও। |
|
|
|
|
|